আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সাবেক স্ত্রীকে একনজর দেখতেই বিমান ছিনতাই করেন এক স্বামী। মিসরের বিমান সংস্থা ইজিপ্টএয়ারের ছিনতাইকৃত বিমানের বেশির ভাগ যাত্রীকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে রেডিও তেহরান সূত্রে জানা গেছে। বিমানের চার বিদেশি যাত্রী এবং সাত ক্রুকে কেবল আটক আটক রাখা রয়েছে।
এর আগে আলেকজান্দ্রিয়া থেকে রাজধানী কায়রো যাওয়ার পথে অভ্যন্তরীণ রুটের একটি এয়ারবাস ৩২০কে ছিনতাই করে সাইপ্রাসের লারনাকা বিমানে নামানো হয়।
আমেরিকা এবং মিসরের দ্বৈত নাগরিক ইব্রাহিম সামাহা সাইপ্রাসের অধিবাসী তার সাবেক স্ত্রী’র সঙ্গে দেখা করার জন্যই বিমানটি ছিনতাই করেছেন। আলেকজান্দ্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পশু চিকিৎসা বিভাগে অধ্যাপনা করেন ২৭ বছর বয়সী ইব্রাহিম সামাহা।
কোমরে বিস্ফোরক বাঁধা আছে হুমকি দিয়ে ফ্লাইট এমএস১৮১ ছিনতাই করেন সামাহা। সামাহা'র সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে বেশির ভাগ যাত্রীকে মুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। পণবন্দিদের লারনাকা বিমানবন্দরের টারমাকে রাখা হয়েছে।
লারনাকা বিমানবন্দরটি সাইপ্রাসের দক্ষিণ উপকূলে অবস্থিত। ছিনতাই করা বিমান অবতরণের পর এটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
এদিকে টানা কয়েক ঘণ্টা নাটকীয়তার পর শেষমেশ সাইপ্রাসের লারনাকা বিমানবন্দরে গ্রেফতার করা হয় ছিনতাইকারী সেইফ এলদিন মুস্তাফাকে। সাইপ্রাস পুলিশ জানায়, মুস্তাফা আলেকজান্দ্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি মেডিসিনের অধ্যাপক। মুক্ত করা হয়েছে বিমানটিতে আটক সব যাত্রী ও বিমানকর্মীকে।
সাইপ্রাসের লারনাকা বিমানবন্দরে এখন জমজমাট নাটক। কী হয় কী হয়, এ উত্তেজনায় থরথর করে কাঁপছে গোটা বিমানবন্দর আর তার লাগোয়া এলাকা। বিমান-যাত্রীদের আত্মীয়-স্বজনের চোখে মুখে উদ্বেগের ছাপ স্পষ্ট। যারা সদ্য মুক্তি পেয়েছেন, সেই যাত্রী আর তাদের পরিজনরা এখনো যেন বিশ্বাস করে উঠতে পারছেন না, আপাতত তাদের ফাঁড়া কেটে গেছে।
সাইপ্রাসের লারনাকা বিমানবন্দরে নামার পর বিমানটির ধারে-কাছেই ঘেঁষতে পারছে না সাইপ্রাসের পুলিশ ও বিমানবন্দরের নিরাপত্তা রক্ষীরা। ছিনতাইকারী ইব্রাহিম সামাহারের হুমকি, তারা ধারে-কাছে এলেই বোমা বা বিস্ফোরক দিয়ে বিমানটি উড়িয়ে দেয়া হবে।
সাইপ্রাসের পুলিশ খবর নিয়ে জেনেছে, ছিনতাইকারী ইব্রাহিম সামাহা খুব সাধারণ কেউ নন। তিনি আলেকজান্দ্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি মেডিসিনের অধ্যাপক। তার সাবেক স্ত্রীর সঙ্গে তার বহু দিন দেখাশোনা, কথাবার্তা নেই।
কিন্তু স্ত্রীকে তার দেখার ইচ্ছে খুব। তার সঙ্গে কথা বলতে চান ইব্রাহিম। সেই ফুরসৎ যাতে মেলে, সে জন্য কিছুদিন আগে সাইপ্রাসে আশ্রয় চেয়েছিলেন তিনি। তা না পেয়েই নাকি সাইপ্রাস সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে বিমান ছিনতাই করেন সেই অ্ধ্যাপক।
আজ লারনাকা বিমানবন্দরে দাঁড়ানো মিসরীয় এয়ারলাইন্সের বিমানের ককপিট থেকেই আরবি ভাষায় লেখা একটি চিঠি ছুঁড়ে দিয়েছেন ছিনতাইকারী। সেই চিঠিটি তার সাবেক স্ত্রীর উদ্দেশ্যে লেখা। প্রেমের চিঠি। বিরহ-বেদনারও!
আলেকজান্দ্রিয়া থেকে কায়রো যাওয়ার পথে মঙ্গলবার ছিনতাই করা হয় মিসরের সরকারি বিমান সংস্থা ‘ইজিপ্টএয়ার’-এর ওই বিমানটিকে।
পাইলটকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ছিনতাই করা বিমানটিকে তড়িঘড়ি নামতে বাধ্য করা হয় সাইপ্রাসে।
‘ইজিপ্টএয়ার’-এর ওই এমএস-১৮১ এয়ারবাসটিতে ছিলেন ৫৬ জন যাত্রী ও সাতজন বিমানকর্মী। বিমানবন্দরে নামার পর পরই দোভাষীর মাধ্যমে সাইপ্রাসের সরকারি কর্তা ও বিমানবন্দরের পদস্থ কর্তাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা শুরু করে দেন ছিনতাইকারী। তারই কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এক বিমানকর্মী আর চারজন বিদেশি যাত্রী ছাড়া বিমানের বাকি যাত্রীদের মুক্তি দেন ছিনতাইকারী।
লারনাকা বিমানবন্দরে নামার পরই সাইপ্রাসের অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক পদস্থ কর্তা জানিয়েছিলেন, ওই বিমানে শক্তিশালী বোমা বা খুব জোরালো বিস্ফোরক রয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।।
বিমানটিকে তড়িঘড়ি সাইপ্রাসের লারনাকা বিমানবন্দরে নামতে বাধ্য করেছে। ওই বিমানে একাধিক ছিনতাইকারী রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। পরে অবশ্য জানা যায়, ইব্রাহিমই ওই বিমানের একমাত্র ছিনতাইকারী।
২৯ মার্চ,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম