আন্তর্জাতিক ডেস্ক : জাপানের এক চিড়িয়াখানায় মারা গেছে বিশ্বের সবচাইতে জনপ্রিয় হাতিটি। ‘হানাকো’ নামের এ হাতির বয়স ৬৯ বছর। তার মৃত্যুতে দেশ দেশটির নাগরিকদের মাঝে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। অবশ্য এর কারণ পশু প্রেম নয়, দেশটির সুখ ও সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হত এই হাতিকে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৯ সালে উপহার হিসেবে জাপানকে দিয়েছিল থাইল্যান্ড সরকার। তখন হানাকোর বয়স ছিল মাত্র দু বছর। ১৯৫৪ সালে তাকে টোকিওর ইনোকাশিরা পার্ক চিড়িয়াখানায় স্থানান্তরিত করা হয়। আমৃত্যু সেখানেই ছিল এই মাদী হাতিটি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানের শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রতীকে পরিণত হয়েছিল হানাকো। দেশটির পর্যটন শিল্পেও এর বেশ অবদান রয়েছে। হাতিটিকে দেখার জন্যই অনেক পর্যটক জাপানে যান। শুধু কি তাই, এই হাতিটিকে নিয়ে একটি উপন্যাস লেখা হয়েছে। নির্মিত হয়েছে টিভি সিরিয়াল। এ থেকেই বোঝা যায় বিশ্ব জুড়ে কতটা জনপ্রিয় ছিল সে।
তবে পরিবেশবিদরা গত কয়েক বছর ধরেই বৃদ্ধ হাতিটিকে থাইল্যান্ডের পশু আশ্রয়কেন্দ্রে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল। যাতে করে জীবনের শেষ ক’টি দিন অন্য হাতিদের সাহচর্যে আরামে ও আনন্দে কাটাতে পারে পশুটি। এজন্য তারা স্বাক্ষরও সংগ্রহ করেছিল। কেননা টোকিও চিড়িয়াখানায় তার কোনো সঙ্গী ছিল না। পুরোপুরি নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করছিল হানাকো। কিন্তু জাপান সরকার এতে রাজি হয়নি।
প্রতিবছর মার্চে ঘটা করে পালিত হত তার জান্মদিন। তখন থাই দূতাবাস থেকে তার জন্য তাজা স্ট্রবেরি উপহার পাঠানো হত। কিন্তু হানাকোর শারীর ভালো না থাকায় এ বছর তার জন্মদিন পালন করা হয়নি। ফলে দেশিয় স্ট্রবেরির স্বাদ থেকে বঞ্চিত হতে হয়েছে হানাকোকে।
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে একা একা থাকতে থাকতে এক ধরনের বিষন্নতায় ভুগছিল সে। শারিরীকভাবেও বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছিল। গত কয়েক মাস ধরে খাওয়া-দাওয়াও কমে গিয়েছিল। এই অবস্থায় বৃহস্পতিবার বিকেলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে হানাকো। নিশ্চল হয়ে যায় তাকে ঘিরে চলতে থাকা যাবতীয় উন্মাদনা ও তৎপরতা। হানাকো নামের অর্থ ‘ফুল শিশু’। তবে মরার পরও শান্তি মিলছে না এই ফুল শিশুর। মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখতে হানাকোর মরদেহের ময়না তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাপান।
২৯ মে, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএম