রবিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৯:১১:৩৫

ভারতের রেকর্ড গরুর মাংস রপ্তানিতে, ১৬ শতাংশ বেড়েছে মোদির আমলে

ভারতের রেকর্ড গরুর মাংস রপ্তানিতে, ১৬ শতাংশ বেড়েছে মোদির আমলে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের গরুর মাংস রপ্তানি নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। ক্ষমতায় আসার আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই খাতের কড়া সমালোচনা করতেন। তিনি কংগ্রেস সরকারের সময় গরুর মাংস রপ্তানিকে ‘পিঙ্ক রেভল্যুশন’ বলে ব্যঙ্গ করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, দেশটির মুসলিম সংখ্যাগোষ্ঠীকে খুশি করতে কংগ্রেস সরকার এই খাতকে উৎসাহ দিয়েছে।

কিন্তু বাস্তবে মোদির শাসনামলে গরু ও মহিষের মাংস রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ১৬ শতাংশ। এই খাতে ভারতের বৈদেশিক মুদ্রা আয় এখন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

মুসলিম মিরর নামে ভারতীয় একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে ভারত প্রতি বছর প্রায় ১৫ লাখ ৩০ হাজার টন গরু-মহিষের মাংস রপ্তানি করে। এ থেকে আয় হয় প্রায় ৪৩০ কোটি মার্কিন ডলার। বৈশ্বিক মাংস বাজারে ভারতের অবস্থানও দৃঢ় হচ্ছে। বিশ্বের বৃহত্তম মাংস রপ্তানিকারক ব্রাজিলের পরে ভারতের অবস্থান রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে।

গরুর মাংস রপ্তানিতে ভারতের পরে অবস্থার করছে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। এই পরিসংখ্যান প্রকাশ করে যে, মাংস রপ্তানি এখন ভারতের জন্য এক বড় অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি।

ভারতে রাজ্য পর্যায়ে গরু জবাইয়ের জন্য বিভিন্ন বিধিনিষেধ থাকলেও, দেশের অভ্যন্তরীণভাবে কোনো একক জাতীয় আইন নেই। ব্যবসায়ীরা তুলনামূলকভাবে শিথিল বিধি থাকা রাজ্য থেকে গরু পাচার করে রপ্তানি চালাচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের চেয়ে আর্থিক বাস্তবতাই এই খাতের প্রসারে বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখছে। ভারতে মহিষের সংখ্যা প্রায় ১১ কোটি ৫০ লাখ এবং গরুর সংখ্যা ৭ কোটি ৬০ লাখের বেশি। দুধ উৎপাদনের পর গরু-মহিষের মাংস ও চামড়া শিল্পে ব্যবহার করা হয়, যা বৈদেশিক রপ্তানির পাশাপাশি দেশীয় অর্থনীতিকেও সমৃদ্ধ করছে।

ভারতের মাংস রপ্তানি ৬৫টি দেশে পৌঁছেছে। বিশেষ করে উপসাগরীয় তেলসমৃদ্ধ দেশগুলোতে ভারতীয় মাংসের চাহিদা বেশি। কারণ, এ মাংস আসে মুক্ত চারণভূমিতে লালিত গরু-মহিষ থেকে, যা তুলনামূলক স্বাস্থ্যসম্মত বলে বিবেচিত হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতের মাংসের দাম অনেক সময় ব্রাজিল বা অস্ট্রেলিয়ার তুলনায় কম হওয়ায় এটি ক্রেতাদের কাছে আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।

অর্থনৈতিক লাভের কারণে হিন্দু উদ্যোক্তারাও ব্যাপকভাবে এই খাতে প্রবেশ করেছেন। ভারতের শীর্ষ ছয় মাংস রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চারটির মালিক হিন্দু। এর মধ্যে রয়েছে আল-কাবির এক্সপোর্টস, অ্যারাবিয়ান এক্সপোর্টস, এম.কে.আর ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টস এবং পি.এম.এল ইন্ডাস্ট্রিজ। এ তথ্য প্রমাণ করে যে, ধর্মীয় ভেদাভেদ থাকলেও ব্যবসায়িক সুযোগের কারণে হিন্দুরাও সক্রিয়ভাবে এই শিল্পে যুক্ত হচ্ছেন।

আরেকটি দিক হলো, ভারতের রপ্তানিকৃত সব মাংসে হালাল সনদ থাকলেও, দেশীয় বাজারে হালাল সার্টিফিকেশন নিষিদ্ধ। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক বাজারে মুসলিম সংখ্যাগোষ্ঠীকে লক্ষ্য রেখে হালাল মান বজায় রাখা হলেও, দেশীয়ভাবে ভিন্ন নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে।

সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, মোদি ক্ষমতায় আসার আগে যে শিল্পকে তিনি সমালোচনা করেছিলেন, সেই গরু-মহিষের মাংস রপ্তানি এখন রেকর্ড আয়ের খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রা আয় বাড়ানোর পাশাপাশি ভারতের বৈশ্বিক মাংস বাজারে অবস্থান আরও দৃঢ় হয়েছে।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে