মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০২৫, ১১:১৪:০২

পদত্যাগপত্রে যা লিখেছেন টিউলিপ সিদ্দিক

পদত্যাগপত্রে যা লিখেছেন টিউলিপ সিদ্দিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পদত্যাগ করেছেন শেখ হাসিনার ভাগনি যুক্তরাজ্যের ট্রেজারি ও নগর বিষয়ক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক। দেশটির প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন তিনি। 

ওই পদত্যাগপত্রে টিউলিপ লিখেছেন, আমি কোনো দোষ করিনি। তবে আমি পদে থাকলে হয়তো সরকারের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হতে পারে। খবর এএফপির।

টিউলিপ সিদ্দিক প্রধানমন্ত্রী বরাবর দেওয়া তাঁর পদত্যাগপত্রে লিখেছেন—

প্রিয় প্রধানমন্ত্রী

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আমার প্রতি আপনি যে আস্থা প্রদর্শন করেছেন, তার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

মন্ত্রীদের মানদণ্ডবিষয়ক আপনার স্বাধীন উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনাসকে ধন্যবাদ জানাই, যিনি আমার স্বপ্রণোদিত আবেদন দ্রুত ও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করেছেন এবং আমার বর্তমান ও অতীত আর্থিক এবং বাসস্থানসংক্রান্ত তথ্য বিস্তারিতভাবে শেয়ার করার সুযোগ দিয়েছেন।

আপনি অবগত আছেন, আমার অনুরোধে বিষয়টি নিয়ে গভীর পর্যালোচনা করার পর, স্যার লরি নিশ্চিত করেছেন, আমি মন্ত্রিত্ববিধি ভঙ্গ করিনি। তিনি উল্লেখ করেছেন, আমার মালিকানাধীন বা বসবাসকৃত সম্পত্তি বা আমার কোনো সম্পদ বৈধ উপায় ছাড়া অন্য কোনো উৎস থেকে এসেছে, এমন কোনো প্রমাণ নেই।

আমার পারিবারিক সম্পর্ক সর্বজনবিদিত এবং যখন আমি মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হই, তখন আমি আমার সমস্ত সম্পর্ক এবং ব্যক্তিগত স্বার্থের তথ্য সরকারের কাছে জমা দিয়েছিলাম। কর্মকর্তাদের সঙ্গে ব্যাপক পরামর্শের পর আমাকে আমার স্বার্থপত্রে উল্লেখ করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল, আমার খালা বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশসংক্রান্ত বিষয় থেকে (আমার) বিরত থাকা উচিত, যাতে স্বার্থের সংঘাতের কোনো সন্দেহ না থাকে। আমি আপনাকে আশ্বস্ত করতে চাই, এসব বিষয়ে আমি সর্বদা সম্পূর্ণ স্বচ্ছ থেকেছি এবং কর্মকর্তাদের পরামর্শ অনুসারে কাজ করেছি।

তবে এটি স্পষ্ট যে অর্থনৈতিক সচিব হিসেবে আমার ভূমিকা সরকারি কাজের জন্য একটি বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে। আমার আনুগত্য সব সময় এই লেবার সরকার এবং তার জাতীয় পুনর্নবীকরণ ও রূপান্তরের কর্মসূচির প্রতি থাকবে। তাই আমি আমার মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

আপনার সরকারে কাজ করার সুযোগ দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাই। আমি পেছনে থেকে যেকোনোভাবে সরকারকে সমর্থন করতে থাকব।

শুভেচ্ছান্তে,

টিউলিপ সিদ্দিক এমপি

টিউলিপের বিরুদ্ধে ব্রিটেনে এবং বাংলাদেশে দুর্নীতিতে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে। একদিকে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তির কাছ থেকে বিনামূল্যে ফ্ল্যাট গ্রহণের অভিযোগে ব্রিটেনে তাকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে, অন্যদিকে রাশিয়ার অর্থায়নে নির্মিত বাংলাদেশের একমাত্র পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র রূপপুর পাওয়ার প্ল্যান্ট প্রকল্প থেকে অর্থ সরানোর অভিযোগে বাংলাদেশে তদন্ত শুরু হয়েছে তার বিরুদ্ধে।

লন্ডনে হাসিনা ঘনিষ্ঠের কাছ থেকে উপহার নেওয়া ছাড়াও; সাবেক এক বাংলাদেশি এমপির কাছ থেকে ২০১৯ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের দুটি টিকিট নিয়েছিলেন টিউলিপ। এছাড়া তার বিরুদ্ধে অন্যান্য আরও আর্থিক অসঙ্গতির অভিযোগ উঠেছে। 

এসবের মধ্যে দেশটির বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টি টিউলিপকে বরখাস্তের দাবি জানিয়েছিল। তারা বলছিল, টিউলিপের ওপর ব্রিটেনের দুর্নীতি প্রতিরোধের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারই নাম দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়েছে। এতে তিনি মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব পালনের নৈতিকতা হারিয়েছেন। 

এ ছাড়া বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস টিউলিপকে নিয়ে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো সত্য হলে তার ক্ষমা চাওয়া উচিত। 

টিউলিপ সিদ্দিকের দায়িত্ব ছিল যুক্তরাজ্যের অর্থবাজারের ভেতরের দুর্নীতি সামাল দেওয়া। অথচ তিনি নিজেই দুর্নীতিতে জড়িয়ে গেছেন, এমন অভিযোগ উঠেছে। কয়েকদিন বেশ চাপে থাকার পর এবার পদ ছাড়লেন তিনি। 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে