মঙ্গলবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৬, ১১:০৩:১৫

আমেরিকার কাছে কী চায় সৌদি?

আমেরিকার কাছে কী চায় সৌদি?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সৌদি-মার্কিন সম্পর্কে টানাপড়েনের মধ্যেই আগামী বুধবার রিয়াদ সফরে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। ৮০ বছর বয়সি সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজের সাথে এক ব্যক্তিগত সাক্ষাত করতে তিনি। এই সফরের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে- উভয় দেশের মধ্যে বেড়ে চলা উত্তেজনা কমিয়ে আনা। দুই দেশ একে অপরের কাচে আসলে কী চায়?

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে আমাদেরকে ফিরে যেতে হবে ৭০ বছর আগে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট সৌদি আরবের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। সৌদি আরব মধ্যপ্রাচ্যের মতো অস্থিতিশীল এলাকায় তার আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সাহায্য চায়। তারা চেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র তাদের পাশে থাকুক। বিশেষ করে তাদের দীর্ঘদিনের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী শিয়া প্রধান ইরানের সাথে তাদের সম্ভাব্য সংঘাতের সময়ে।

পাশে থাকার মানে বেশিরভাগগ ক্ষেত্রে সামরিক সহযোগিতা। ইরানকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সৌদি আরব সবসময় যুক্তরাষ্ট্রকে পাশে চেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও সুন্নিপ্রধান সৌদি আরবকে এক্ষেত্রে অস্ত্রশস্ত্র ছাড়া বুদ্ধিবৃত্তিক দিক থেকেও বেশ সহযোগিতা করেছে। অতি সম্প্রতি ইয়েমেন যুদ্ধের জন্য সৌদিরা মার্কিনিদের কাছে বৃদ্ধিবৃত্তিক সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণ চাইলে মার্কিনিরা সৌদিদের সার্বিক সহযোগিতা করেছে।

আশা করা হচ্ছে এই সপ্তাহের সফরেও যুক্তরাষ্ট্র এই এলাকায় ব্যালিস্টিক ক্ষেপনাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করবে এবং ইরান ও অন্যান্য দেশ থেকে সাইবার আক্রমণ প্রতিহত করতে সৌদি আরবের জন্য নতুন সহযোগিতা প্রদান করবে।

এর বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র কী চায়? সম্প্রতি যদিও তাদের তেলের রিজার্ভ মার্কিনিদের কাছে গুরুত্ব হারিয়েছে তারপরও যুক্তরাষ্ট্র চায় সৌদি আরবের সাথে একটা ভাল সম্পর্ক বজায় রাখতে। কারণ এর মাধ্যমে তারা মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে চায়। সৌদি আরব আল-কায়েদা এবং অতি সম্প্রতি আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একত্রে কাজ করেছে। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের অবসানেও যুক্তরাষ্ট্র সৌদির সহায়তা চায়।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ওবামার পরে কে আসছেন ক্ষমতায়? এটা সত্য যে সৌদিরা ওবামা অধ্যায় খতম করে দিতে চায়। যদিও এরপরও তাদের উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে। তারা উদ্বিগ্ন এই ভেবে যে, এরপর ক্ষমতায় কে আসছে। বিশেষ করে যদি ডোনাল্ড ট্রাম্প কিংবা সিনেটর টেড ক্রুজ পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, তাহলে তাদের উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

কেননা, ট্রাম্প ইতোমধ্যেই সরাসরি সৌদি আরবের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। গত মাসে নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন যে, সৌদি আরব যতক্ষণ না ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আরো শক্ত অবস্থান দেখাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি সৌদি আরব থেকে তেলের সব ধরনের লেনদেন বন্ধ করে দেবেন।

এদিকে সিনেটর টেড ক্রুজ গত ফেব্রুয়ারি মাসে এক নির্বাচনী বিতর্কে বলেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের  বন্ধুদের হিসেবে রাখা উচিত যারা এমন জিহাদী গোষ্ঠীকে অর্থায়ন করে না- যারা আমাদেরকেই হত্যা করতে চায়। আর সৌদি আরবের বেলায় আমাদের উচিৎ ভালভাবে খোঁজ খবর নেয়া এবং তাদের আসল চাপ প্রয়োগ করা।

সৌদি আরবের প্রেক্ষাপটে হিলারি ক্লিনটন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতি সৌদিদের জন্য সুবিধাজনক হলেও হতে পারে।

অন্যদিকে ডেমোক্রেটিক পার্টির মনোনয়নের আরেক প্রার্থী ভারমন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স সৌদিদের কাছে একবারেই অপরিচিত। তাই সৌদিরা হয়তো হিলারিতেই স্বস্তিবোধ করবেন। সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস
১৯ এপ্রিল ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে