মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫, ১১:৫৩:৪৭

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ: এবার উঠে এলো এক চাঞ্চল্যকর তথ্য!

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ: এবার উঠে এলো এক চাঞ্চল্যকর তথ্য!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সর্বাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল ভারত-পাকিস্তানে। ৭ থেকে ১০ মে— চারদিনের একটা ‘যুদ্ধ ট্রেলার’ও দেখেছিল বিশ্ব। 

পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশের সেই যুদ্ধ উন্মাদনা দেখে আঁতকে উঠেছিল বিশ্ব। আপতদৃষ্টিতে এ সংঘর্ষ ভারত-পাকিস্তানের মনে হলেও মূলতি এটি ছিল চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার ছায়াযুদ্ধ। চাঞ্চল্যকর সেই তথ্যই উঠে এসেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজের প্রতিবেদনে।

বিশ্লেষকদের বরাতে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের ব্যবহৃত যুদ্ধাস্ত্রগুলো বেশির ভাগ বেইজিংয়ের তৈরি। পাকিস্তানের মাধ্যমে এসব সমরাস্ত্রে ভারতকে নাস্তানাবুদ করে মাত্র ৪ দিনেই বিশ্বদরবারে নিজেদের অবস্থান বেশ পাকাপোক্ত করেছে চীন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠ মিত্রতা, সে হিসাবে পাকিস্তানের ঢাল হিসাবে থেকে মূলত ওয়াশিংটনকেই টক্কর দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। 

ভারতের সঙ্গেও চীনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে। কাশ্মীর যুদ্ধে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং কড়া নজরদারিও ছিল সেকারণেই। এ বিষয়ে আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের (এইআই) সিনিয়র ফেলো সদানন্দ ধুমে বলেন, ‘বিষয়টি চীনের জন্য অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। পাকিস্তান তাদের নিকটতম মিত্র এবং বেইজিং তাদের মিত্রদের অপমানিত হতে দেখতে চায় না।’ ধুমে আরও বলেন, ‘মার্কিন-চীন প্রতিযোগিতার নমুনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে— যেকোনো সংঘাতে প্রতিটি দেশের একটি ‘পক্ষ’ রয়েছে। চীন যেহেতু পাকিস্তানের সঙ্গে একত্রে যুক্ত, সেখানে দুই দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত ক্রমশ ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।’ 

নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির সন্ত্রাসবাদ বিশেষজ্ঞ ম্যাক্স আব্রাহামস ফক্স নিউজ ডিজিটালকে বলেছেন, কাশ্মীর নিয়ে লড়াই এখন মার্কিন-চীন প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র হয়ে উঠতে পারে। আব্রাহামস বলেন, ‘ভারত-পাকিস্তান সংঘাত একটি প্রক্সি যুদ্ধ হিসাবে আবির্ভূত হতে পারে, যেখানে ভারতকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করে এবং পাকিস্তানকে চীন সমর্থন করে।’ 

মিডল ইস্ট মিডিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এমইএমআরআই) সভাপতি এবং ইসরাইলি সরকারের সাবেক সন্ত্রাসবাদ দমন উপদেষ্টা ইগাল কারমন বলেছেন, কাশ্মীর কেবল ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষ নয়। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধ যদি তীব্র হয়, তাহলে এটি পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্নতার দিকে নিয়ে যেতে পারে। ফলে আফগানিস্তান, ইরান ও চীনে এর প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। স্বাধীনতা অর্জন করতে পারে বেলুচিস্তান। এ ধরনের উন্নয়নের অন্যতম প্রধান ক্ষতিগ্রস্ত হবে চীন। কারণ, তারা পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে অবস্থিত গোয়াদর বন্দরে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে।’ 

নিরাপত্তাবিষয়ক বিশ্লেষক ও কূটনীতিকদের মতে, চীনের সামরিক আধুনিকীকরণ এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে তারা এখন সীমান্তঘাঁটি, ভারতমহাসাগরে মোতায়েন নৌবহর এবং মহাকাশ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে ভারতের পদক্ষেপ ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম। 

সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্রতিরক্ষাবিষয়ক বিশ্লেষক আলেকজান্ডার নিল বলেছেন, গোয়েন্দা দৃষ্টিকোণ থেকে এটি (ভারত-পাকিস্তান সংঘাত) চীনের জন্য নিজেদের সীমান্ত ঘেঁষে একেবারে অপ্রত্যাশিত এক সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। যেখানে তাদের একটি সম্ভাব্য প্রধান প্রতিপক্ষ জড়িত। দুই মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, চীনের তৈরি জে-১০ নামে একটি পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান ভারতের অন্তত দুটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। ভারতের ওই দুই যুদ্ধবিমানের একটি ফ্রান্সের তৈরি রাফাল। ভারত তাদের কোনো যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার কথা এখনো স্বীকার করেনি। তবে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জে-১০ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করার কথা নিশ্চিত করেছেন; যদিও ভারতের বিরুদ্ধে সংঘাতে কোন কোন ক্ষেপণাস্ত্র বা কী কী অস্ত্র ব্যবহার করেছেন, সে বিষয়ে কিছু জানাননি। 

আকাশযুদ্ধ সব দেশের সামরিক বাহিনীর জন্যই বিরল এক সুযোগ। আকাশযুদ্ধের মাধ্যমে তারা বৈমানিক, যুদ্ধবিমান এবং সক্রিয় যুদ্ধে আকাশ থেকে আকাশে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র কতটা কার্যকর, তা পর্যবেক্ষণ করতে পারে। প্রতিদ্বন্দ্বী আঞ্চলিক পরাশক্তি ও পারমাণবিক শক্তিধর দেশ ভারত ও চীনকে দীর্ঘদিন ধরেই কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে দেখা হয়। দুই দেশের মধ্যে হিমালয় অঞ্চলে ৩ হাজার ৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। পঞ্চাশের দশক থেকে সীমান্তে দুই দেশের মধ্যে বিরোধ রয়েছে।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে