আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে হৈচৈ ফেলে দিয়েছে পানামা কেলেঙ্কারি। ওয়াশিংটন–ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইসিআইজে বিভিন্ন দেশের কালো টাকার মালিকদের তথ্য ফাঁস করে দিয়ে দারুণ আলোড়ন সৃষ্টি করে। তবে কখন কার নাম প্রকাশ হয়! এমন ভাবনায় বিশ্বের বহু নামি-দামী ব্যক্তিদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে এখন।
এদিকে বৃহস্পতিবার এই পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে ফেঁসেছেন চীনা নেতারা। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষস্থানীয় আট নেতার নিকটাত্মীয়রা মোসাক ফনসেকার মাধ্যমে বিদেশে ভুয়া প্রতিষ্ঠান তৈরির নামে অর্থ পাচার করেছিলেন।
পানামাভিত্তিক আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মোসাক ফনসেকার ফাঁস হওয়া ১ কোটি ১৫ লাখ নথি বিশ্লেষণ করে সেগুলো গত রোববার থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করতে শুরু করেছে ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে)।
বিশ্বের ক্ষমতাধর ও ধনী ব্যক্তিরা দেশে কর ফাঁকি দিয়ে বিদেশে ভুয়া প্রতিষ্ঠান তৈরির নামে কীভাবে বিপুল অর্থ পাচার করেছেন, এসব নথি তার জাজ্বল্য প্রমাণ তুলে ধরে।
গতকাল চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আট শীর্ষস্থানীয় নেতার আত্মীয়ের নাম। এর মধ্যে আছেন চীনের প্রেসিডেন্ট, কমিউনিস্ট পার্টি ও সেনাবাহিনীর প্রধান—‘সবকিছুরই চেয়ারম্যান’ নামে পরিচিত শি জিনপিংয়ের এক নিকটাত্মীয়। রাষ্ট্র পরিচালনার শীর্ষ পর্ষদ পলিটব্যুরোর আরও সাত সদস্যের আত্মীয়ের নামও উঠে এসেছে প্রতিবেদনে। এদের মধ্যে দুজন এখন পার্টির পলিটব্যুরোতে সঙ্গেই আছেন। কমিউনিস্ট চীনের প্রতিষ্ঠাতা মাও সে-তুংয়ের এক নাতনি-জামাইও আছেন তালিকায়।
আইসিআইজের প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনের বিপ্লবে নেতৃত্বদানকারী অনেকেরই ছেলেমেয়ে বা নাতি-নাতনি ব্যবসায়ের জগতে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন। বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ চীন। দেশটিতে ক্রোড়পতির সংখ্যা হাজার হাজার। কিন্তু এটির রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাধর ব্যক্তি বা তাদের আত্মীয়দের সম্পদ লুকানোর জন্য দেশের বাইরে অর্থ পাচারের কাহিনি অজানাই ছিল।
মোসাক ফনসেকার মাধ্যমে দেশের বাইরে ভুয়া প্রতিষ্ঠান বানিয়ে যারা গচ্ছিত রেখেছেন লুকানো অর্থ, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন দেং জিয়াগুই। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বড় বোনের স্বামী তিনি। ২০০৪ সালে একটি এবং ২০০৯ সালে আরও দুটি প্রতিষ্ঠান বানাতে মোসাকের সহায়তা নেন দেং। এ তিন প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল সুপ্রিম ভিক্টরি এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড, বেস্ট ইফেক্ট এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড এবং ওয়েলথ মিং ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড। এসব প্রতিষ্ঠানের কাজ কী ছিল, তা অস্পষ্ট। এ বিষয়ে জানতে আইসিআইজের বারবার অনুরোধের পরও কোনো সাড়া দেননি দেং।
ফনসেকার সেবা নেওয়া শীর্ষ চীনা নাগরিকের তালিকায় আছেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী লি পেংয়ের মেয়ে লি জিয়াওলিন। লি পেং ১৯৮৭ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। লির মেয়ে এবং তাঁর স্বামীর কর রেয়াতের মুক্তাঞ্চল বলে খ্যাত ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে কফিক ইনভেস্টমেন্ট নামে একটি কোম্পানির মালিক।
চীনা কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সন্তান বা নাতিপুতিদের কেউ কেউ বেশ অল্প বয়সেই বাইরে অর্থ পাচারের বিষয়ে সিদ্ধহস্ত হয়ে উঠেছিলেন। চীনা পলিটব্যুরোতে চার নম্বর শীর্ষস্থানীয় নেতা হিসেবে ২০১২ সাল পর্যন্ত ছিলেন জিয়া কুইংলিন। তাঁর নাতনি জেসমিন লি জিদান ফনসেকার মাধ্যমে ‘হারভেস্ট সান ট্রেডিং লিমিটেড’ নামে ভুয়া প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন ২০১০ সালে। জেসমিন তখন স্টানফোর্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ছিলেন।
আর যেসব চীনা রথী-মহারথীর নাম উঠে এসেছে ফনসেকার তালিকায়, তাদের মধ্যে আছেন কমিউনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরোর বর্তমান সদস্য জ্যাং গাওলিওর মেয়ের স্বামী লি শিং পুত। ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে তাঁর তিনটি প্রতিষ্ঠান ছিল।
আছেন আরেক পলিটব্যুরো সদস্য লিউ ইউয়ানসানের পুত্রবধূ জিয়া লিকুইং। আলট্রা টাইম ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি নামে ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে ছিল তাঁর ভুয়া প্রতিষ্ঠান।
২০০২ থেকে ২০০৭ সালে চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন জেং কুইংহং। তার ভাই জেং কুইংহুয়াইয় ছিলেন চায়না কালচালার এক্সচেঞ্জ অ্যাসোসিয়েশন লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার।
হু ইয়াওবাং চীনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান ছিলেন ১৯৮২ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত। প্রয়াত হুয়ের ছেলে হু দেহুয়ার মোসাক ফনসেকার তালিকায় আছেন একটি ভুয়া প্রতিষ্ঠানের পরিচালক এবং মুনাফাভোগী হিসেবে।
মাও সে-তুংয়ের যে নাতনি-জামাইয়ের নাম উঠেছে, এ তালিকায় তিনি চেং দংশেং। সেই ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে তার ছিল কিন বেস্ট ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি প্রতিষ্ঠান।
৮ এপ্রিল, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমএন