সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত: আর মাত্র দুই দিন পরেই দিল্লির দাদা এবং অঙ্গরাজ্যের দিদির অগ্নিপরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ্যে এসে যাবে। রামায়ণে সীতাকে অগ্নিপরীক্ষা দিতে হয়েছিল। কিন্তু দিদির পরীক্ষা তার থেকেও ভয়ঙ্কর। কারণ দিদি জীবনে কী কী পরীক্ষা দিয়েছেন তা কেউ জানেন না। আর দিল্লির দাদা নরেন্দ্র মোদির স্নাতক পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে সারা দেশে বিতর্ক চলছে। পশ্চিমবঙ্গ, আসামে নির্বাচন হয়ে গেছে। দক্ষিণ ভারতের তিনটি রাজ্যের ভোট আজ সোমবার। দাদা যেমন ভারতবর্ষের ১২৫ কোটি মানুষকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে দুই বছর আগে ক্ষমতায় এসেছিলেন তার একটিও কার্যকর হয়নি। পাঁচ বছরে দিদিরও একটা প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি। উল্টো রাজ্যটাকে তিনি অবধ্য মেলামেশার রাজধানী বানিয়ে ফেলেছেন। এ জন্য তার কৃতিত্ব একটু বেশি।
পাঁচটি রাজ্যেই দাদার ঝুলিতে যে বড় শূন্য আসবে তা নিয়ে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের কোনো দ্বিমত নেই। অনেকেই মনে করেন, দিদির অনুরোধ রাখতে গিয়ে সারদা ও রোজভ্যালির মতো চিটফান্ডের তদন্ত রাজ্যের ভোটাররা ভালোভাবে নেয়নি। ভালোভাবে নেয়নি তার ১৬ জন নেতার প্রকাশ্যে ঘুষ নেওয়ার ঘটনাও। সাত দফায় ভোট দেওয়ার আগে এগুলো ভোটারদের মনে ধাক্কা দিয়েছে। আর সন্ত্রাস? কোনো বিরাম নেই। গোটা পশ্চিমবঙ্গে গত সাত দিনে ছাত্র থেকে শিক্ষক, খুনের ঘটনা ঘটেছে। এসব নজির আগে কখনো ছিল না। তৃণমূলের হাতে অত্যাচারিত হয়নি এমন জেলা পশ্চিমবঙ্গে নেই।
অপরদিকে দিদি বোধহয় বুঝতে পেরেছেন তার পক্ষে ক্ষমতায় আসা কঠিন। তাই এক ঘণ্টার জন্য সচিবালয়ে গিয়ে বিভিন্ন দফতরের সচিবদের বলে এসেছেন, সরকারি ফাইল পোড়ান, সরিয়ে ফেলুন। এ অভিযোগ করেছেন জোটের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী সূর্যকান্ত মিশ্র। দাদা নরেন্দ্র মোদি চেষ্টা ও পরিকল্পনা করছেন আসামে বদরুদ্দিনের দলের সঙ্গে সমঝোতা করে সরকার গড়ার। সে ক্ষেত্রে তিনি কতটা সফল হবেন বলা মুশকিল। আসামের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ বলেছেন, ১৩০টির মধ্যে অধিকাংশ আসন পেয়েই তারা সরকার গঠন করবেন। দাদা বিবাহিত হয়েও নির্বাচনের মনোনয়নের সময় তা অস্বীকার করেছিলেন। সাতের দশকের যুবকংগ্রেস নেতা রণব্রত ঘোষকে (রুনু) গোপনে বিয়ে করেছিলেন বঙ্গেস্বরী। সে কথাও তিনি গোপন করেছিলেন। এখানেও দুজনের মধ্যে হুবহু মিল।
উল্লেখ্য, তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা আর মোদির সম্পর্ক খুবই হৃদ্যতাপূর্ণ। ২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গার পর মোদির জন্মদিনে চেন্নাই থেকে তিনি ফুলের তোড়া নিয়ে উড়ে গিয়েছিলেন গুজরাটে। সুতরাং এ পাঁচটি রাজ্যের নির্বাচনে বিজেপি ও আরএসএস যতই হিন্দুত্ববাদী প্রচার করুক না কেন, তাদের কপালে কি শিকে ছিঁড়বে? অভিজ্ঞ মহলের মতে, না। সে ক্ষেত্রে ভারতের অ-বিজেপি দলগুলো একই সুরে মোদিকে সরানোর ব্যাপারে জোট বাঁধছে। বারানসিতে গিয়ে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার বলে এসেছেন, মোদি হঠাও... দেশ বাঁচাও। এ পাঁচটি রাজ্যসহ সারা দেশে যা কিছু ঘটছে, মানুষ চুলচেরা বিচার করেই রায় দেবেন সে কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। অপেক্ষা এখন ১৯ মে পর্যন্ত। তিনি ঠারেঠোরে কংগ্রেসকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে চলেছেন। মোদি পাশে পেয়েছেন সুব্রামনিয়াম স্বামীকে। বিজেপিরও অনেকে বলছেন স্বামীকে রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে রাজ্যসভায় নিয়ে আসা উচিত হয়নি।-বিডি প্রতিদিন
লেখক : ভারতীয় সাংবাদিক
১৬ মে,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ