আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ঐতিহ্যগতভাবে ভুটানের ভূখণ্ডের অংশ ডোকলাম, কিন্তু এই বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে বরাবরই উত্তেজনা বিরাজ করে চীন ও ভারতের মধ্যে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ডোকলাম মালভূমি অঞ্চলে চীনের উপস্থিতি দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে ভারতকে।
ডোকলামে গত আট বছরে অন্তত ২২টি গ্রাম ও বসতি স্থাপন করেছে চীন। বুধবার ভারতীয় দৈনিক হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। স্যাটেলাইটে ধারণ করা ভারত-ভুটান-চীন সীমান্ত লাগোয়া ডোকলামের কাছে ভুটানের ভূখণ্ডের স্যাটেলাইটে ধারণ করা ছবিতে এসব গ্রাম নির্মাণের তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
ডোকলামের কাছাকাছি ভুটানের পশ্চিমাঞ্চলীয় আটটি গ্রামের সবগুলোই কৌশলগত একটি উপত্যকায় অবস্থিত; যে উপত্যকার মালিকানা দাবি করে আসছে চীন। এই উপত্যকা থেকে ভারত সীমান্তের ওপর নজরদারি চালানো সহজ। গত ৮ বছরে এই আলাকায় ২ হাজারেরও বেশি আবাসিক বাড়ি তৈরি করেছে চীন। এছাড়া এসব গ্রামে চীনের সরকারি কর্মকর্তা, সীমান্ত পুলিশ এবং সামরিক কর্মীদেরও নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। ডোকলামে নির্মিত চীনা এসব গ্রাম স্বাভাবিকভাবেই দিল্লির উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো, ডোকলাম থেকে ভারতের শিলিগুড়ি করিডর বা ‘চিকেন্স নেকের’ দূরত্ব ১০০ কিলোমিটারেরও কম। ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় কয়েকটি রাজ্যকে দেশটির মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে এই চিকেন্স নেক। ফলে ডোকালাম অঞ্চলে চীনের এমন তৎপরতা ভারতের উত্তর পুর্বের রাজ্যগুলোর সার্বভৌমত্বকে হুমকিতে ফেলতে পারে।
তবে ডোকলামে চীনের উপস্থিতি নিয়ে তেমন অস্বস্তি নেই ভূটানের। গত কয়েক বছরে ভুটানের ভূখণ্ডে চীনা সৈন্যের উপস্থিতি ও বসতি স্থাপনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে ভুটান। এমনকি দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং গত বছর এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন ‘ভুটানে চীনা স্থাপনা নেই’। যদিও বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ডোকলাম ইস্যুতে ভুটানকে বেশ চাপে রেখেছে চীন। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডোকলামে চীনের ব্যাপারে ভুটান সরকার হস্তক্ষেপ না করলে ভারতের ভূখন্ডে প্রবেশ করতে তেমন বেগ পেতে হবে না চীনা সৈন্যদের।
২০১৭ সালে ডোকলামে চীনের অবকাঠামো ও সড়ক নির্মাণে বাধা দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারতীয় ও চীনা সৈন্যদের মাঝে ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল। দুই দেশের সৈন্যরা ওই এলাকায় টানা ৭৩ দিন মুখোমুখি অবস্থানে ছিলেন। শেষ পর্যন্ত দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে অচলাবস্থার অবসান হয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ডোকলাম নিয়ে চীনের এমন কর্মকান্ডের জেরে দুই দেশের সীমান্ত উত্তেজনা কোন দিকে আগায় সেটিই এখন দেখার বিষয়।