আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আমেরিকার লস অ্যাঞ্জেলেসে এক শিক্ষককে খুন কের আত্মহত্যা করেছে এক বাঙালি। তার নাম নাম মৈনাক সরকার। পুলিশ বলছে, ‘ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, লস অ্যাঞ্জেলেসে’ (ইউসিএলএ) হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত মৈনাক সরকার। অধ্যাপক উইলিয়াম ক্লুগকে খুন করে সে আত্মহত্যা করে।
পুলিশের উদ্ধৃত দিয়ে আমেরিকার বিভিন্ন দৈনিক জানিয়েছে, গতকাল স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় ‘ইউসিএলএ’-এর ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ঢুকে পড়েন মৈনাক। তার সঙ্গে ছিল দু’টি নাইন এমএম পিস্তল। তা দিয়েই উইলিয়ামকে খুন করেন খড়গপুর আইআইটি’র প্রাক্তনী মৈনাক। পরে সে নিজেও আত্মহত্যা করেন।
ঘটনাস্থলেই মৈনাকের লেখা একটি বার্তা পান পুলিশকর্মীরা। তাতে মৈনাক মিনেসোটায় নিজের বাড়ির ঠিকানা উল্লেখ করে জানিয়েছিলেন, কেউ যেন বাড়িতে গিয়ে তার বিড়ালের দেখভাল করেন। মৈনাকের বাড়ি গিয়ে একটি ‘খতম তালিকা’ পায় পুলিশ। ওই তালিকায় উল্লিখিত এক মহিলার দেহও উদ্ধার করা হয়েছে। সম্প্রতি প্রেমিকার সঙ্গে মৈনাকের বিচ্ছেদ হয়েছিল। তবে ওই মহিলা প্রাক্তন প্রেমিকা কি না, তা এখনও জানা যায়নি।
পুলিশ জানিয়েছে, মৈনাক এক সময় উইলিয়ামের তত্ত্বাবধানে গবেষণা করতেন। কিন্তু গত ১০ মার্চ একটি ব্লগে তিনি লিখেছিলেন, ‘আমার নাম মৈনাক সরকার। আমি একজন গবেষক।... উইলিয়াম আমার সমস্ত কোড চুরি করে তা অন্য পড়ুয়াদের দিয়েছেন। ওর জন্য আমার জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছিল’। এখানেই শেষ নয়। অন্যদের ওই ‘অসুস্থ’ (উইলিয়াম) অধ্যাপকের থেকে দূরে থাকার পরামর্শও দিয়েছিলেন মৈনাক।
তবে ৩৯ বছর বয়সি এবং দুই সন্তানের পিতা উইলিয়ামের বিরুদ্ধে তথ্য চুরির অভিযোগ মানতে নারাজ সহকর্মীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক অধ্যাপক অ্যালেন গারফিনকেল বলেন, ‘উইলিয়াম খুবই নম্র এবং ভদ্র ছিলেন সব সময় অন্যদের সাহায্য করতেন।’
সোশ্যাল মিডিয়ায় মৈনাকের অ্যাকাউন্ট থেকে জানা গিয়েছে, তিনি ২০০০ সালে খড়্গপুর আইআইটি থেকে ‘এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং’এ স্নাতক হন। আমেরিকায় পাড়ি দেওয়ার আগে বেঙ্গালুরুতে একটি সফটঅয়্যার সংস্থায় কাজ করতেন। ২০০৩ সালে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোনটিক্সে’ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পান মৈনাক। তারপর ‘ইউসিএলএ’ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে গবেষণা শুরু করেন। গবেষণাপত্র জমা দেন ২০১৩ সালে।
সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট অনুসারে, বর্তমানে একটি সফটঅয়্যার সংস্থায় কাজ করতেন ৩৮ বছর বয়সী মৈনাক। ওই সংস্থার কর্ণধার মৈনাকের প্রশংসা করে একটি লেখাও সাইটে আপলোড করেছিলেন।
গতকাল হামলার সময় বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ছিলেন অধ্যাপক শুভজিৎ সেন। তিনি বলেন, ‘গতকাল সকালে ল্যাবরেটরিতে কাজ করছিলাম। তখন হামলার খবর শুনি। নির্দেশমতো প্রায় পাঁচঘণ্টা ল্যাবের মধ্যেই দরজা বন্ধ করে লুকিয়ে ছিলাম। পরে বেরিয়ে দেখি, পুলিশে ছেয়ে গিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। আজ অবশ্য ক্লাস শুরু হয়েছে।’
৩ জুন, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমএন