আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আলুথালু পোশাকের একরত্তি মেয়েটার আজব আবদার। পয়সা চায় না সে, পুতুল বা লজেন্সও নয়। আগরতলা বইমেলায় আসা মানুষজনের হাত ধরে ডেকে সে বলে, ‘একটা বই কিনে দেবে গো? দাও না!
অনেকে চোখ রাঙিয়ে ভাগিয়ে দেয়, আবার আবদার রাখতে দু’একটা ছোট বই কিনেও দিয়েছেন কেউ কেউ।
তার মধ্যে রয়েছে বাংলা, ইংরেজি আর অঙ্কের শিশুপাঠ্যও। বই পেয়েই এক কোণে বসে এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলে সে। বিভিন্ন প্রকাশনার ইস্তাহার, বইয়ের তালিকাও বাদ যায় না। সব তার চাই। আর পেলেই গপ গপ করে তা পড়ে ফেলে। ফুরিয়ে গেলে আবার ঘুর ঘুর করে আবদার— ‘একটা নতুন বই কিনে দাও না!’
কী করে বছর দশেকের মেয়েটা? নিজেই জবাব দেয় অবলীলায়— ‘ভিক্ষে।’ থাকে বস্তির ঘরে, রীতিমতো ভাড়া গুনে। আর স্থানীয় একটা স্কুলে পড়ে, ক্লাস টু’য়ে। কেউ কেউ জিজ্ঞেস করেন, ‘নাম কী রে তোর?’ জবাব আসে— আমুদা, আমুদা খাতুন।
আমুদার আবদার পৌঁছে গিয়েছিল বইমেলায় আসা মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের কাছেও। মানিকবাবুও এই বইপাগলির কাণ্ড দেখে অবাক।
আমুদার মা-ও ভিক্ষাজীবী, থাকেন সীমান্তের ও পারে। দুটো বেশি ভিক্ষে পাওয়ার আশাতেই মেয়েকে তিনি কাঁটাতার পার করে পাঠিয়ে দিয়েছেন ইন্ডিয়ার ত্রিপুরায়।
আমুদার এক ভাইকে দেনা করে আরবে পাঠিয়েছেন মা, কাজের জন্য। সেই ভাই কখনো টাকা পাঠালে সুখের দিন আসবে। আর মা-মেয়ে ভিক্ষে করে তার রাহা খরচের দেনা মেটাচ্ছেন।
আমুদা জানাল, ‘মা বলে দিয়েছে, ক্লাস থ্রিয়ে উঠলে তোকে আর লোকের সামনে বের করব না। দেশে ফিরিয়ে মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দেব।’ ছোট্ট মেয়েটা বলে চলে— ‘সেখানে আমি আরবি শিখব, আদব কায়দা শিখব। তার পরে দাদার মতো আরবে গিয়ে কাজ করতে পারব!’
এই আমুদার জেদই নজরে পড়ে গেছে এক ‘নন্দিতা বৌদির’। নন্দিতা দত্ত পেশায় সাংবাদিক। আমুদাকে বেশকিছু বই কিনে দেয়ার পরে সে বলে, ‘বইমেলায় আজ তোমাদের সরকার আসবে। আমাকে একটু দেখাবে?’ নন্দিতা তো হাঁ!
সরকার মানে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। নন্দিতাই আমুদাকে নিয়ে গিয়েছিলেন মানিক সরকারের কাছে। মুখ্যমন্ত্রী কয়েকটা বইও কিনে দেন তাকে। কিন্তু তার বেশি কিছু করাটা তার পক্ষেও দুষ্কর। কারণ হতদরিদ্র হলেও আইনের চোখে যে দোষী আমুদা। অনুপ্রবেশকারী। সূত্র : আনন্দবাজার
২৫ ফেব্রুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম