আন্তর্জাতিক ডেস্ক : তেল উৎপাদনের পরিমাণ কমিয়ে আনার জন্য কাতারের রাজধানী দোহায় অনুষ্ঠিত ওপেক সম্মেলন সৌদি আরবের বাধার কারণে কোনো ফলাফল ছাড়াই শেষ হয়েছে। দোহা বৈঠক শেষে রুশ জ্বালানি মন্ত্রী অ্যালেক্সান্ডার নাভাওক বলেছেন, আমি আশা করেছিলাম, কেবলমাত্র আলোচনা নয় বরং একটি চুক্তি সইয়ের মধ্য দিয়ে বৈঠক শেষ হবে। তিনি বলেন, সব দেশ তেল উৎপাদনের পরিমাণ কমিয়ে আনার পক্ষে মত দেবে ভেবেই দোহায় এসেছিলাম। কিন্তু কেবল সৌদি আরবের বিরোধিতার কারণে সব কিছু ভেস্তে গেছে।
এদিকে, ইরানের তেলমন্ত্রী জাঙ্গানেহ এর আগে বলেছিলেন, নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তারা তেল উৎপাদন ও বিক্রি বাড়িয়ে দেবে। তিনি বলেন, কেবল তখনই তেল উৎপাদনের পরিমাণ কমিয়ে আনা হবে যখন তাদের তেল উৎপাদনের পাওনা কোটা পূরণ হবে। কারণ এতদিন অন্যায় নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরান তার কোটা পূরণ করতে পারেনি।
দোহা বৈঠকে ইরান অংশ নেয়নি। বৈঠকের আগে সৌদি কর্মকর্তারা বলেছিলেন, ইরানের উপস্থিতি ছাড়া তারা কোনো চুক্তিতে সই করবে না। অর্থাৎ তেল উৎপাদনের পরিমাণ কমিয়ে আনার জন্য সৌদি আরব ইরানের ওপর চাপ দিচ্ছে। অথচ এর আগে সৌদি আরব তার জন্য নির্ধারিত কোটার বাইরেও অতিরিক্ত তেল উৎপাদন করায় বিশ্বে নিজিরবিহীনভাবে তেলের দাম পড়ে যায়।
সৌদি কর্মকর্তারা এও বলেছিলেন, তেলের দাম যদি ব্যারেল প্রতি ২০ ডলারের নিচে নেমে আসে তাহলেও তাদের কিছু আসে যায় না এবং অতিরিক্ত তেল উৎপাদন করেই যাবে। সৌদি আরবের এ ধরণের স্বেচ্ছাচারী নীতি থেকে বোঝা যায়, ইচ্ছে করে বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কমিয়ে আনার পেছনে রিয়াদের অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সৌদি আরবের এ নীতির কারণে তেল উৎপাদনকারী সব দেশই ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ অবস্থায় তেলের দাম পড়ে যাওয়ায় উৎপাদনকারী কোন্ দেশ লাভবান হয়েছে কিংবা কোন্ দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বিশ্ব তেলের বাজারের ভবিষ্যতই বা কি সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, দীর্ঘদিন পর ইরান তেলের বাজারে প্রবেশ করায় যারা ক্ষতির মুখে পড়বে তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের আরব দেশ। কারণ নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার ফলে ইরানের তেলের ক্রেতারা আবারো ইরানের দিকে ফিরে আসতে শুরু করেছে। ফলে সৌদি আরবসহ আরো কয়েকটি দেশ ক্রেতা হারাচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কমে যাওয়ায় রাশিয়ার অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কারণ রাশিয়ার আয়ের অর্ধেক আসে তেল বিক্রি বাবদ যদিও দেশটি ওপেকের সদস্য নয়। তেল উৎপাদনকারী অপর দেশ ভেনিজুয়েলার জন্যও তেলের মূল্য বাড়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
সৌদি আরবের চাপের মুখে এক বছর আগে ওপেক তেল উৎপাদনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ২০১৪ সালের নভেম্বরের বৈঠকে ওপেকের সদস্য দেশগুলো দৈনিক তেল উৎপাদনের পরিমাণ তিন কোটি ব্যারেল বজায় রাখার কথা জানায়। কিন্তু বর্তমানে তেলের দর কমে যাওয়ায় এবং দোহা বৈঠক ব্যর্থ হওয়ায় ওপেক ও ওপেক বহির্ভূত দেশগুলোর মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তেলের দাম কমে যাওয়ায় কিছু দেশ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তেমনি চীন ও জাপানের মতো ভোক্তা দেশগুলো ব্যাপকভাবে লাভবান হচ্ছে। আর এসব কিছুর জন্য সৌদি নীতিই দায়ী।-আইআরআইবি
১৮ এপ্রিল, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই