আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের তিন আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে আতঙ্কজনক হারে বাড়ছে আত্মহত্যা, স্বেচ্ছাবসরের মতো ঘটনা। দেশটির আধাসামরিক বাহিনী সেন্ট্রাল আর্মড পুলিশ ফোর্স (সিএপিএফ), ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ডস (এনএসজি) এবং আসাম রাইফেলসের (এআর) সদস্যদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে।
২০২০ সাল থেকে এ পর্যন্ত গত পাঁচ বছরে এই বাহিনীগুলোতে আত্মঘাতী হয়েছেন ৭৩০ জওয়ান। শনিবার (৭ ডিসেম্বর) দেশটির সংবাদমাধ্যম ডেকান হেরাল্ডে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এমনটি বলা হয়েছে।
নিজেকে শেষ করে দেয়ার পাশাপাশি বাড়ছে স্বেচ্ছা অবসর, চাকরি ছেড়ে দেয়া এবং ছুটি নিয়ে ফের আর কাজে যোগ না দেয়ার মতো প্রবণতাও। ভারতের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সেখানে বলা হয়েছে, সিএপিএফ, এনএসজি এবং এ আর সদস্যদের মধ্যে ২০২০ সালে ১৪৪ জন, ২০২১ সালে ১৫৭ জন, ২০২২ সালে ১৩৮ জন, ২০২৩ সালে ১৫৭ জন এবং ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ১৩৪ জনসহ মোট ৭৩০ সদস্য আত্মহত্যা করেছেন। এছাড়া এই সময়কালের মধ্যে স্বেচ্ছায় অবসরে যান ৪৭ হাজার ৮৯১ জন এবং চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন ৭ হাজার ৬৬৪ জন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আধাসামরিক বাহিনীগুলোতে আত্মহত্যা বেড়ে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধানে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। সেই টাস্কফোর্সের তদন্তে জানা গেছে, যারা আত্মঘাতী হয়েছেন তাদের ৮০ শতাংশই নিজেকে শেষ করে দিয়েছেন ছুটি নিয়ে বাড়ি থেকে ফিরে কাজে যোগ দেয়ার পরে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে আধাসামরিক বাহিনীর জওয়ানদের আত্মহত্যার জন্য কয়েকটি কারণকে দায়ী করা হয়েছে। সে কারণগুলো হলো- টানা ডিউটি, বিনিদ্র রাত কাটানো, পরিবারের কাছ থেকে দিনের পর দিন বাইরে থাকা, স্ত্রী বা পরিবারের কোনও সদস্যের মৃত্যুশোক, দাম্পত্য সম্পর্কের অবনতি অথবা বিবাহবিচ্ছেদ, আর্থিক সমস্যা এবং সন্তানদের শিক্ষার সুযোগের অভাব প্রভৃতি।
সোমবার রাজ্যসভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনটি জমা দেওয়া হয়েছে। এ সময় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রায় উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যদের আত্মহত্যা ও চাকরি ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতা রোধে ইতোমধ্যে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এসবের মধ্যে রয়েছে, পরিবারের সদস্যদের সময় দেয়ার জন্য ছুটির ব্যবস্থা করা, ছুটির শর্ত শিথিল করা, কর্মপরিবেশ উন্নত করা, মানসিক পরামর্শ প্রভৃতি।