বুধবার, ০১ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৫:১৬:১৩

আমেরিকা নিয়ে মাস্কের ভবিষ্যদ্বাণীতে বিশ্ব জুড়ে আতঙ্ক

আমেরিকা নিয়ে মাস্কের ভবিষ্যদ্বাণীতে বিশ্ব জুড়ে আতঙ্ক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গলা পর্যন্ত ঋণে ডুবে আমেরিকা। যত সময় গড়াচ্ছে, ততই বাড়ছে ধার করা অর্থের পরিমাণ। পরিস্থিতি যা, তাতে ঠাটবাট বজায় রাখাই দায়। ফলে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে দুনিয়ার অন্যতম ধনকুবের তথা শিল্পপতি ইলন মাস্কের। এখনই ব্যবস্থা না নিলে আটলান্টিকের পারের ‘সুপার পাওয়ার’ রাষ্ট্রটি দেউলিয়া হতে পারে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন তিনি।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের একটি জনপ্রিয় পডকাস্ট শোয়ে গিয়ে দেশের আর্থিক বিপদের কথা খোলাখুলি ভাবে প্রকাশ করেন মাস্ক। সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে অবিলম্বে কড়া পদক্ষেপের আর্জি জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি, দেশের আমজনতাকে মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে লড়াই করার ভোকাল টনিকও দিয়েছেন বিশ্বের ধনীতম শিল্পপতি।

মাস্ক জানিয়েছেন, বর্তমানে আমেরিকার জাতীয় ধারের পরিমাণ রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের মোট ঋণের পরিমাণ বাড়তে বাড়তে ৩৬ লক্ষ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। এর মধ্যে চলতি বছরে ধারের পরিমাণ দু’লক্ষ কোটি ডলার বাড়িয়েছে আটলান্টিকের পারের ‘সুপার পাওয়ার’ দেশটি।

চলতি আর্থিক বছরে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আমেরিকার রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লক্ষ ৯২ হাজার কোটি ডলার। এর মধ্যে ১ লক্ষ ৯২ হাজার কোটি ডলার শুধুমাত্র ধারের সুদ মেটাতে খরচ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার।

তথ্য বলছে, মোট রাজস্বের প্রায় ২৩ শতাংশ এই খাতে ব্যয় করছে ওয়াশিংটন। গোদের উপর বিষফোড়ার মতো দ্বিতীয় বিপদ হল বিদেশি বিনিয়োগ। আর্থিক ঘাটতি মেটাতে গত কয়েক বছরে বেশ কয়েক বার বন্ড ইস্যু করেছে আমেরিকার ট্রেজ়ারি দফতর। 

সেই বন্ডের সিংহভাগই কিনেছেন কট্টর শত্রু দেশ চিনের লগ্নিকারীরা। গত কয়েক দশকে অস্বাভাবিক দ্রুততায় বেড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ঋণ নেওয়ার অঙ্ক। চলতি শতাব্দীর গোড়ায় আমেরিকার জাতীয় ঋণের পরিমাণ ছিল পাঁচ লক্ষ ৭০ হাজার কোটি ডলার। কিন্তু ২০২০ সালে সেই সংখ্যাই বেড়ে ২৩ লক্ষ ২০ হাজার কোটি ডলারে গিয়ে পৌঁছয়। পরবর্তী বছরগুলিতে জাতীয় ঋণের সূচক লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে।

২০২০ সালে দুনিয়া জুড়ে শুরু হয় কোভিড অতিমারি। এর ধাক্কায় মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় আমেরিকার অর্থনীতি। সেই জায়গা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে করোনা পরবর্তী সময়ে ঋণের উপর ঋণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এই সিদ্ধান্ত ওয়াশিংটনের বিপদ বাড়িয়েছে বলেই মনে করেন আর্থিক বিশ্লেষকেরা।

আমেরিকার কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক ‘ফেডারেল রিজার্ভ’ জানিয়েছে, কোভিড-পরবর্তী বছরগুলিতে মোট ১৬ লক্ষ কোটি ডলার ঋণ নেওয়া হয়েছে। এ বছরের নভেম্বরের ৩০ তারিখ থেকে শেষ ৩১৬ দিনে জাতীয় ধারের অঙ্ক প্রতি দিন বেড়েছে ৬৩০ কোটি ডলার। ফলে বর্তমানে এক জন গড় আমেরিকানের মাথার উপর ঝুলছে এক লক্ষ আট হাজার ডলারের ঋণ।

আতঙ্কের এখানেই শেষ নয়। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণ এখন দেশটির মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জিডিপির ১২৫ শতাংশে পৌঁছেছে। আগামী দিনে ঋণ ও জিডিপির অনুপাত ২০০ শতাংশে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে জাতীয় ধার ওয়াশিংটনের অর্থনীতির দ্বিগুণ আকার ধারণ করবে।

আমেরিকার ঋণ বৃদ্ধির দ্বিতীয় কারণ হিসাবে ইউক্রেন এবং তাইওয়ানের জন্য সামরিক খাতে বিপুল পরিমাণে ব্যয়ের কথা উল্লেখ করেছেন মাস্ক। এর জন্য বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে দুষেছেন তিনি। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ওয়াশিংটনের বিনা প্রয়োজনে জলের মতো ডলার খরচ করাকে নির্বুদ্ধিতা বলে স্পষ্ট করেছেন তিনি।

এ ছাড়া এই পরিস্থিতির জন্য ২০১৭ সালে পাশ হওয়া একটি আইনের উল্লেখ করেছেন মাস্ক। প্রথম বার প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ওই আইন তৈরি করেন ট্রাম্প। এতে আমজনতাকে স্বস্তি দিয়ে আয়করের পরিমাণ কমিয়েছিলেন তিনি। ফলে সরকারের রাজস্ব ঘাটতি লাগামছাড়া হয়েছে বলে পডকাস্টে স্পষ্ট করেন টেসলা-কর্তা।

আগামী বছরের জানুয়ারিতে শপথ নেবেন আমেরিকার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর্থিক বিশ্লেষকদের দাবি, কুর্সিতে বসার পর জাতীয় ঋণের মাত্রাছাড়া অঙ্ক কমানোই হবে তাঁর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ফলে তাঁর উচ্চাকাঙ্ক্ষী একাধিক নীতিতে পানি পড়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে।

বিশ্লেষকদের অনুমান, জাতীয় ঋণ কমাতে সরকারি খরচে লাগাম টানায় নজর দেবেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ইতিমধ্যেই ‘ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি’ নামের একটি নতুন মন্ত্রক তৈরির কথা ঘোষণা করেছেন তিনি। এর নেতৃত্বে ধনকুবের শিল্পপতি মাস্ক এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূত রিপাবলিকান নেতা বিবেক রামস্বামীকে রেখেছেন বর্ষীয়ান রিপাবলিকান নেতা।

সূত্রের খবর, নতুন এই দফতরের মাধ্যমে অযোগ্য সরকারি কর্মচারী এবং বিভাগগুলিকে চিহ্নিত করা হবে। এর পর প্রশাসন থেকে তাঁদের ছেঁটে ফেলার নির্দেশ দেবেন তিনি। মাস্ক জানিয়েছেন, এর মাধ্যমে কোটি কোটি ডলারের বাজে খরচ আটকানো যাবে। পাবলিক ব্রডকাস্টিং বাজেট হ্রাসেরও প্রস্তাব দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের এই ধনকুবের।

পডকাস্টে এরই রেশ টেনে আরও কয়েকটি পদক্ষেপের কথা বলেছেন মাস্ক। নির্বাচনী প্রচারে আমেরিকাকে আয়কর শূন্য করার কথা বলেছেন ট্রাম্প। টেসলা-কর্তা এর ঘোর বিরোধী। উল্টে কর বৃদ্ধির কথা শোনা গিয়েছে তাঁর গলায়।

পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক স্তরে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর কথা বলেছেন মাস্ক। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে উঠে আসছে চিনের নাম। তবে সবচেয়ে বড় কথা, প্রতিরক্ষা খাতে খরচ কমানোর কথা বলেছেন আমেরিকার এই ধনকুবের শিল্পপতি।

আয়করের ব্যাপারে ট্রাম্প কী সিদ্ধান্ত নেবেন তা স্পষ্ট নয়। তবে প্রতিরক্ষা খাতে খরচ কমানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, নেটো সৈন্যচুক্তির থেকে আমেরিকার নাম প্রত্যাহারের কথাও বলতে শোনা গিয়েছে তাকে। কুর্সিতে বসার আগে থেকেই এই শক্তিজোটের দেশগুলিকে প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বৃদ্ধির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রাস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি দেখে আমেরিকাবাসীদের সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে তিনটি পরামর্শ দিয়েছেন মাস্ক। রিয়েল এস্টেট এবং সোনায় লগ্নি করতে বলেছেন তিনি। এ ছাড়া যে সংস্থাগুলির পণ্যের মূল্য ভবিষ্যতে বাড়বে বলে মনে হচ্ছে, সেই কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করতে বলেছেন টেসলা-কর্তা।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে