বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৫, ১১:১৩:৩৫

কমেছে বিমান ভাড়া

কমেছে বিমান ভাড়া

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সংযুক্ত আরব আমিরাতে গড় প্রকৃত বিমান ভাড়া ১২ বছরে ৩৫ শতাংশ কমেছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সংস্থা (আইএটিএ)। নতুন স্বল্পমূল্যের এয়ারলাইনসের যাত্রা শুরু এবং আকাশপথে যাত্রার বাড়তি চাহিদার মাঝে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধির ফলে এমনটি হয়েছে।

বৈশ্বিক এই বিমান সংস্থা বুধবার প্রকাশিত এক গবেষণায় বলেছে, ‘গত ৫০ বছরে বিশ্বব্যাপী বিমান ভ্রমণের খরচ ৭০ শতাংশ কমেছে, যা আকাশপথে পরিবহনকে আরো সবার নাগালে নিয়ে এসেছে। ২০১১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতে গড় প্রকৃত বিমান ভাড়া ৩৫ শতাংশ কমেছে।’

স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থাগুলোর মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা বিগত বছরগুলোতে বিমান ভাড়া কমাতে সহায়তা করেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে এয়ার অ্যারাবিয়া আবুধাবি ও উইজ এয়ার আবুধাবির মতো একাধিক নতুন এয়ারলাইনস যাত্রা শুরু করেছে।

এর পাশাপাশি এমিরেটস, ইতিহাদ এয়ারওয়েজ, এয়ার অ্যারাবিয়া ও ফ্লাইদুবাইয়ের মতো শীর্ষস্থানীয় সংস্থাগুলো বিশ্বজুড়ে শত শত গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এই বাড়তি বিকল্পগুলো, বিশেষ করে স্বল্পমূল্যের ফ্লাইটের ক্ষেত্রে যাত্রীদের জন্য বড় সুবিধা হয়ে উঠেছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাত বর্তমানে বৈশ্বিকভাবে বিমান চলাচলের জন্য অন্যতম সেরা সংযোগ (কানেকটিং) দেশ। দেশটিতে নির্ধারিত বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনাকারী সাতটি বিমানবন্দর রয়েছে। সেখান থেকে সরাসরি সংযোগ রয়েছে ৩০৪টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও ১০৯টি দেশের সঙ্গে। সেখান থেকে প্রতিদিন গড়ে ৮৫৭টি ফ্লাইট ছেড়ে যায়।

পাশাপাশি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থাগুলো গত পাঁচ বছরে প্রায় ১৬২টি নতুন আন্তর্জাতিক রুট চালু করেছে। আইএটিএর মহাপরিচালক উইলি ওয়ালশ বলেন, “বৈশ্বিক সংযোগের (কানেকটিং ফ্লাইট) ক্ষেত্রে সংযুক্ত আরব আমিরাত একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।

এর ‘সুপার-কানেক্টর’ ভূমিকার ফলে বাণিজ্য, পর্যটন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুবিধা এসেছে দেশটিতে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের নেতৃত্ব বিমান পরিবহন খাতের জন্য একটি কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছে, যা স্মার্ট নীতিমালা ও বিশ্বমানের অবকাঠামোতে বিনিয়োগে সমর্থিত।”

টিকিটের জন্য দুই দিনের আয়ই যথেষ্ট আইএটিএ জানায়, ২০২৩ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের গড় ভাড়ার ও মাথাপিছু জিডিপির ভিত্তিতে দেখা গেছে, দেশটির বাসিন্দাদের একটি ফ্লাইট টিকিট কেনার জন্য গড় হিসেবে ১.৯ দিন কাজ করলেই চলে।

বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মাথাপিছু আয় ছিল এক লাখ ৮০ হাজার দিরহাম, যা গড়ে মাসিক ১৫ হাজার দিরহাম বেতন বোঝায়। দুই দিনের কাজের মাধ্যমে প্রায় এক হাজার দিরহাম আয় সম্ভব, যা দিয়ে স্বল্পমূল্যের এয়ারলাইনসে অনেক গন্তব্যে ভ্রমণের জন্য টিকিট কেনা যায়।

সংযুক্ত আরব আমিরাত ছাড়াও উপসাগরীয় দেশ, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া ও আরো কিছু দেশের বাসিন্দারা গড়ে পাঁচ দিনের কম কাজ করে ফ্লাইট টিকিট কিনতে পারেন। তবে আফ্রিকা, ভারত, পাকিস্তান ও কিছু সিআইএস দেশের মানুষদের উচ্চ বিমান ভাড়া ও আয়ের স্বল্পতার কারণে একটি টিকিট কেনার জন্য ১৫ দিনেরও বেশি সময় কাজ করতে হয়।

প্রায় ১০ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে বিমান খাত সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিশ্বজুড়ে আকাশপথে যাত্রার চাহিদা বাড়ায় বিমান খাত বিগত কয়েক দশকে ব্যাপক প্রসার ঘটিয়েছে। দুবাই বিশ্বব্যাপী একটি বড় বিমান চলাচলের কেন্দ্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে এবং আন্তর্জাতিক যাত্রী পরিবহনের দিক থেকে সবচেয়ে ব্যস্ত বিমানবন্দর হিসেবে অবস্থান ধরে রেখেছে।

আইএটিএর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রতি এক হাজার মানুষের জন্য তিন হাজার ৬৬৮টি ফ্লাইট পরিচালিত হয়েছে। এ ছাড়া বিমান খাতে সরাসরি নিয়োজিত আছেন দুই লাখ ছয় হাজার ৮০০ জন, যার অর্থনৈতিক মূল্য প্রায় ২৬.৬ বিলিয়ন ডলার, যা দেশটির মোট দেশজ উৎপাদনের ৫.৩ শতাংশের সমান।

এর বাইরেও সরবরাহ চেইন, কর্মীদের ব্যয় ও পর্যটন খাতের মাধ্যমে বাড়তি সুবিধা অর্জিত হয়, যা মোট জিডিপিতে ৯২ বিলিয়ন ডলার অবদান রাখে এবং ৯ লাখ ৯১ হাজার ৫০০ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে।

বিমান খাতভিত্তিক পর্যটন খাত একাই ২২ বিলিয়ন ডলার জিডিপি অবদান রাখে এবং দুই লাখ ৯৭ হাজার ৩০০ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে। আন্তর্জাতিক পর্যটকরা সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রতি বছর গড়ে ৪৭.৭ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেন, যা স্থানীয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পণ্য ও সেবার ওপর ব্যয় হয়।

আইএটিএর প্রধান উইলি ওয়ালশ বলেন, ‘প্রায় ১০ লাখ কর্মসংস্থান এবং ১৮.২ শতাংশ জিডিপি অবদানসহ বিমান খাত সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে বিশাল ভূমিকা রাখছে। আমরা আশাবাদী, বিমান খাতের বিকাশের জন্য অনুকূল পরিবেশ বজায় রেখে এ অবদান ভবিষ্যতে আরো দৃঢ় হবে।’

২০২৩ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মোট ‘অরিজিন-ডেস্টিনেশন’ ফ্লাইটের শতভাগই ছিল আন্তর্জাতিক, যা ৩৪.৮ মিলিয়ন যাত্রীর প্রস্থান নির্দেশ করে। যাত্রী প্রবাহের দিক থেকে সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক বাজার ছিল এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল। কারণ ওই অঞ্চলের বিপুলসংখ্যক প্রবাসী সংযুক্ত আরব আমিরাতে কাজ করেন। এরপর ছিল ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্য। দেশ থেকে প্রায় এক কোটি ৪১ লাখ যাত্রী এশিয়া-প্যাসিফিকে (মোট যাত্রীর ৪০ শতাংশ), ৮৫ লাখ ইউরোপে (২৪ শতাংশ) এবং ৭৯ লাখ মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোতে (২৩ শতাংশ) যাত্রা করেছে। সূত্র : খালিজ টাইমস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে