আন্তর্জাতিক ডেস্ক : এ যেন রুপকথার গল্প! এবার সৌদিতে হজ করতে এসেছেন সন্তানহারা এক ফিলিস্তিনি মা। আর হজে এসেই কিনা এক ছেলেকে খুঁজে পেলেন তিনি। দীর্ঘ পাঁচ বছর পর ছেলেকে দেখতে পেয়ে ওই মায়ের যে কি আনন্দ! তা চোখে না দেখলে উপলব্ধি করা কঠিন।
গত পাঁচ বছর আগে গাজা উপত্যকা ছেড়ে জার্মানিতে পাড়ি জমিয়েছিলেন রেদা। সেখানে তিনি মেডিসিনের ওপর অধ্যায়ন করছেন। এবার সৌদি সরকার ফিলিস্তিনের শহীদ জননীদের হজ করানোর এক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিলেন। এই পরিকল্পনার আওতায় মুফতে হজ করার আমন্ত্রণ পান রেদা। কেননা ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে তার এক ছেলে শহীদ হয়েছিল।
সবমিলিয়ে ১১ ছেলেমেয়ের গর্বিত জননী এই রেদা। তিনি দেশের সেবায় আত্মনিয়োগের করতে তাদের মানুষের মত মানুষ করে গড়ে তুলেছিলেন। এই কাজে কোনোরকম গাফিলতি ছিল না তার। কিন্তু ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে ছেলে নিহত হওয়ার পর মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। শেষে পরিবার ছেড়ে পাড়ি জমান সুদূর ইউরোপে। সেখানে গিয়েও দুই ছেলের কথা ভুলতে পারেন না। তারপরও মনকে শান্তনা দেন নানাভাবে। তার শহীদ সন্তানদের যেন বেহেশতে ঠাঁই হয় আল্লাহর কাছে সারাক্ষণ এই দোয়াই করেন।
এর মধ্যেই হজের জন্য সৌদি বাদশাহর আমন্ত্রণ পান ওই ফিলিস্তিনি মা। সৌদি আতিথেয়তার অর্থ হচ্ছে হজ করতে তার কোনো পয়সাকড়ি লাগবে না। যাতায়াত থেকে শুরু করে হোটেলে অবস্থানসহ তার যাবতীয় খরচ বহন করছে সৌদি সরকার। তিনি নির্ধারিত সময়ে মিশর হয়ে সৌদি পৌঁছান।
জেদ্দার কিং আবদুল আজীজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান কয়েকজন সৌদি তরুণ। সেখানে সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ করার পর বাসে করে পবিত্র নগরী মক্কায় পৌঁছান। সেখানে হোটেলে স্বেচ্ছাসেবী কর্মী তাদের স্বাগত জানান হয় জমজম কুপের পানি দিয়ে। জীবনে প্রথমবারের মত কাবা জিয়ারত করে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন রেদা। কিন্তু তিনি কি তখন জানতেন মক্কায় আরো কত বড় বিস্ময় অপেক্ষা করছে তার জন্য!
হোটেলে ওঠার পরদিন সকালে এক অপরিচিত নাম্বার থেকে তার মোবাইলে ফোন আসে। ফোন রিসিভ করার পর অপরিচিত এক পুরুষ কণ্ঠ অপরপ্রান্ত থেকে বলতে থাকেন,‘মা, কেমন আছ? আমি এখন তোমার অনেক কাছে পৌঁছে গেছি। আহা, কতদিন পর তোমাকে দেখব।’
প্রথমে তো দ্বিধায় পড়ে গিয়েছিলেন রেদা। তাই এক মিনিট নীরব থাকেন এবং বুঝতে চেষ্টা করেন কে তাকে মা বলে ডাকছে। মোবাইলে তখন বেজে চলেছে,‘মা, আমি তো হজ করতে এসেছি।’ এরপরও বিশ্বাস হচ্ছিল না তার। তিনি ফোন রেখে দেন। এদিকে মা ফোনে কথা না বলায় সোজা হোটেলে চলে আসেন ওই যুবক। হোটেলের হল রুম দিয়ে যখন নিজের ছেলেকে প্রবেশ করতে দেখেন তখন নিজের চোখকেও যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না রিদা। ততক্ষণে তার দু চোখ বেয়ে নেমে এসেছে আনন্দধারা। সঙ্গে সঙ্গে দু হাত তুলে আল্লাহর শোকর আদায় করেন।-বাংলামেইল
২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমএন