আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আগামী ৫ নভেম্বর ভোট দেবেন দেশটির ভোটাররা। শুরুর দিকে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা ছিল ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের।
তবে গত জুলাইয়ে নির্বাচনী লড়াই থেকে সরে গিয়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে সমর্থন দেন বাইডেন। সর্বশেষ গত সপ্তাহে মুখোমুখি বিতর্কে ট্রাম্পকে কার্যত ধরাশায়ী করেন কমলা।
তাঁদের দুজনের মধ্যে কে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন, তা নিয়ে বিভিন্ন সংস্থা জনমত জরিপ চালিয়েছে। পেনসিলভানিয়ায় গত ১০ সেপ্টেম্বর এবিসি আয়োজিত প্রেসিডেনশিয়াল বিতর্কটি সরাসরি টিভিতে দেখেছে প্রায় পৌনে সাত কোটি মানুষ।
এ বিষয়ে রয়টার্স/ইপসোস এক হাজার ৪০০ জন নিবন্ধিত ভোটারের ওপর জরিপ চালিয়েছে। তাঁদের ৫৩ শতাংশ বলেছেন, বিতর্কে কমলা জিতেছেন, মাত্র ২৪ শতাংশের মতে ট্রাম্প জিতেছেন।
জরিপে আরো দেখা গেছে, জাতীয় পর্যায়ে প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাম্পের চেয়ে ৫ পয়েন্ট এগিয়ে আছেন কমলা। কমলার প্রতি ৪৭ শতাংশ এবং ট্রাম্পের প্রতি ৪২ শতাংশ মানুষের সমর্থন রয়েছে।
সরাসরি বিতর্কটি দেখা এক হাজার ৪০০ জন প্রাপ্তবয়স্ক মার্কিন নাগরিকের ওপর জরিপ চালিয়েছে ইউগভ। তাদের ৫৫ শতাংশের মতে, কমলা জয়ী হয়েছেন।
মাত্র ২৫ শতাংশের সমর্থন রয়েছে ট্রাম্পের পক্ষে। যদিও ইউগভের জরিপে জাতীয় পর্যায়ে সমর্থনের ক্ষেত্রে হেরফের হতে দেখা যায়নি। আগের মতোই কমলার পক্ষে ৪৬ শতাংশ এবং ট্রাম্পের পক্ষে ৪৫ শতাংশ ভোটারের সমর্থন রয়েছে।
এদিকে তিন হাজার ৩০০ জন ভোটারের ওপর চালানো মর্নিং কনসাল্টের জরিপ বলছে, ৫০ শতাংশ ভোটার বলছেন, কমলা জয়ী হয়েছেন এবং ট্রাম্পকে জয়ী মনে করে ৪৫ শতাংশ ভোটার। প্রতিষ্ঠানটির জরিপ অনুযায়ী, জাতীয় পর্যায়ে ট্রাম্পের প্রতি ৪৬ শতাংশ জনসমর্থন ছিল, যা বিতর্কের পর মাত্র ১ শতাংশ কমেছে।
এসব তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, যাঁরা সরাসরি টিভিতে বিতর্ক দেখেছেন, তাঁদের বেশির ভাগের মতে কমলা জয়ী হয়েছেন। বিতর্কে ভালো করা সত্ত্বেও জাতীয় পর্যায়ে জনসমর্থন আদায়ের ক্ষেত্রে খুব বেশি এগোতে পারেননি কমলা। এর কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলছেন, বেশির ভাগ আমেরিকান এরই মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন, তাঁরা কাকে সমর্থন দেবেন।
জাতীয় পর্যায়ে কে এগিয়ে
বাইডেন লড়াই থেকে সরে কমলাকে সমর্থন দেওয়ার পর বেশ কয়েকটি জরিপ বলেছে, কমলা খুব একটা ভালো করতে পারবেন না। তবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর পর ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বিতা আরো তীব্র হয়েছে। বিভিন্ন জরিপ অনুযায়ী, বর্তমানে জাতীয় পর্যায়ে ট্রাম্পের চেয়ে সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে আছেন কমলা।
একজন প্রার্থী দেশজুড়ে কতটা জনপ্রিয়, তা নির্ধারণে এই জরিপ একটি ভালো মানদণ্ড। তবে এর মাধ্যমে নির্বাচনী ফলাফলের নির্ভুল পূর্বাভাস দেওয়া কার্যত অসম্ভব। কারণ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রে ইলেকটোরাল কলেজ সিস্টেম ব্যবহার হয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্রে। জনসংখ্যার অনুপাতে প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের নির্দিষ্ট সংখ্যক ইলেকটোরাল কলেজ ভোট থাকে। তাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে চাইলে ৫৩৮টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের মধ্যে অন্তত ২৭০টি ভোট পেতে হয় প্রার্থীকে।
ব্যাটলগ্রাউন্ড অঙ্গরাজ্যে কে জিতবে
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রে নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে সাতটি ব্যাটলগ্রাউন্ড অঙ্গরাজ্য। এই সাতটি রাজ্য হলো পেনসিলভানিয়া, মিশিগান, উইসকিনসন, আরিজোনা, জর্জিয়া, নেভাডা ও নর্থ ক্যারোলাইনা। এই সাত অঙ্গরাজ্যে পরিচালিত জনমত জরিপ অনুযায়ী, কাছাকাছি অবস্থানে আছেন কমলা ও ট্রাম্প। তাই এসব অঙ্গরাজ্যে কে এগিয়ে আছেন, তা জানা মুশকিল। এ ছাড়া জাতীয় পর্যায়ের চেয়ে অঙ্গরাজ্য পর্যায়ে কমসংখ্যক জনমত জরিপ হওয়ায় এ নিয়ে বিশ্লেষণ করার মতো পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত নেই।
সাম্প্রতিক জনমত জরিপ বলছে, বেশ কয়েকটি ব্যাটলগ্রাউন্ড অঙ্গরাজ্যে দুই প্রার্থীর ব্যবধান এক পয়েন্টেরও কম। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্য পেনসিলভানিয়াও আছে, এই অঙ্গরাজ্যে সবচেয়ে বেশি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট রয়েছে। তাই স্বভাবতই উভয় প্রার্থী এখানে জয় পেতে মরিয়া।
পেনসিলভানিয়া, মিশিগান ও উইসকনসিন বরাবরই ডেমোক্র্যাটদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। তবে ২০১৬ সালে এই প্রথার ইতি টেনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ট্রাম্প। যদিও ২০২০ সালে এসব অঙ্গরাজ্যে জিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন বাইডেন। চলতি বছর এসব অঙ্গরাজ্যে জিততে পারলে কমলার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথ অনেকটাই সুগম হবে।
নির্বাচনী লড়াই থেকে সরে যাওয়ার আগে সাতটি ব্যাটলগ্রাউন্ড অঙ্গরাজ্যে ট্রাম্পের চেয়ে ৫ পয়েন্ট পিছিয়ে ছিলেন বাইডেন। তবে কমলা প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মনোনীত হওয়ার পর ট্রাম্পের সঙ্গে সেই ব্যবধান ঘুচিয়ে ফেলেছেন।
ট্রাম্পের পক্ষে ২৫% তরুণ কৃষ্ণাঙ্গ
এনএএসিপির সাম্প্রতিক জরিপ বলছে, অপেক্ষাকৃত তরুণ কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের প্রতি চারজনের একজন ট্রাম্পকে সমর্থন দেবেন।
যদিও ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রতি অনুগত হিসেবেই পরিচিত কৃষ্ণাঙ্গরা। তবে বাইডেনের আমলে দলটির প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেন কৃষ্ণাঙ্গ ভোটাররা। ২০২০ সালে বাইডেনের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের। এবার নির্বাচনে জিততে এসব ভোটারের সমর্থন আদায়ের আশায় আছেন কমলা।
এনএএসিপির জরিপ অনুযায়ী, কমলাকে ভোট দেবেন ৬৩ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ, আর ট্রাম্পকে ভোট দেবেন মাত্র ১৩ শতাংশ। তবে ৫০ বছরের কম বয়সী ২৬ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ ট্রাম্পকে সমর্থন দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। তবে পঞ্চাশোর্ধ্ব ৭৭ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ ভোটার কমলাকে সমর্থন দেওয়ার কথা বলেছেন। এ ছাড়া ৬৭ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ নারী কমলাকে ভোট দেবেন, যা ট্রাম্পের ক্ষেত্রে মাত্র ৮ শতাংশ। সূত্র : বিবিসি, ইউএস নিউজ