আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কলকাতায় বসবাসকারী বাংলাদেশিদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার এখতিয়ার জেলাশাসকদের হাতে ফেরানোর দাবী তুলেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
খুব শিগগিরই নবান্ন এই মর্মে দাবিসনদ দিল্লিতে পাঠাবে বলে বুধবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে জানিয়েছেন মমতা। তবে মমতার এমন দাবীকে অনেকেই ভোটের রাজনীতি বলেই মনে করছেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ১৯৮৫-র আগে পর্যন্ত বাংলাদেশিদের ভারতীয় নাগরিকত্ব মঞ্জুর করতে পারতেন জেলাশাসকেরা। পরে সন্ত্রাসবাদের নাম করে কেন্দ্র তা কেড়ে নেয়। মমতার কথায়, ‘‘বাংলাদেশ থেকে আসা যে মানুষগুলো এ রাজ্যে পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে বাস করছেন, রেশন কার্ড, ভোটার কার্ড আছে, আমি মনে করি, তাঁরা ভারতের নাগরিকত্ব পেতেই পারেন।’’
এবং এমন সময়ে মুখ্যমন্ত্রীর মুখে দাবিটি শোনা গেল, যার দিন তিনেকের মধ্যে গৌড়ীয় মঠের অনুষ্ঠানে কলকাতায় পা রাখতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এর প্রেক্ষিতে বিরোধীরা বলছেন, নবান্নের দাবি নিছক প্রশাসনিক নয়, এতে অন্য উদ্দেশ্যও রয়েছে।
বিরোধীদের বক্তব্য: লোকসভা ভোটের আগে এই মোদী-ই কলকাতায় একাধিক প্রচারসভায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, বাংলাদেশি শরণার্থীদের ভারতীয় নাগরিকত্বদানের আইন সংশোধন করা হবে। যারা অত্যাচারিত হয়ে বা সর্বস্ব খুইয়ে বাংলাদেশ থেকে এসেছেন, তাদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দিতে আমরা বদ্ধপরিকর— বলেছিল মোদীর দল।
এমনকী মাসখানেক আগে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ অশোকনগরে দাঁড়িয়ে আক্ষেপ করে গিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট প্রক্রিয়া তার মন্ত্রক সেরে ফেললেও রাজ্যসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা না-থাকায় সংশোধিত আইন পাশ করা যাচ্ছে না।
আর এখানেই রাজনীতির গন্ধ পাচ্ছে বিরোধীরা, যার সঙ্গে সহমত মমতার প্রশাসনেরও একাংশ। এই মহলের পর্যবেক্ষণ, বিজেপির মোকাবিলা তো বটেই, মন্ত্রিসভায় দাবিটি তুলে তৃণমূলনেত্রী এক ঢিলে একাধিক পাখি মারলেন। ব্যাখ্যা হিসেবে রাজনীতির অঙ্কই ঘুরে-ফিরে আসছে নবান্নের একাংশের মুখে।
তাদের যুক্তি: পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ৬০টি বিধানসভা কেন্দ্রে সংখ্যালঘুরাই হার-জিত নির্ধারণ করেন। কেন্দ্রগুলির অধিকাংশ উত্তরবঙ্গে, যেখানে তৃণমূল গত লোকসভা ভোটে তুলনায় ভাল ফল করলেও দক্ষিণের মতো শক্তিশালী সংগঠন নেই। বরং কোচবিহার থেকে মালদহ, এমনকী মু্র্শিদাবাদেও বিরোধী
প্রভাব যথেষ্ট। সেই প্রভাবে চিড় ধরাতেই তৃণমূলনেত্রী নতুন দাবিতে সরব হয়েছেন বলে বিরোধী ও প্রশাসনের বড় অংশ মনে করছে।
বিরোধীরা বলছে, মমতার দাবি আদৌ মান্যতা পাবে কি না, কেন্দ্রই তা ঠিক করবে। ‘কিন্তু বিধানসভা ভোটের মুখে রাজ্যে বাম-কংগ্রেস জোট-জল্পনা যখন তুঙ্গে, তখন সংখ্যালঘুদের প্রতি সহমর্মিতার বার্তা দিতে মমতার এই পদক্ষেপ।’
তাদের ব্যাখ্যা: পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের নিজস্ব কিছু সংখ্যালঘু ভোট আছে। যার জোরে মালদহ-মু্র্শিদাবাদে তারা শক্তিশালী। অন্য দিকে ক্ষমতা হারানোর পরেও বামেদের সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক উপেক্ষা করার মতো নয়। ফলে জোট হলে বিরোধী-ঝুলিতে সংখ্যালঘু ভোট ভাল যাবে, মমতা এটা বিলক্ষণ আঁচ করতে পেরেছেন। পাশাপাশি এ রাজ্যে অনুপ্রবেশকারীর ক্রমবর্ধমান সংখ্যা প্রসঙ্গে পুলিশি রিপোর্ট উদ্ধৃত করে নবান্নের একাংশের বক্তব্য: বিজেপি সীমান্ত এলাকায় হিন্দুত্বের উস্কানি দিয়ে পালে হাওয়া টানতে চাইছে। তার পাল্টা তৃণমূলনেত্রী কৌশলী চালই চেলেছেন।
১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমএন