আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আনুষ্ঠানিকভাবে আজ সোমবার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বাংলাদেশ সময় রাত ১১টায় তার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হবে। শপথ নেওয়ার পর নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট সাধারণত কিছু নির্বাহী আদেশ জারি করেন।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প শপথের পর একশরও বেশি নির্বাহী আদেশ জারি করতে পারেন বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান। যারমাধ্যমে বড় কিছু সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন তিনি। সেগুলোর মধ্যে বেশ আলোচিতগুলো হলো—
গণহারে অভিবাসীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো
ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, দায়িত্ব নিয়েই যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে অভিবাসী সংক্রান্ত সবচেয়ে বড় অভিযান চালাবেন। এর অংশ হিসেবে ১ কোটি ১০ লাখ অবৈধ অভিবাসী ও অভিবাসন প্রত্যাশীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠাবেন তিনি। এছাড়া অপরাধ সংঘটিত করা আরও ৫ লাখ অভিবাসীকেও যুক্তরাষ্ট্র ছাড়তে হতে পারে।
ধারণা করা হচ্ছে আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য যে আইনি সুরক্ষা আছে সেটি তিনি খুব শিগগিরই বাতিল করে দেবেন। এছাড়া হাইতি ও সুদানের নাগরিকরা নিজ দেশে ফেরত না যাওয়ার ক্ষেত্রে যে সুবিধা পান সেটিও রহিত করবেন তিনি। এই সুবিধাটির মেয়াদ দ্রুত শেষ হতে যাচ্ছে।
অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে যদি কোনো অপরাধ সংঘঠিত করার রেকর্ড না থাকে তাহলে, তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে সহনশীলতা দেখাত যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ট্রাম্প এখন এটিও বাতিল করে দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি কোনো বাছবিচার করবেন না। অর্থাৎ সব অবৈধ অভিবাসীকে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা চালাবেন এই রিপাবলিকান।
জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল
আজ দায়িত্ব নিয়েই যুক্তরাষ্ট্রের ‘ঐতিহ্যগত’ জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব প্রথা বাতিল করে নির্বাহী আদেশ জারি করতে পারেন ট্রাম্প। এতে করে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক নয়— এমন বাবা-মার ঘরে যেসব সন্তান জন্ম নেবে তারা আর স্বয়ংক্রিয়ভাবে নাগরিকত্ব পাবে না। তবে এমন সিদ্ধান্ত নিলে দেশটির সংবিধানের ১৪তম সংশোধনী চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।
সীমান্ত জরুরি অবস্থা ঘোষণা
অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার পাশাপাশি ট্রাম্প সীমান্তে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণার পরিকল্পনা করছেন। গত অক্টোবরে এক জনসভায় তিনি জানান সীমান্তে ‘টাইটেল ৪২’ কার্যকর করবেন তিনি। যা জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা শুরু করবে। এরমাধ্যমে করোনার সময় যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তে সব ধরনের চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তবে এমন ঘোষণা শুধুমাত্র রোগ নিয়ন্ত্রণ দপ্তর দিতে পারবে। ট্রাম্প এটি ব্যবহার করেন কি না সেটি দেখার বিষয়।
শুল্ক বৃদ্ধি
ট্রাম্প দায়িত্ব নিয়ে প্রথমদিনই বিশ্ব কাঁপানো যে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন সেটি হলো শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণা। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন উত্তর আমেরিকার দুই দেশ কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন। এমনটি করলে ওই অঞ্চলের বাণিজ্যে নাটকীয় পরিবর্তন দেখা যেতে পারে। তবে ট্রাম্প সাম্প্রতিক সময়ে বলেছেন এ বিষয়টি নিয়ে তিনি আলোচনা করতে প্রস্তুত। কানাডা এবং মেক্সিকো উভয়ই জানিয়েছে, ট্রাম্প যদি এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে তারা পাল্টা ব্যবস্থা নেবে।
ক্যাপিটল হিলের দাঙ্গাকারীদের ক্ষমা
২০১৯ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয় পান জো বাইডেন। তবে কারচুপির অভিযোগ তুলে ২০২০ সালের ৬ জানুয়ারি ট্রাম্পের প্রত্যক্ষ উস্কানিতে বাইডেনের জয় ঘোষণা ঠেকাতে ক্যাপিটল হিলে হামলা চালায় তার সমর্থকরা। ওইদিন যারা দাঙ্গায় অংশ নিয়েছিলেন। তাদের ক্ষমার নির্বাহী আদেশ জারি করতে পারেন ট্রাম্প।
হাজার হাজার সরকারি কর্মচারীকে বহিষ্কার
ট্রাম্প নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারে দায়িত্বরত হাজার হাজার সরকারি কর্মচারীকে বহিষ্কার করতে পারেন। এসব জায়গায় নিজের পছন্দের মানুষদের জায়গা দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন তিনি। ট্রাম্প এসব সরকারি কর্মচারীদের ‘ডিপ স্টেট’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তার অভিযোগ, এই কর্মচারীদের কারণে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা তাদের কাজ সঠিকভাবে করতে পারে না। তবে তার এই নির্বাহী আদেশ আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান