আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইসলাম বিদ্বেষের কারণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ট ট্রাম্পকে সবাই এক নামে চেনেন। তবে নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে তিনি একটা করে জয় পাওয়ায় অন্য বিতর্ক জেঁকে বসেছে মার্কিন মুল্লুকে। আর তা হলো স্লোভেনিয়া থেকে আসা এক নারীকে নতুন রূপে দেখার সম্ভাবনা। দরিদ্র দেশের এক সাধারণ কিশোরী থেকে মডেল, তারপর ধনাঢ্য ব্যবসায়ীর ঘরণী। এবার কি যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফার্স্ট লেডি’ও হবেন?
স্লোভেনিয়া তখনো যুগোস্লাভিয়ার অংশ, সেখানে তখনো চলছে ‘সমাজতান্ত্রিক শাসন’, সেই সময়েই সেভনিকা নামের ছোট্ট এক শহরে জন্ম মেলানিয়া নাভস-এর। ছোটবেলা থেকেই মেলানিয়া খুব লাজুক প্রকৃতির। স্কুলের শান্ত, সুবোধ বালিকা।
বাবা ভিক্টর নাভস ছিলেন গাড়ির ডিলার। মা আমালিয়া কাজ করতেন পোশাক কারখানায়। বাড়ির পাশেই ছিল মেলানিয়ার স্কুল। কর্মজীবী বাবা-মায়ের কাছে কোনোদিন স্কুল থেকে মেয়ের নামে নালিশ আসেনি।
বার্তা সংস্থা এপি-র প্রতিবেদকের কাছে কয়েকদিন আগেও মেলানিয়ার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন সেই স্কুলের সাবেক শিক্ষিকা আর শিক্ষার্থীরা। সবার এক কথা, ‘বড় ভালো মেয়ে ছিল মেলানিয়া। খুব মৃদুভাষী আর ভদ্র মেয়ে’।
প্রাথমিক স্কুল পর্ব শেষে স্লোভেনিয়ার রাজধানী লুবিয়ানার এক উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়তে যায় মেলানিয়া। সেখানেই তাকে দেখে ফেলে ফটোগ্রাফার স্টেইন জেরকো। ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি উচ্চতার আকর্ষণীয় ফিগারের অধিকারী কিশোরীটির ছবি তুলে নিতে ভুল করেননি স্টেইন।
সেভনিকায় থাকতেই মডেল হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন মেলানিয়া। স্টেইনের চোখে পড়ায় স্বপ্ন পূরণে বেশি সময় লাগেনি। মাত্র ১৬ বছর বয়সে মডেল হিসেবে পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু। প্রথমে স্লোভেনিয়ায়, তারপর ইটালির মিলান, ফ্রান্সের প্যারিস হয়ে ১৯৯৬ সালে চলে যান যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে।
বড় বড় ফ্যাশন হাউসগুলোতে তখন তার খুব চাহিদা। ইংরেজি, ইটালিয়ান, ফরাসি এবং জার্মান ভাষা শিখে প্রতিষ্ঠা সহজসাধ্য করার কাজও অনেকটাই সেরে নিয়েছেন ততদিনে।
নিউইয়র্কে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে প্রথম সাক্ষাতেই মেলানিয়াকে ট্রাম্পের ভালো লেগে যায়। নিজের ফোন নাম্বার দিয়ে বলেছিলেন, ‘ফোন করো।’ মেলানিয়া পাত্তা দেননি। পরে ট্রাম্পই আবার ফোন করে দেখা করতে চান। সেই দেখার সুবাদেই ১৯৯৬ সালে ২৪ বছরের বড় ট্রাম্পকে বিয়ে করেন মেলানিয়া।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্ত্রী হলেও মেলানিয়ার কম এবং যৌক্তিক কথা বলার সুনাম রয়েছে। স্বামীর নির্বাচনি প্রচারে নেমেও নিজের কথা সুস্পষ্ট যুক্তিতেই বলেছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট হলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম অভিবাসন প্রত্যাশীদের ঢুকতে দেবেন না, মেক্সিকো-যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তেও দেয়াল দাঁড় করাবেন। মেলানিয়া মনে করেন, কেউ বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে চাইলে সে সুযোগ রাখা উচিত।
মেলানিয়া ট্রাম্পই কি যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী ফার্স্ট লেডি? বিশ্লেষকদের ভুল প্রমাণ করে, নিন্দুকদের মুখে ছাই দিয়ে এখনো ‘ঠিক’ পথেই এগোচ্ছেন ট্রাম্প। মেলানিয়ার ‘ফার্স্ট লেডি’ হওয়া তাই অসম্ভব কিছু নয়।
যুক্তরাষ্ট্রে এসে মেলানিয়া নাভস থেকে ট্রাম্পের তৃতীয় স্ত্রী হিসেবে মেলানিয়া ট্রাম্প হয়েছেন। একমাত্র সন্তানকে কোলে নিয়ে হোয়াইট হাউসবাসিনীও তিনি হতেই পারেন।
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএস