আন্তর্জাতিক ডেস্ক : দুই দশকের বেশি সময় ধরে যেন যুদ্ধের সঙ্গেই ঘর করছে দেশটা। নানা তথ্যচিত্রে খবরের কাগজের পাতায় সে সব ছবি। যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগানিস্তান। চিকিত্সার অবস্থাও যে খুব একটা ভালো তেমনটা বলা যাবে না।
সামগ্রিকভাবে চিকিত্সা, শিশুমৃত্যু এবং প্রসূতি মৃত্যুর হারে বিশ্বে নিচের দিকেই স্থান পায় আফগানিস্তান। সেখানেই নিঃশব্দে গরিবের সেবার নিজেকে যুক্ত করেছেন এক ডাক্তার, যিনি বড়লোকদের অপারেশন করে মেলা টাকায় চিকিত্সা করেন গরিবদের। টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানা গেছে।
ডা. আব্দুল গাফ্ফার ঘাউর একজন প্লাস্টিক সার্জন। রাউনোপ্লাস্টি, বোটক্স ছাড়াও ক্ষতের দাগ ঢেকে দেন রোগীদের। বিত্তশালী রোগীদের ক্ষেত্রে যেটা বিলাশিতার নামান্তর, তেমনটা ভাবতেই পারেন না দেশের ৯৮ শতাংশ লোক।
কোনো মহিলার স্বামী তার নাক পছন্দ না করায় রাউনোপ্লাস্টি করাতে আসেন। সেখানেই যুদ্ধের ক্ষত বয়ে বেড়ানো হাজার হাজার শিশুরা সামান্য অপারেশন তো দূরে থাক, প্রয়োজনীয় পথ্যটুকুও পায় না। সরকারি হাসপাতালের কথা বলার মতো কিছুই নয়।
ব্যান্ডেজ থেকে ওষুধ, সবকিছুর ভার বইতে হয় রোগীকে। কারণ সরকারি অনুদান এতটাই কম আসে যে, তা দিয়ে হাসপাতালের খরচ বহন করা সম্ভব হয় না।
সেখানেই এমন কাজ করছেন ডা. আব্দুল, যা দেখে যেকোনো চিকিত্সক গর্ববোধ করতে পারেন। তিনি বলেন, আফগানিস্তানে মাত্র ৬ জন প্লাস্টিক সার্জন রয়েছেন। এ দেশে ডাক্তারির এই শাখাকে খুব একটা স্বীকৃতি দেয়া হয় না।
তিনি বলেন, আমিও পাকিস্তান থেকে পড়াশোনা শেষ করেছি। এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য জার্মানি গিয়েছিলাম। কিন্তু দেশে ফিরেই চিকিত্সা করার ইচ্ছা ছিল। আমি এ দেশের মানুষজনদের অবস্থা জানি। অনেকেই টাকার অভাবে চিকিত্সা করাতে পারেন না। তাই বিত্তশালী রোগীদের কাছ থেকে যে টাকা পাই সেটা গরিবদের কাজেই লাগিয়ে দিই।
ডা. আব্দুল বলেন, দেশের এখনো বেশকিছু অংশ তালেবানদের দখলে রয়েছে। সেখানকার অবস্থা তো ভীষণ শোচনীয়। কুন্দুজ প্রদেশে এখনো বোমা-গুলির লড়াই হয়েই চলেছে।
তিনি যেখানে অস্ত্রোপচার করছিলেন, তার কিলোমিটার খানেকের মধ্যেই চলছিল যুদ্ধ। সেখানেই এক অন্য যুদ্ধে ব্রতী এই ডাক্তার। রাতে ঘুমের সময়ও বোমা-গুলির শব্দ শুনতে শুনতেই ঘুমিয়ে পড়েন আব্দুল। পরের দিন আরো বেশ কয়েকজনকে জীবনের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে হবে যে তাকে।
৭ সেপ্টেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম