দীন ইসলাম : সৌদি এয়ারলাইন্সের যে কোনো বিমান ছিনতাই বা বোমা হামলার আশঙ্কা করছে সৌদি দূতাবাস। গত ২৪শে জানুয়ারি বাংলাদেশস্থ সৌদি দূতাবাস পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে লেখা এক নোট ভারবালে জানিয়েছে, সৌদি এয়ারলাইন্সের যে কোনো ফ্লাইট ছিনতাই বা বোমা হামলা চালানোর পরিকল্পনা তত্ত্বাবধান করছে ইরানের রেভুলেশনারি গার্ড। ওই পরিকল্পনা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এতে বিমান ছিনতাইয়ের পরিকল্পনার কিছু চিত্র, কারা কারা এ কর্মকাণ্ড ঘটাতে পারে তাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
সৌদি দূতাবাসের নোট ভারবালের ভিত্তিতে ৩১শে জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিবকে একটি চিঠি দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের পশ্চিম ও মধ্য এশিয়া বিভাগের সহকারী সচিব এবিএম সারওয়ার-ই-আলম সরকার স্বাক্ষরিত চিঠিতে সৌদি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটের যাত্রী ও তাদের লাগেজের ওপর কার্যকর তল্লাশি প্রক্রিয়া কঠোরভাবে অনুসরণ করার অনুরোধ করা হয়েছে।
চিঠি’র বিষয়বস্তুতে বলা হয়েছে, সৌদি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ছিনতাই বা বোমা হামলা পরিকল্পনা প্রসঙ্গে। এতে বলা হয়, ঢাকাস্থ সৌদি দূতাবাসের নোট ভারবাল নং ২১৮-৪০০ এ বলা হয়েছে, সম্ভাব্য একটি ছিনতাই/হামলা পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের পেছনে ১০ জনের একটি দল সক্রিয় রয়েছে। এদের মধ্যে ৬ জন তুরস্কের ভেতর দিয়ে ভিন্ন দুটি ফ্লাইটে পূর্ব এশিয়ার উদ্দেশে রওনা হয়েছে।
দূতাবাস সন্দেহ করছে ওই সন্ত্রাসী হামলা সম্ভবত মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া আর ফিলিপিন্সে সংঘটিত হতে পারে। এ বিষয়ের আলোকে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সৌদি এয়ারলাইন্স ফ্লাইটের যাত্রী ও তাদের লাগেজের ওপর কার্যকর তল্লাশি প্রক্রিয়া কঠোরভাবে অনুসরণ করার জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
এদিকে সৌদি দূতাবাসের নোট ভারবালে বলা হয়, বাংলাদেশস্থ সৌদি রাজকীয় দূতাবাস অবহিত করছে যে- সৌদি আরবের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তথ্য পেয়েছেন সৌদি এয়ারলাইন্সের যে কোনো ফ্লাইট ছিনতাই বা এতে বোমা হামলা চালানোর পরিকল্পনা তত্ত্বাবধান করছে ইরানের রেভুলেশনারি গার্ড।
ওই পরিকল্পনা চূড়ান্ত একটি পর্যায়ে (অ্যান অ্যাডভান্সড স্টেট) উপনীত হয়েছে। পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়ন করতে ১০ জনের একটি দল রয়েছে। এদের মধ্যে ৬ জন ইয়েমেনের নাগরিক যাদেরকে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এই ৬ জনের মধ্যে ৪ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এরা হলেন- ১৯৯০ সালে ইয়েমেনে জন্মগ্রহণকারী মুহাম্মদ ইব্রাহিম আল- মুয়াইওয়াদ, ইয়েমেনের মাআরিব জেলার আহমাদ আল আওয়াফ বাহবাহ, ইয়েমেনের মাআরিব জেলার আহমেদ বিন আব্দুল্লাহ আল জারমুজি ও ইসমাইল আহমেদ আল-জারমুজি। এদের মধ্যে প্র্রশিক্ষণ দলের এক সদস্যকে শনাক্ত করা হয়েছে। তার নাম আলি মাহের আলি (লেবাননের হিজবুল্লাহর একজন সদস্য)।
বিমান ছিনতাইয়ের তত্ত্বাবধান ও পরিকল্পনার দায়িত্ব নিয়েছে দুজন ইরাকি নাগরিক। এদের একজন হলো- হাসান আলি আল মুসাভি। নোট ভারবালে বলা হয়েছে, প্রাপ্ত তথ্য থেকে আরও ইঙ্গিত মেলে যে, পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব পাওয়া ৬ ব্যক্তি তুরস্ক দিয়ে দুটি ভিন্ন ফ্লাইটে করে পূর্ব এশিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছে। তথ্য থেকে বোধগম্য হয়, ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হতে পারে পূর্ব এশিয়ার কোনো একটি দেশে।
মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং ফিলিপিন্সে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব তথ্যের আলোকে সৌদি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটগুলোতে যাত্রী ও লাগেজের ওপর প্রযোজ্য তল্লাশি ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিতে মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হচ্ছে। রাজকীয় সৌদি দূতাবাস বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সরকারের সর্বোচ্চ বিবেচনার জন্য আবারও আহ্বান জানাচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গেল সপ্তাহের শেষ দিকে চিঠিটি হাতে পেয়েছে তারা। দুয়েক দিনের মধ্যে এ চিঠির ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম নেয়া হতে পারে। -এমজিমন
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএস