আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে মুসলিম ভোটাররা বড় ফ্যাক্টর। তাদের ওপরই নির্ভর করছে নির্বাচনী ফলাফল। তাই মুসলিম ভোটের দিকে চেয়ে আছেন সব রাজনৈতিক দলের নেতারা। সব দলই মুসলিম ভোটারদের নিজেদের দিকে টানতে প্রচারে জোর দিচ্ছেন মুসলিম অধ্যুষিত জেলাগুলোতে।
গতবারের নির্বাচনে পরিবর্তনের হাওয়ায় শামিল হয়ে মুসলিমদের একটা বড় অংশই তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট দিয়েছেন। এবারও বেশিরভাগ মুসলিমই তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট দেবেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
এবারের নির্বাচনে ২৮ শতাংশ মুসলিম ভোটারই হবেন অনেক ক্ষেত্রেই নির্ণায়ক শক্তি। এক হিসাবে দেখা গেছে, রাজ্যের ২৯৪টি আসনের মধ্যে ১২৫টিতেই মুসলিমদের হাতেই জয়-পরাজয়ের চাবিকাঠি।
উত্তরবঙ্গের ৫৩টি ও দক্ষিণবঙ্গের ৭২টি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত কেন্দ্রে মোট ভোটারের ২৬ থেকে ৭০ শতাংশই মুসলিম। ৫০ শতাংশের বেশি মুসলিম ভোটার রয়েছে এমন বিধানসভা আসনগুলো হলো মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলা (৮৬.৩৫ শতাংশ), জলঙ্গি (৮০ শতাংশ), কান্দি (৫৮.৮৬ শতাংশ), মালদহের রতুয়া (৭৭ শতাংশ), হরিশ্চন্দ্রপুর (৭২.৬১ শতাংশ), চাঁচল (৭০ শতাংশ), বীরভূমের নলহাটি (৬৯.০৩ শতাংশ), দক্ষিণ ২৪ পরগণার ক্যানিং পূর্ব (৬৩.৫০ শতাংশ), নদীয়ার করিমপুর (৫৯ শতাংশ) ও চাপড়া (৫৮ শতাংশ)।
মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে সংখ্যালঘু ভোটের পুরোটাই যায় কোনো দল বা জোটের দিকে। ভাগাভাগি খুব একটা হয় না। ২০০৬ সাল পর্যন্ত মুসলিম ভোটের বড় অংশ ছিল বামদের পক্ষে। তবে রাজ্যে জমি অধিগ্রহণবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে মুসলিম ভোটে ভাগ বসাতে শুরু করে তৃণমূল কংগ্রেস। এরপর রিজানুর রহমানের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর এবং সাচার কমিটির রিপোর্ট প্রকাশের ফলে বামদের সঙ্গে মুসলিম ভোটারদের দূরত্ব বেড়ে গিয়েছিল। তারই সুফল তুলেছিলেন মমতা ব্যানার্জি।
ফলে ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকে শুরু করে ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত সংখ্যালঘু মুসলিমদের বড় অংশের সমর্থন পেয়ে এসেছে তৃণমূল কংগ্রেস। গত বিধানসভা নির্বাচনে ৭০টি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকাগুলো থেকে তৃণমূল কংগ্রেস ও কংগ্রেস জোট ৯৪টি আসন জিতেছিল। তবে এবারের নির্বাচনে বাম ও কংগ্রেস জোট প্রার্থীরা মুখ্যমন্ত্রীর সংখ্যালঘু উন্নয়নে ব্যর্থতাকেই হাতিয়ার করে প্রচার চালিয়েছেন।
এটা ঠিক যে, গত ৫ বছরে মমতা ব্যানার্জি সংখ্যালঘু উন্নয়নে বিস্তর প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তা কার্যকর হয়নি। আর তাই অনেক মুসলিম নেতা মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির ওপর ক্ষিপ্ত।
অলবেঙ্গল ইমাম ও মুয়াজ্জিন সোসাইটির প্রেসিডেন্ট রফিকুল ইসলাম বলেছেন, মুসলিম সমপ্রদায়ের একটা বিরাট অংশ এ ব্যাপারে অজ্ঞ যে, মুখ্যমন্ত্রী মুসলিমদের জন্য অনেক কিছু করেছেন বললেও আদতে তিনি করেছেন খুবই অল্প কিছু। শুধু রফিকুল ইসলামই নন, অনেক মুসলিম নেতাই মনে করেন, প্রতিশ্রুতি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মুসলিমদের বোকা বানাচ্ছেন।
জামাত-ই-ইসলামি হিন্দের প্রেসিডেন্ট মহম্মদ নুরউদ্দিন বলেন, তিনি হজে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন, কিন্তু সেই ব্যবস্থা শুধু বড়লোকদের জন্য। গরিবদের জন্য উনি কী করেছেন?
মহম্মদ কামারুজ্জামানের অভিযোগ, ১০ হাজার মাদরাসা বানিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। কিন্তু ৫ বছরে মাত্র ২৩৫টি মাদরাসা তৈরি হয়েছে।
১২ এপ্রিল, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএস