সোমবার, ২১ মার্চ, ২০১৬, ০৪:৪৩:১৯

বিশ্বকে অবাক করে নয়া ইতিহাস গড়লেন বারাক ওবামা

বিশ্বকে অবাক করে নয়া ইতিহাস গড়লেন বারাক ওবামা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সস্ত্রীক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কিউবায় পা রেখে নতুন ইতিহাস গড়লেন। ছাইরঙা প্যান্ট আর হাল্কা হলুদ ফুলশার্ট, মাথায় টুপি। ল্যান্ডফোনের রিসিভার কানে কথা বলছেন দাড়ি-গোঁফওয়ালা এক বৃদ্ধ, নাম প্যানফিলো। ফোনের ও-প্রান্তে যিনি, তার শার্টটাও হাল্কা ছাইরঙের। সঙ্গে মানানসই টাই। টেবিলে বসে বাঁ হাতে রিসিভার তুলে যিনি বললেন, ‘দিস ইজ প্রেসিডেন্ট ওবামা!’

মার্কিন প্রেসিডেন্টকেই চাইছিলেন টুপি পরা বৃদ্ধ। ফোনে নিজের পরিচয় দিয়ে বারাক হুসেন ওবামাকে বললেন, ‘আমি কিউবা থেকে বলছি। আপনাকে বিমানবন্দরে আনতে যাব? আপনার সঙ্গে কি অনেক মালপত্র? তা হলে কিন্তু বেরোতে অনেক দেরি হবে!’ তার বাড়িতে অতিথি হতে প্রেসিডেন্টকে আমন্ত্রণ জানালেন প্যানফিলো। ওবামা বললেন, ‘সি ইউ ইন হাভানা।’ সঙ্গে জানাতে ভুললেন না, আমেরিকা আর কিউবার লোকেরা এখন বন্ধু।

তিন মিনিট উনত্রিশ সেকেন্ডের ভিডিওটা গত কালই ফেসবুকে পোস্ট করেছে হাভানার মার্কিন দূতাবাস। যেখানে নিজের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ওবামা। প্যানফিলোর চরিত্রে দেখা গিয়েছে কিউবার জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা লুই সিলভাকে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের ঐতিহাসিক কিউবা সফরের ঠিক আগে এই ভি়ডিও প্রকাশ যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে আগেই জানিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা। আর নতুন করে সারানো পিচরাস্তা, ঝলমলে ব্যানারে ওবামাকে স্বাগত জানাতে তৈরি হচ্ছিল হাভানাও।

শেষমেশ ইতিহাস যখন বাস্তবের চেহারা পেল, বাংলাদেশে তখন গভীর রাত, কিউবায় বিকেল। বৃষ্টিভেজা হাভানার মাটি ছুঁল ওবামার ‘এয়ার ফোর্স ওয়ান’ বিমান। দীর্ঘ ৮৮ বছর পরে কিউবায় এলেন কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট। দু’দিনের এই সফরে ওবামার সঙ্গী স্ত্রী মিশেল আর দুই মেয়ে সাশা-মালিয়া। বিমানবন্দরে প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানান কিউবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রডরিগেজ।

‘এয়ার ফোর্স ওয়ান হাভানায় নামছে— দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি কখনও,’ বলেছিলেন কিউবার সাহিত্যিক লিওনার্দো পাদুরা। ভাবার কথাও নয় হয়তো। কেন, জানতে গেলে পিছিয়ে যেতে হবে সাড়ে পাঁচ দশক।

১৯৫৯ সালে প্রেসিডেন্ট ফুলগেনসিও বাতিস্তাকে গদিচ্যুত করেছিলেন বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রো। বাতিস্তার মার্কিন-প্রীতি কারো অজানা ছিল না। কাস্ত্রোদের অভিযোগ ছিল, তাকে সামনে রেখেই কিউবার উপরে ছড়ি ঘোরাচ্ছিল আমেরিকা। বাতিস্তার পতনের পরে কাস্ত্রোর নেতৃত্বে নতুন ইতিহাস তৈরি হয় কিউবায়। আর আমেরিকা-কিউবা মুখ দেখাদেখি কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তখনই।

নিজের দ্বিতীয় ইনিংস শেষ হওয়ার আগে দু’দেশের সম্পর্কের সেই শৈত্য কাটাতে উদ্যোগী হন ওবামা। নেলসন ম্যান্ডেলার স্মরণসভায় কিউবার বর্তমান প্রেসিডেন্ট রাউল কাস্ত্রোর সঙ্গে তাকে হাত মেলাতে দেখে নড়ে বসে গোটা দুনিয়া। ২০১৪-র ডিসেম্বরে ফোনে প্রায় ৪৫ মিনিট কথা হয় দুই প্রেসিডেন্টের। ওবামা ঘোষণা করেন, ফের হাভানার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক শুরু করতে উদ্যোগী হোয়াইট হাউস। সেই বন্ধুত্বের সেতুবন্ধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন পোপ ফ্রান্সিসও।

ওবামার ঘোষণার পরপরই দু’দেশের কয়েক জন বন্দিকে মুক্তি দেয় আমেরিকা ও কিউবা। অগস্টে দরজা খোলে ৫৪ বছর বন্ধ থাকা হাভানার মার্কিন দূতাবাস। সেই ইস্তক শিক্ষা থেকে ভ্রমণ— কিউবার উপরে জারি থাকা একের পর এক নিষেধাজ্ঞা শিথিলের নির্দেশ দিয়েছেন ওবামা।

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের রাস্তায় অবশ্য অনেক খানাখন্দ বোজানো এখনো বাকি। যার মধ্যে সব চেয়ে বড় হল, কাস্ত্রোর আমল থেকে আমেরিকার চাপানো আর্থিক নিষেধাজ্ঞা। ওবামা বহু আগেই এই নিষেধাজ্ঞা তোলার পক্ষে মত দিয়েছেন। তবে মার্কিন কংগ্রেসে রিপাবলিকানদের বাধায় এ নিয়ে এগোতে পারেননি। আমেরিকার আসন্ন ভোটে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিন্টন অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন, নিষেধাজ্ঞা তোলার পক্ষে তিনিও। গুয়ান্তানামো বে-তে মার্কিন নৌ-ঘাঁটি নিয়েও দীর্ঘদিনের আপত্তি কিউবার।

এই প্রেক্ষাপটে রাউল কাস্ত্রোর সঙ্গে কাল ওবামার বৈঠক। মঙ্গলবার ওবামা দেখা করবেন কিউবার জনতার সঙ্গে। বক্তৃতাও দেবেন। বন্ধুত্বের উষ্ণতায় এখন আরও কত বরফ গলে, সেটাই দেখার।-আনন্দবাজার
২১ মার্চ, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে