আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ডিসেম্বর মাস শেষ হতে এখনও দুদিন বাকি। কিন্তু বছরের শেষ মাসে এসে আকাশ হয়ে উঠেছে ভয়ঙ্কর। চলতি মাসে মাত্র ১৩ দিনেই বিশ্বের নানা প্রান্তে অন্তত ৮টি বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩টি। আর এসব দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৩৪ জন যাত্রী প্রাণ হারিয়েছেন।
রোববার (২৯ ডিসেম্বর) দক্ষিণ কোরিয়ার মুয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে জেজু এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেলের একটি বিমান।
এই দুর্ঘটনায় ১৭৯ জন যাত্রীর মৃত্যুর খবর জানিয়েছে দেশটির কর্মকর্তারা। বিমানটিতে ক্রুসহ মোট ১৮১ জন যাত্রী ছিলেন। এর মধ্যে দুইজন ক্রুকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।
এছাড়া রোববার আরও দুটি বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে। নরওয়ে থেকে নেদারল্যান্ডসের উদ্দেশে যাত্রা করে রয়্যাল ডাচ এয়ারলাইন্সের একটি যাত্রীবাহী বিমান। তবে উড্ডয়নের পরপরই কোনো কারণে এটি আবারও ওই বিমানবন্দরে ফিরে আসে এবং জরুরি অবতরণের চেষ্টা করে। এ সময় রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে বিমানটি।
বিমানটিতে ১৮২ জন যাত্রী ছিলেন। তবে তারা সবাই অক্ষত আছেন। দক্ষিণ কোরিয়া ও নরওয়ের পর কানাডায় একটি যাত্রীবাহী বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এয়ার কানাডার বিমানটি দেশটির হ্যালিফ্যাস্ক বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণের চেষ্টা করে। এ সময় প্রচণ্ড গতিতে পিছলে গিয়ে এতে আগুন ধরে যায়। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
এর আগে গত বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) দুর্ঘটনার মুখে পড়ে আজারবাইজান এয়ারলাইন্সের ইআরজে-১৯০ মডেলের একটি যাত্রীবাহী বিমান। এর গন্তব্য ছিল রাশিয়া। স্থানীয় সময় ভোর ৩টা ৫৫ মিনিটে আজারবাইজানের রাজধানী বাকু থেকে রাশিয়ার চেচনিয়া প্রদেশের গ্রজনির উদ্দেশে যাত্রা করে বিমানটি।
পথিমধ্যে কাজাখস্তানের আকতাউতে কাসপিয়ান সাগরের পূর্ব-উপকূলে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় বিমানের ৬৭ যাত্রীর মধ্যে ৩৮ জনের মৃত্যু হয়।
খবরে বলা হয়, ঘন কুয়াশার কারণে বিমানটির পথ ঘুরিয়ে দেয়া হয়েছিল। এরপর ঠিক হয়, এটি কাজাখস্তানের বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করবে। কিন্তু অবতরণের আগে বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারায়।
রুশ সংবাদমাধ্যমের দাবি, একঝাঁক পাখির সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারায়। তবে আজারবাইজান সরকার জানায়, রাশিয়া বিমানটিকে ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ভূপাতিত করেছে।
এই অভিযোগ সরসারি স্বীকার না করলেও এজন্য আজারি প্রেসিডেন্টে ইলহাম আলিয়েভের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
এর আগে গত ২২ ডিসেম্বর দক্ষিণ ব্রাজিলের পর্যটন শহর গ্রামাদোতে একটি ছোট বিমান বিধ্বস্ত হয়। দুর্ঘটনায় ১০ জন যাত্রীর সবার মৃত্যু হয়। বিমানটি প্রথমে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি বাড়ির চিমনিতে ধাক্কা মারে। এরপর আরও একটি বাড়ির দোতলায় গিয়ে দ্বিতীয়বার ধাক্কা খায়।
শেষমেশ বিমানটি একটি দোকানের ওপর হুড়মুড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তে আগুন ধরে যায়। একইদিন পাপুয়া নিউগিনিতে একটি বিমান ভেঙে পড়ে। তাতে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়। তবে ঠিক কি কারণে সেটি বিধ্বস্ত হয়, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
গত ১৮ ডিসেম্বর আর্জেন্টিনার সান ফার্নানদো বিমানবন্দরের কাছে গাছে ও প্রাচীরের দেয়ালে ধাক্কা খায় একটি বিমান। সঙ্গে সঙ্গে আগুন ধরে যায় বিমানটিতে। তাতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় বিমানের দুই পাইলটের।
১৭ ডিসেম্বর হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের হনুলুলু বিমানবন্দরের কাছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ভেঙে পড়ে একটি পণ্যবাহী বিমান। তবে ঠিক কি কারণে বিমান বিধ্বস্ত হয়, তা এখনও স্পষ্ট নয়। মনে করা হচ্ছে, পাইলটদের প্রশিক্ষণ চলার সময়ে বিমানটি ভেঙে পড়ে।
বিমানগুলো ভেঙে পড়ার নেপথ্যে কোথাও প্রতিকূল আবহাওয়া, কোথাও প্রযুক্তিগত ত্রুটিকে দায়ী করা হচ্ছে। তবে দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে ধন্দ থাকলেও সকলেই একটি বিষয়ে একমত যে, ভবিষ্যতে এই ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে আরও সুরক্ষাবিধি প্রণয়ন করা প্রয়োজন।