আন্তর্জাতিক ডেস্ক : প্রায় ছয় মাস সৌদি আরবে কাটানোর পর মঙ্গলবার দেশে ফিরে এসেছেন ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট আবদ রাব্বু মানসুর হাদি।
দেশটির রাজধানী সানায় সৌদি নেতৃত্বাধীন উপসাগরীয় জোটের সঙ্গে যখন শিয়াপন্থী হৌথিদের তীব্র যুদ্ধ চলছে, তখন হঠাৎ করেই দেশের মাটিতে পা রাখেন তিনি।
সংবাদসূত্র: আল-জাজিরা বার্তা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, প্রায় ছয় মাস সৌদি আরবের রিয়াদে থাকার পর হাদির এই প্রত্যাবর্তনে উল্লসিত তার সমর্থকরা। গত বছর সেপ্টেম্বরে শিয়া হৌথি বিদ্রোহীরা রাজধানী সানা দখলে নেয়ার পর পালিয়ে নিজ জন্মস্থান এডেনে চলে যান হাদি। পরে মার্চের দিকে রিয়াদে গিয়ে আশ্রয় নেন তিনি।
একটি সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, ঈদুল আজহা উদ্যাপন করতেই এডেনে ফিরেছেন ইয়েমেনি প্রেসিডেন্ট। ঈদের পর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্ক যাবেন। তবে সেই অধিবেশন শেষ করে তিনি এডেনেই ফিরবেন কিনা, তা জানানো হয়নি। এর আগে গত সপ্তাহে হাদি সরকারের প্রধানমন্ত্রী খালেদ বাহাহ্ এবং সাত মন্ত্রী এডেনে ফিরে আসেন।
এদিকে, হাদি যেদিন এডেনে পা ফেলেন, সেদিনই ইয়েমেনের রাজধানী সানায় হৌথিদের ওপর সৌদি জোটের চালানো বিমান হামলায় অন্তত ২০ জন নিহত হন। নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, হামলায় নিহতদের কেউই কোনো সামরিক তৎপরতার সঙ্গে জড়িত, এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
এদিকে, সানার সব সরকারি ভবন দখল করে রাখা হৌথিদের উৎখাত করার আগপর্যন্ত বিমান হামলা চলবে বলে জানিয়েছে সৌদি জোট। এর একদিন আগেই জোটের হামলায় ইয়েমেনের রাজধানীতে একই পরিবারের ১৮ জনসহ নিহত হন ৫০ জন।
গত চার দিনে সানাসহ ইয়েমেনের বিভিন্ন এলাকায় আন্তর্জাতিক জোটের হামলায় ২৩৬ জনের বেশি মানুষ মারা গেছেন। চলতি বছরের মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন সময় সৌদি হামলায় মারা গেছে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ। এই বিপুল প্রাণহানি সত্ত্বেও বন্দরনগরী এডেনের পর রাজধানী সানাকে হৌথিমুক্ত করার সময় এসেছে উল্লেখ করে সেখানে বিমান হামলা আরো বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয় জোটের পক্ষ থেকে। সৌদি জোটের সামরিক মুখপাত্র জেনারেল আহমেদ আনসারি বলেন, 'আমরা সানায় হৌথিদের আগ্রাসন বন্ধে বিমান হামলা জোরদার করেছি। এডেনের মতো সানাকেও সুরক্ষিত করব আমরা; যাতে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকার ক্ষমতা গ্রহণের মধ্যদিয়ে ইয়েমেনে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে পারে।'
উল্লেখ্য, হৌথিরা মূলত সন্ত্রাসবাদী হিসেবে ঘোষিত শিয়াদের সশস্ত্র সংগঠন 'আনসার আল্লাহ'র একটি অংশ। ধর্ম ও সম্প্রদায়গত দিক থেকে হৌথিরা শিয়া মতবাদের উপশাখা জাইদিবাদের অনুসারী। ইয়েমেনের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশই জাইদিবাদের অনুসারী এবং এরা দেশটির উত্তরাঞ্চলে এদের বাস। রাজনৈতিক মতাদর্শের দিক দিয়ে হৌথিরা আমেরিকা ও আল-কায়েদাবিরোধী। এছাড়া সৌদি আরব, আরব আমিরাত, কাতার ও অন্যান্য পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে হৌথিদের শত্রুভাবাপন্ন সম্পর্ক। শিয়াপ্রধান রাষ্ট্র ইরান হৌথিদের সহযোগিতা করে বলে অভিযোগ রয়েছে, যদিও ইরান তা অস্বীকার করেছে।
২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমএন