আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভূমধ্যসাগরে ডুবে যাওয়া নৌকা থেকে উদ্ধার অভিবাসীদের কার্গো জাহাজে করে গ্রিসের এক দ্বীপে নেয়া হচ্ছে -বিবিসি
পাঁচ শতাধিক শরণার্থী নিয়ে মিসর থেকে ইতালি যাওয়ার পথে সোমবার ভূমধ্যসাগরে ডুবে গেছে চার নৌকা। এর মধ্যে ৪১ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার ব্যক্তিদের বরাত দিয়ে বিবিসি অনলাইন সোমবার এ তথ্য দিয়েছে।
আজারবাইজানভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আজেরেই প্রেস এজেন্সি (এপিএ) জানিয়েছে, ডুবে যাওয়া শরণার্থীদের ১৬৯ জনের লাশ পাওয়া গেছে। মাত্র ২৯ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। বাকিরা নিখোঁজ রয়েছেন। আশংকা করা হচ্ছে তারাও মারা গেছেন।
উদ্ধারকারীরা জানান, নৌকায় পাঁচ শতাধিক যাত্রী ছিলেন। প্রায় সবাই ছিলেন পূর্ব আফ্রিকার কয়েকটি দেশের (সোমালিয়া, ইথিওপিয়া, ইরিত্রিয়া) অধিবাসী। মানব পাচারকারীরা তাদের মিসর থেকে ইতালি নিয়ে যাচ্ছিল। মাঝে উত্তাল সমুদ্রে তাদের ঠাসাঠাসি নৌকাগুলো ডুবে যায়। পরে উদ্ধারকর্মীরা তাদের উদ্ধার করে কার্গো জাহাজে করে গ্রিসের কালামাতা দ্বীপে নিয়ে আসে।
তারা বলছেন, বাকিরা সবাই মারা গেছেন। এর আগে বাংলাদেশ সময় বিকেলে প্রথম এ খবর দেয় বিবিসির আরবি সংস্করণ।
মিসরে নিযুক্ত সোমালিয়ার রাষ্ট্রদূতের বরাত দিয়ে তারা জানায়, চার শতাধিক যাত্রী নিয়ে চার নৌকা ডুবে গেছে। পরে ইতালির প্রেসিডেন্ট সার্গিও মেটারেল্লাও নৌকাডুবির বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি। তবে রাত ১টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গ্রিস, ইতালি, মিসর, সোমালিয়া কিংবা অন্য কোনো রাষ্ট্রই নিহত ও উদ্ধারের প্রকৃত সংখ্যা নিশ্চিত করেনি। ওই সময়ে বার্তা সংস্থা এএফপিও জানায়, ১৬৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
নৌকাডুবির ঘটনায় সোমালিয়ার প্রেসিডেন্ট হাসান শেখ মোহাম্মদ ও স্ব-ঘোষিত সোমালিল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট শোক জানিয়েছেন।
ওয়াশিংটন পোস্ট জানায়, মিসরে থাকা সোমালিয়ার এক নারী বলেন, তার তিন স্বজন বৃহস্পতিবার ওই নৌকায় ইউরোপের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন। তারাও মারা গেছেন।
সোমালিয়ার স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের বরাত দিয়ে মেইল অনলাইন জানিয়েছে, সোমালিয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সোমালি ভাষায় হাতে লেখা নিহতদের তালিকা অনেকেই প্রকাশ করেছেন।
ইতালির প্রেসিডেন্ট সার্গিও মেটারেল্লা জানিয়েছেন, নৌকাডুবিতে কয়েকশ’ মানুষ মারা গেছেন বলে তারা ধারণা করছেন।
তিনি আরও জানান, ভূমধ্যসাগরে আবারও দুর্ঘটনা ঘটল। এ থেকে ইউরোপকে শরণার্থীদের অভিবাসন নিয়ে ভাবা উচিত।
উদ্ধারকারী সংস্থা এসওএস মেডিটেরানির বরাত দিয়ে বিবিসি বলছে, এর আগে ভিন্ন ঘটনায় লিবিয়ার উপকূল থেকে ১০৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া লাশ উদ্ধার করা হয়েছে ছয়জনের।
এসওএস মেডিটেরানি বলছে, পুরনো, ব্যবহার অনুপযোগী ও প্রায় অচল ইঞ্জিনের নৌকাগুলো ছিল শরণার্থীতে ঠাসা। প্রায় সবাই ছিলেন সোমালিয়ার নাগরিক। তবে গাম্বিয়া, গিনি বিসাউ, নাইজেরিয়া এবং ইথিওপিয়ার শরণার্থীও ছিলেন নৌকায়। রয়টার্স বলছে, লিবিয়া উপকূলে উদ্ধার ব্যক্তিদের ইতালির দ্বীপ লামপেডুসাতে রাখা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসীবিষয়ক সংস্থার তথ্যানুযায়ী, গত সপ্তাহে অন্তত ৬ হাজার শরণার্থী লিবিয়া থেকে ইতালির উদ্দেশে যাত্রা করেন। আশ্রয়প্রার্থী ১ লাখ মানুষের স্রোতের মধ্যে তারা ছিলেন। বিবিসি বলছে, ভূমধ্যসাগরে উদ্ধার অভিযান বন্ধ করা এবং অবহেলায় মৃত্যুর অভিযোগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নীতিনির্ধারকদের সমালোচনা করা হচ্ছে। সর্বশেষ প্রায় এক বছর আগে মাছ ধরা নৌকায় সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে ৮০০ মানুষের প্রাণহানি ঘটে। -যুগান্তর
১৯এপ্রিল২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/এএম