মঙ্গলবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬, ১০:২৮:৪৭

যে শহরে জীবিত মানুষের চেয়ে মৃতের দাম বেশি

যে শহরে জীবিত মানুষের চেয়ে মৃতের দাম বেশি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সাধারণত মানুষ যতক্ষন জীবিত থাকে ততক্ষণই তার কদর থাকে। নিঃশ্বাস বন্ধ হলে তাকে বিদায় জানায় আত্মীয়-স্বজনরা। কিন্তু পৃথিবীতে এমন একটি শহর রয়েছে যেখানে জীবিত মানুষের চেয়ে মৃতদের দাম বেশি! অবাক খবর মনে হলেও এটাই বাস্তবতা।

ভিয়েতনামের প্রাচীন সাম্রাজ্যের রাজধানীর নিকটেই একটি ছোট্ট জেলে শহর হুয়েকে বলা হয় ‘ভুতুরে শহর’। যেখানে মৃত মানুষের জীবন জীবিতদের চাইতে বেশি মূল্যবান বলে বিবেচিত হয়।

ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত ভিয়েতনামের সাবেক সম্রাটদের দৃষ্টিনন্দন এই সমাধিগুলো পর্যটকদের দারুণ আকৃষ্ট করে।  হুয়ে শহরটি ১৮০২ সাল থেকে প্রায় ১৪০ বছর ধরে রাজধানী হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। তবে নিকটবর্তী আন বাং গ্রামের স্থানীয় জেলেরা সমাধির এই ঐতিহ্যকে একবিংশ শতাব্দীতেও ধরে রেখেছে।

স্থানীয় গোষ্ঠীর পরিবারগুলো তাদের মৃতদের সমাধীতে ব্যয় করেন কমপক্ষে ৫৫ লক্ষ টাকা যেখানে  ভিয়েতনামের বার্ষিক মাথাপিছু আয় ১ লক্ষ ৫৬,০০০ টাকা। যদিও ভিয়েতনাম একটি নাস্তিক সমর্থিত দেশ  এবং এর কারণ বর্তমানে দেশটির শাসকরা হচ্ছেন কমিউনিস্ট।

দেশটি কনফুসিয়াস এবং বুদ্ধের চিন্তা-চেতনা দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত এবং অনেক মানুষ আছেন যারা তাদের পূর্ব পুরুষদের পুজা করাকেই গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। কিন্তু আন বাং গ্রামে মৃতদের নিয়ে এই চর্চা নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।

অবসরে যাওয়া জেলে ড্যাং থিয়েন গর্বের সাথে বলেন, আমাদের সমাধিগুলো হচ্ছে অনন্য। পরে এএফপির প্রতিবেদককে তিনি তার পরিবারের ৪০০ বর্গ মিটারের বিশাল এক সমাধি ঘুরিয়ে দেখান।

তিনি বলেন, এটা এজন্য করা হয় যাতে সন্তানরা তাদের পূর্বপুরুষদেরকে যোগ্য সম্মান দেখাতে পারে। একটি সমাধির প্রতি ভালো যত্ন পরিবারের জন্য সৌভাগ্যও বয়ে আনে। এটি সবসময়ের জন্যই।

থিয়েনের পারিবারিক সমাধিটি ১৯৯৪ সালে প্রথম সংস্কারকৃত, যখন থেকে স্থানীয়রা শতাব্দী পুরোনো সমাধিগুলোতে অত্যধিক ব্যয় করা শুরু করে।

সুসজ্জিত গঠনের সমাধিগুলো ছয় মিটার লম্বা, স্তম্ভ গুলোতে ছোট আকৃতির বিভিন্ন রঙের ড্রাগন জড়ানো যা সাম্প্রতিক সংযোজন। কিছু নতুন সমাধি ২৫০ একর যায়গা জুড়ে করা হয়েছে। যার সামনে রয়েছে সাদা বালুকাময় সৈকত। এগুলোর উচ্চতা ১০ মিটার এবং নিখুঁতভাবে সুসজ্জিত।

হুয়ের নিকটবর্তী ১৮শ-১৯শ শতাব্দীর ভবনগুলো ইউনেস্কো নীতির আওতাভক্ত হলেও, আন বাংয়ের স্থানীরা তাদের ইচ্ছেমত ভাঙ্গাগড়ার সৃষ্টিশীল কাজ করতে পারে।

কিছু সমাধি আছে যেগুলো এখনো খালি। গ্রামবাসীরা সেগুলো তাদের মৃত্যুর আগেভাগেই তৈরি করে রেখেছে, তার মধ্যে ২০০৫ সালের একটি সমাধিও রয়েছে যা কিনা তার মালিকের জীবনযন্ত্রণা সমাপ্তির অপেক্ষায় রয়েছে।

স্থানীয় পুলিশ হোয়াং খাং বলেন, এই সমাধিগুলো গড়তে যে অর্থ প্রয়োজন তা মূলত সরবরাহ করেন গ্রামবাসীদের আত্মীয় স্বজনরা,  যারা বাইরের দেশগুলোতে বসবাস করে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে। তিনি বলেন, জীবনের ভালো সমাপ্তির আশায় তারা দেশের বাড়িতে অর্থ পাঠায় সমাধি, কবরস্থান এবং মন্দির গড়ার জন্য।

হুয়ে শহরটি অবস্থান ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময়কার কমিউনিস্ট সমর্থিত উত্তর ভিয়েতনাম এবং যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত দক্ষিণ ভিয়েতনামের সীমান্তে। দশক জুড়ে চলা এ যুদ্ধের সময় বোমা হামলায় শহরটি ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে