আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মাস তিনেক ধরেই কড়া নজর নাবালিকা তরুণী। চোখে চোখে রাখা হচ্ছিল তাকে। বাবা-মা ছাড়া একা স্কুলে আসতে দেয়া হতো না। শেষ পর্যন্ত বাবার আস্থা অর্জন করে সেই নাবালিকা। স্কুলে যাওয়ার নামে নিজেরই বিয়ের কার্ড নিয়ে সটান হাজির হয় থানায়।
সোমবার দুপুরে নিজের বিয়ে রুখেছে ভারতের বোলপুরের সিঙ্গি পঞ্চায়েতের বড়ডিহা গ্রামের নবম শ্রেণির ছাত্রী আলোকলতা মাজি। থানায় নিজের বিয়ের কার্ড হাতে দেখে প্রথমে হতচকিতই হয়ে যান থানার পুলিশ সদস্যরা।
শেষমেশ খবর দেয়া হয় চাইল্ড লাইনে। বিয়ের আতঙ্কে বাড়িতেই ফিরতে চায়নি দুঃসাহসী মেয়ে। পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা তার। তাই বীরভূম চাইল্ড লাইন এবং চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির তত্ত্বাবধানে ঠাঁই হয়েছে হোমের নিরাপদ আশ্রয়ে। দিনের শেষে আলোকলতার কথা শুনে অনেকেরই মনে পড়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বড়ডিহার বাসিন্দা পেশায় কৃষক খোকন মাজির মেয়ে অলোকলতা স্থানীয় সিঙ্গি হাইস্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এক সপ্তাহ পরই তার বিয়ের পিঁড়িতে বসার কথা। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিক পড়ুয়া দাদার সঙ্গেই সমানে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চেয়েছিল আলোকলতা।
সে কথা বাড়িতেও জানিয়েছিল সে। এ বয়সে বিয়ে না দেয়ার অনুরোধও করেছিল। কিন্তু পরিবার সে কথা কানে নেয়নি। মেয়ে বিয়ে রুখে দিতে পারে, এ আশঙ্কায় আলোকলতাকে গত তিন মাস ধরে কড়া নজরে রেখেছিল পরিবার।
সিউড়িতে চাইল্ড লাইনের কর্মকর্তাদের ওই ছাত্রী বলে, বিয়ের কার্ডটা জোগাড় করে পালানোর সুযোগ খুঁজছিলাম। সেই সুযোগ পেয়ে সাইকেল চালিয়ে প্রথমে বাসস্টপে আসি। সেখান থেকে বাসে বোলপুর যাই। বাস থেকে নেমে লোকদের জিজ্ঞাসা করে থানায় যাই।
ওই ছাত্রীকে থানায় দেখে অবাক হয়ে যান পুলিশ অফিসাররা। খবর যায় বোলপুরের এসডিপিও এবং চাইল্ড লাইনে। বিকেলেই থানায় গিয়ে নাবালিকাকে উদ্ধার করে চাইল্ড লাইন।
চাইল্ড লাইনের জেলা কাউন্সিলর মাধবরঞ্জন সেনগুপ্তের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ওই ছাত্রীকে একটি হোমে রাখার ব্যবস্থা করেন। নাবালিকা হওয়ায় নিয়ম মেনে তাকে সিউড়িতে চাইল্ড ওয়েলফেরায় কমিটির কাছেও নিয়ে যাওয়া হয়। কমিটির নির্দেশে বর্তমানে হোমের নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছে আলোকলতা।
ছাত্রীর বাবা খোকন মাজির বক্তব্য, সুপাত্র পেয়ে মেয়ের বিয়ের বন্দোবস্ত করেছিলাম। ১৮ বছরের আগে মেয়েদের বিয়ে দেয়া যায় না, এমনটা জানা ছিল না। বিয়ে দেয়ার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট স্কুল কর্তৃপক্ষও জানতেন না।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্বপন রায় বলেন, এমন ঘটনা জানতে পারলে অবশ্যই ওই পরিবারের সঙ্গে কথা বলতাম। যদিও মেয়েটি বিয়ের কারণে স্কুলে অনিয়মিত হয়ে পড়লেও খোঁজ রাখেনি স্কুল কর্তৃপক্ষ। এ ব্যাপারে স্কুল কর্তৃপক্ষের গাছাড়া মনোভাবকে খেয়াল করেছে পুলিশ-প্রশাসন।
তবে পুলিশ-প্রশাসনের সবাই আলোকলতার সাহসিকতার প্রশংসা করছেন। চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারম্যান নিত্যানন্দ রায় মঙ্গলবার বলেন, মেয়ে নামও আলো, কাজেও আলো। সে দুঃসাহসী। ওই এলাকায় একটি সচেতনতা শিবির করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিটি। তথ্যসূত্র : আনন্দবাজার
২৪ ফেব্রুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম