শনিবার, ১২ মার্চ, ২০১৬, ১০:২৪:০৮

কবর দেয়ার আগে নড়ে উঠলো শিশুটি!

কবর দেয়ার আগে নড়ে উঠলো শিশুটি!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সদজাত শিশুটি মারা গেছে। এমনই ঘোষণা করেছিলেন কর্তব্যরত চিকিৎসত। চিকিৎসকের কথায় যেন আকাশ ভেঙে পরছিল পরিবারের ওপর। মৃত শিশুটিকে নিয়ে বাড়ি ফেরেন স্বজনরা। চলছিল সৎকারের তোড়জোড়। আর এ মুহূর্তে সেই মৃত শিশুটির পা নড়ে উঠে! এ ঘটনাটি ঘটে চাপড়ার বাগমারা-বহিরগাছি গ্রামে।

ফের হাসপাতাল, কিঞ্চিৎ হইচই— তবে কৃষ্ণনগর জেলা সদর হাসপাতালের চিকিৎসকেরা নির্বিকার গলায় জানিয়ে দিয়েছিলেন, এমনটা হতেই পারে। তা নিয়ে হাসপাতাল চত্বর উত্তপ্ত হয়ে ওঠার আগেই বেগতিক বুঝে শিশুটিকে ভর্তি করা হয় এসএনসিইউ ওয়ার্ডে।

শুক্রবার গভীর রাত পর্যন্ত জানা গিয়েছে, বেঁচেই রয়েছে সদ্যোজাত শিশুটি। তবে হাসপাতালের ওই গয়ংগচ্ছ মনোভাবে ক্ষুব্ধ স্বাস্থ্যভবন। বিষয়টি খতিয়ে দেখারও আশ্বাস মিলেছে সেখান থেকে।

বৃহস্পতিবার রাতে প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি হন বুলবুলি মণ্ডল। এ দিন ভোরে জন্ম দেন ওই পুত্রসন্তানের। তবে প্রসবের কিছু ক্ষণের মধ্যেই নার্সেরা এসে বুলবুলির পরিবারকে জানিয়ে দেন দুঃসংবাদ— শিশুটি মারা গিয়েছে।

নিয়ম মেনে ঘণ্টা কয়েকের মধ্যেই তুলো আর লিউকোপ্লাস্টে জড়ানো ‘মৃত’ শিশুটিকে তুলে দেওয়া মণ্ডল পরিবারের হাতে। শোকস্তব্ধ পরিজনেরা নাইলনের ব্যাগে ‘মরা ছেলে’ নিয়ে ফিরে আসেন বাড়িতে। বাড়ি ফিরে বুলবুলির স্বামী সাদিকুল শেষ বারের মতো দেখে নিতে চেয়েছিলেন ছেলের মুখ।

তিনি বলেন, ‘মনটা ভেঙে গিয়েছিল। ভাবলাম, হোক না মরা ছেলে। শেষ বার দেখে নিই মুখটা।’ আর তা দেখতে গিয়েই সাদিকুল দেখেন, ছোট্ট বুকটা যেন ওঠানামা করছে। বাচ্চা নিয়ে ফের ছুটে এসেছিলেন হাসপাতালে। আর সেখানেই তাদের শুনতে হয়েছিল, ‘এমনটা হতেই পারে।’

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বুলবুলির ছেলের ওজন সাকুল্যে সাড়ে চারশো গ্রাম। শিশুটির ডান হাতের গড়নও পুরোপুরি হয়নি। একটা হাতের তালুই নেই।

হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানান, শিশুটি জন্মানোর পরে তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল এসএনসিইউ ওয়ার্ডে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক পার্থ সাহা শিশুটি দেখে ‘ভ্রূণ’ বলে উল্লেখ করে ‘নোট’ দেন— মায়ের পেটের ভিতরে ছাড়া বাইরের পরিবেশে বেঁচে থাকার অবস্থায় নেই বা ‘নন ভায়েবল’।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বেলা সওয়া ৯টা নাগাদ ‘স্টিল বর্ন’ বলে উল্লেখ করে শিশুটিকে তার পরিবারের হাতে দেওয়া হয়। চিকিৎসক পার্থ সাহা বলেন, ‘শিশুটির ওজন মাত্র সাড়ে চারশো গ্রাম। পাঁচশো গ্রামের নীচে ওজন হলে ভ্রূণ হিসাবেই ধরা হয়। কোনও অবস্থাতেই তা মায়ের পেটের বাইরের পরিবেশে বেঁচে থাকতে পারে না।’

মা ও শিশুর মৃত্যু কমাতে গঠিত টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান ত্রিদিব বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেন, ‘সাধারণ ভাবে ২৪ সপ্তাহের নীচে হলে তাকে ভ্রূণ বলা হয়। যে সময়ে প্রসব হয়েছে, সেই সময়ে হয়তো তার জীবনের কোনও চিহ্ন ছিল না। পরে তা পাওয়া গিয়েছে।’

পার্থবাবুর দাবি, সদ্যোজাতকে পরীক্ষা করে কোনও হৃদস্পন্দন ও শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়ার লক্ষণ দেখেননি। তবে যে ভাবে শিশুটিকে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল, তা যে নিয়মবিরুদ্ধ তা তিনিও বলছেন।

চিকিৎসক বলেন, ‘নিয়ম হল, চার ঘণ্টা অপেক্ষা করার পরে আর এক বার চিকিৎসককে দিয়ে পরীক্ষা করে তাঁকে দিয়ে মৃত ঘোষণা করানো। কিন্তু আমাকে না দেখিযেই শিশুটিকে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়।’
১২ মার্চ, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমএন

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে