শুক্রবার, ০৮ এপ্রিল, ২০১৬, ০৬:০৪:৫৩

কলকাতায় ফ্লাইওভার দুর্ঘটনার সব দোষ 'নাট-বল্টু'র

কলকাতায় ফ্লাইওভার দুর্ঘটনার সব দোষ 'নাট-বল্টু'র

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতায় বিবেকানন্দ উড়ালসড়কের থাম থেকে নাট-বল্টু খুলে পড়ার পর তা ঝালাই করে লাগিয়ে দেন নির্মাণকারী সংস্থা আইভিআরসিএল-এর সিভিল ইঞ্জিনিয়ার নিলয় রায়। তার আত্মবিশ্বাস এতটাই ছিল যে, এর পর তিনি দায়িত্বে থাকা ইঞ্জিনিয়ারকে উড়ালসড়ক ঢালাইয়ের কাজ চালিয়ে যেতে বলেন। আশ্বস্ত করেন তার 'বস'দেরও। কিন্তু তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভেঙে পড়ে উড়ালসড়ক।

গত ৩১ মার্চ উড়ালসড়ক ভেঙে যাওয়ার পরই নিলয় রায়ের ভূমিকা জানতে পারে পুলিশ। কিন্তু দমদমের বাড়ি ছেড়ে উধাও হয়ে যান তিনি। তাকে পাওয়া যায়নি হাওড়ার বাড়িতেও। বুধবার কলকাতায় ফেরার পরই তাকে লালবাজারে নিয়ে আসা হয়। গোয়েন্দাপ্রধান দেবাশিস বড়াল জানান, বৃহস্পতিবার সারাদিন নিলয় রায়কে জেরা করার পর তার বক্তব্যে বহু অসঙ্গতি মেলে। এদিন বিকেলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এদিকে, হায়দরাবাদের আরো তিন কর্তাকে নোটিশ দিয়ে ডেকে পাঠিয়েছে পুলিশ। তারা লালবাজারে না এলে তাদের বিরু‌দ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে কলকাতা পুলিশ। এদিন এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কলকাতা হাই কোর্টে চতুর্থ জনস্বার্থ মামলাটি দায়ের হয়।

মামলাকারীর আবেদন, এই প্রকল্পে নির্মাণের কাঁচামাল সরবরাহকারী ঠিকাদার সংস্থা সন্ধ্যামণি প্রোজেক্টস-এর কী ভূমিকা ছিল, তা খতিয়ে দেখতে সিবিআই তদন্ত হোক। উল্লেখ্য, এই সংস্থার কর্ণধার হচ্ছেন রজত বক্সি। তার সন্ধানেও চলছে তল্লাশি।

পুলিশ জানিয়েছে, লালবাজারে জেরার মুখে প্রথমে নিলয় রায় স্বীকার করেননি তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ। বরং তিনি গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন বলে পাল্টা অভিযোগ পুলিশের। ১৯৮৮ সালে কলকাতার একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা করেন নিলয়। ২০০৮ সালে আইভিআরসিএল-এ ম্যানেজার (সিভিল এক্সিকিউশন) পদে যোগ দেন তিনি। উড়ালসড়ক প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার শুরু থেকেই ছিলেন এর তদারকিতে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের কাছে নিলয় দাবি করেন যে, ঘটনার দিন সকাল সাড়ে ৯টা দিকে তিনি গণেশ টকিজে ঢালাইয়ের কাজ দেখতে যান। এর কিছুক্ষণ পরই তিনি দেখেন যে, উড়ালসড়ক থেকে নাট-বল্টু খুলে পড়ছে। তিনি সঙ্গে সঙ্গেই উড়ালসড়কের কাজ বন্ধ করে দিতে বলেন। গণেশ টকিজ ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। পরের দিন কীভাবে ও কখন যথেষ্ট সতর্কতা নিয়ে কাজ হবে, সেই পরিকল্পনা করেন। কিন্তু তার কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি খবর পান যে, ভেঙে পড়েছে উড়ালসড়ক। এর পর তিনি জানতে পারেন যে, আইভিআরসিএল-এর কর্মকর্তাদের পুলিশ খুঁজছে। সেই কারণেই তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে শহরের বাইরে তার এক পরিচিতর কাছে আশ্রয় নেন।

যদিও ওই সংস্থার গ্রেফতারকৃত কর্মকর্তাদের জেরা করে সম্পূর্ণ অন্য তথ্য মিলেছে বলে অভিযোগ গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের। তারা জানিয়েছেন যে, ঘটনার দিন সকালে কর্তব্যরত সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার শ্যামল মান্নার কাছ থেকে তিনি জানতে পারেন যে, উড়ালসড়কের ৪০ নম্বর থাম থেকে খুলে পড়েছে নাট-বল্টু। তিনি কয়েকজন শ্রমিককে নিয়ে নিজেই নাট-বল্টুগুলি ঝালাই করে লাগিয়ে দেন।

এই বিষয়ে সংস্থার গ্রেফতারকৃত এজিএম (প্রোজেক্ট) তন্ময় শীলের দাবি, নিলয় ফোন করে তাকে আশ্বস্ত করে বলেন, এবার ঢালাইয়ের কাজ চললে কোনো অসুবিধা নেই। সেই কারণে তিনিও ইঞ্জিনিয়ার শ্যামলকে কাজ চালানোর নির্দেশ দেন। শ্যামলেরও দাবি, নিলয় তাকেও ঢালাইয়ের কাজ চালিয়ে যেতে বলেছিলেন। তাই তন্ময় শীলের পর উড়ালসড়ক বিপর্যয়-কাণ্ডে নিলয় রায় আরো একজন 'কি-পার্সন' বলে ধারণা গোয়েন্দাদের।

এমনকী, উড়ালসড়ক ভেঙে পড়ার পরও যে নিলয় ঘটনাস্থলে ছিলেন, সে দাবিও করেছেন আইভিআরসিএল-এর গ্রেফতারকৃত ইঞ্জিনিয়াররা। অভিযোগ, চোখের সামনে এত মানুষের মৃত্যু ঘটতে দেখে নিলয় ঘটনাস্থল ছেড়ে পালিয়ে যান। অবশ্য মুখোমুখি জেরার পর ভেঙে পড়ে তার বিরু‌দ্ধে ওঠা অভিযোগ স্বীকার করে নেন নিলয়।-সংবাদ প্রতিদিন।
৮ এপ্রিল, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে