আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সাত বছর বয়সী এক শিশুকে নিয়ে জাপানে চলছে তোলপাড়। প্রায় সপ্তাহখানেক আগে তাকে শাস্তিস্বরূপ সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য জঙ্গলে রেখে যান বাবা-মা! এরপর নিখোঁজ হয়ে যায় ইয়ামাতো তানুকা। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ধারাবাহিক অনুসন্ধান অভিযান শেষে তাকে জীবিত ও সুস্থ অবস্থায় পাওয়া গেছে। এই এক সপ্তাহ ধরে কীভাবে টিকে ছিল ইয়ামাতো? রাত কাটিয়েছে কোথায়? এই জঙ্গলে থাকার ঝুঁকিটাইবা কী ছিল? এসব প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে বিবিসির এক প্রতিবেদনে।
পাথর ছোঁড়ার অপরাধে ইয়ামাতোকে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য জঙ্গলে রেখে আসে তার বাবা-মা। কয়েক মিনিট পরই ছেলের সন্ধানে তারা ফিরলেও ইয়ামাতো ততক্ষণে লাপাত্তা হয়ে গেছে! সামান্য একটি টি-শার্ট আর জিন্স পরা ছিল তার গায়ে। অথচ ওই জঙ্গলে রাতের তাপমাত্রা নেমে আসে মাত্র ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে! ওই এলাকাভিত্তিক নিসেকো অ্যাডভেঞ্চার সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা রস ফিন্ডলে জানান, বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে এ সময়টায় শীত বেশি থাকে সেখানে। তিনি বলেন, ‘নিসেকোর পর্বতচূড়ায় এ সময়ে তুষারপাত হয়। তবে নানায়ের ওদিকে এত ঠাণ্ডা পড়ার কথা নয়। কিন্তু এরপরও নানায়ের জঙ্গলে একটি শিশু, যার শরীরে অত মেদ নেই, তার জন্য এটাই অনেক বড় সমস্যা।
নানায়ে এলাকাজুড়ে গভীর বন। ওক আর বার্চ গাছে ভর্তি ওই এলাকা। আছে গভীর ঝোপঝাড়। সাসা নামক এক ধরনের গাছ আছে সেখানে, জানান ফিন্ডলে। তিনি আরও বলেন, সাসা অনেকটা বাঁশজাতীয় গাছ। কিন্তু খুবই মোটা। ফলে এসবের ভেতর দিয়ে চলাফেরা করাটা কঠিন। তাই অন্য দেশ যেসবকে বন মনে করে, তার চেয়ে এই এলাকার বন খুবই আলাদা।
তার মতে, ‘এখানে হাঁটাচলা করাটা খুবই কঠিন। তাই মানুষ বনে ঘোরাফেরা করে না। আপনাকে অবশ্যই এখানে কোনো পথচিহ্ন রাখতে হবে। অন্যথায়, আপনি যেকোনো জায়গায় চলে যেতে পারেন। আর একটা ছোট্ট ছেলে যে কিনা এমন গভীর জঙ্গলে আছে, তাকে খুঁজে পাওয়াটা আসলেই কঠিন হতে পারে।’ অনুসন্ধান কাজে আরও বিঘ্ন ঘটায় ব্যাপক বৃষ্টি।
কোথায় আশ্রয় নিয়েছিল ইয়ামাতো?
দেখা যাচ্ছে, ইয়ামাতো একাধারে ভাগ্যবান ও বিচক্ষণ। শুক্রবার তাকে একটি সামরিক হাটে পাওয়া যায়! শনিবার সে যেখানে নিখোঁজ হয়েছে, সেখান থেকে এ হাট প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার দূরে। এ হাট অনেকটা বড় তাঁবুর মতো। ভেতরে শীত খুব একটা ঢুকতে পারে না। পুলিশকে ইয়ামাতো জানায়, তার বাবা-মা তাকে ছেড়ে আসার পরপরই সে হেঁটে ওই এলাকায় পৌঁছায়। সে জানায়, ‘চলার পথে আমি কেবল পানি খেয়েছি। খাওয়ার আর কিছু ছিল না।’ সে ঘুমিয়েছে ওই হাটের মেঝেতে বিছানো ম্যাট্রেসে।
জঙ্গলে থাকলে কি খাবার পেত সে?
এমন সম্ভাবনা খুবই কম, বিশেষ করে বছরের এ সময়টায়, জানালেন ডেভিড নিয়েহফ। তিনি কান্তো অ্যাডভেঞ্চার্সের প্রেসিডেন্ট। তিনি জানান, ‘সবে বসন্ত শুরু হয়েছে। তাই সবে মাটি থেকে ফুঁড়ে উঠতে শুরু করেছে গাছপালা। কী খাবেন, সেটা জানার জন্য স্থানীয় জ্ঞান থাকা জরুরি। কেননা, এসব এলাকায় বিষাক্ত গাছপালাও আছে। এ ছাড়া এমনিতেও যে এখানে অনেক খাবার পাওয়া যায়, তাও নয়।’
এখন ইয়ামাতোর কী অবস্থা?
হাসপাতালের ডাক্তাররা জানান, তার ছোটোখাটো ক্ষত আছে। এ ছাড়া হাইপোথারমিয়ায়ও কিছুটা আক্রান্ত সে। ফিন্ডলে জানান, সে যেহেতু খাবার খায়নি, তার ঝুঁকি ছিল অনেক বেশি।
জঙ্গলের ভালুক কি হুমকি ছিল?
নানায়ের হোক্কাইডো জঙ্গলে বাদামি ভালুক আছে। এগুলোর উচ্চতা প্রায় ৬ ফুট ৫ ইঞ্চি। তবে এসব যে খুব বড় হুমকি ছিল, তা নয়। ফিন্ডলে বলেন, ‘তারা নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। আপনি যদি শব্দ করে চলেন, তাহলে তারা বুঝে নেবে কেউ একজন আছে। তাই তারা আপনাকে বিরক্ত করবে না, আপনার দিকে আসবেই না। কিন্তু আপনি তাদের চমকে দিলে বরং তারা ক্ষেপে যেতে পারে।
৪ জুন, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম