আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গত কয়েকদিন ধরে দিল্লি ও আরো কয়েকটি স্থানে আফ্রিকানদের ওপর হামলার ঘটনা কূটনৈতিক মহলে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলছেন, ‘এসব ঘটনা মর্মান্তিক হলেও এর পেছনে কোনো জাতি বা বর্ণবিদ্বেষ নেই।’
সুষমা স্বরাজ মনে করেন, ‘(এসব হামলার ঘটনা) নেহাতই বিচ্ছিন্ন ঘটনামাত্র। এসব সমাজ-বিরোধীদের কাজ৷ তবে সরকার এর পুনরাবৃত্তি রোধে কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
কয়েকদিন আগে দিল্লির রাস্তায় কঙ্গোর এক ছাত্র মাসুন্দা অলিভারকে পিটিয়ে মারা, আফ্রিকান নাগরিকদের ওপর একের পর এক হামলা এবং দিল্লির এক ট্যাক্সিচালকের ওপর আফ্রিকানদের পাল্টা হামলায় পরিস্থিতি ক্রমশই উদ্বেগজনক হয়ে ওঠে। আফ্রিকা মহাদেশের কূটনৈতিক মহলে দেখা দেয় তীব্র প্রতিক্রিয়া।
পরিস্থিতি যাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায় তার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ভারতে আফ্রিকান শিক্ষার্থী ও নাগরিক সম্প্রদায়ের এক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মিলিত হন৷ তিনি বলেন, ‘গণপ্রহারে কঙ্গোর ছাত্র মাসুন্দা অলিভিয়ারের মৃত্যু অত্যন্ত মর্মান্তিক৷ তবে এসব ঘটনার পেছনে জাতি বা বর্ণবিদ্বেষ ছিল না। ছিলনা কোনো অসহিষ্ণুতা। এটা পুর্বপরিকল্পিত ঘটনাও নয়৷ নেহাতই বিচ্ছিন্ন ঘটনা। সমাজ বিরোধীদের কাজ৷ অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ ভবিষ্যতে এ ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, সে বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীকে ভারতের মহানগরিগুলিতে গিয়ে সেখানে বসবাসরত আফ্রিকানদের আশ্বস্ত করতে বলা হয়েছে।’
পাশাপাশি, আফ্রিকা মহাদেশের সঙ্গে ভারতের ঐতিহাসিক সম্পর্কের কথা মাথায় রেখে এর বিরুদ্ধে এক ভবিষ্যৎ প্রাতিষ্ঠানিক কর্মপন্থা হাতে নেওয়া হচ্ছে৷ অন্যদিকে, পুলিশ প্রশাসনকে কড়া নজর রাখতে এবং কড়া ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
প্রশ্ন তোলা হয়, এসব ঘটনা যে জাতিবিদ্বেষমূলক নয়, তার প্রমাণ কি? প্রমাণ হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ কিছু সিসিটিভি ফুটেজ দেখিয়েছেন, যেখানে দেখা গেছে সাধারণ মানুষ দুষ্কৃতিদের বাধা দিচ্ছে৷ গুঞ্জন উঠেছে, কঙ্গোর ছাত্রের মৃত্যুর পর সরকার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়নি কেন ? বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিয়ে লঘু করার চেষ্টা করা হয় কেন? কেন প্রধানমন্ত্রী নীরব ছিলেন?
আফ্রিকান অভিবাসীদের পাল্টা হামলায় একজন ভারতীয় ট্যাক্সিচালক যখন আহত হন, আফ্রিকায় যখন ভারতীয়দের ওপর পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে তখনই মোদী সরকার নড়েচড়ে বসেন৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে পুলিশ দিল্লির রাস্তাঘাটে এবং আফ্রিকান নাগরিকদের আস্তানাগুলির দিকে নজরদারি বাডায়।
কথা হচ্ছে, আফ্রিকা মহাদেশের সঙ্গে ভারতের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক মেলবন্ধন এসব ঘটনায় যে ধাক্কা খেতে পারে মোদী সরকারের সেটা না বোঝার কথা নয়৷ এটাও না বোঝার কথা নয় যে, চীন এই সুযোগ হাতছাড়া করবে না। আফ্রিকার আরও বড় পরিসর কুক্ষিগত করতে পারে৷ উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি বর্তমানে আফ্রিকায় সদিচ্ছা সফরে গিয়ে ভারতে এসব হামলার তীব্র নিন্দা করে বলেছেন, ‘আফ্রিকান দেশগুলির সঙ্গে সুসম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাবার লক্ষ্যে পূর্বতন ও বর্তমান মোদী সরকারের অবস্থান একই।’
রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ও শিগগিরই যাচ্ছেন আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ সফরে। তিনিও আফ্রিকার নাগরিগদের ওপর হামলায় ক্ষোভ ব্যক্ত করেছেন। এই ইতিবাচক বার্তায় কিছুটা হলেও কাজ হয়েছে। দিল্লিতে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের কর্মসূচি স্থগিত রেখেছে আফ্রিকান শিক্ষার্থীদের একটি সংগঠন। কিন্তু রাজনৈতিক শীর্ষ ব্যক্তিদের মুখে লাগাম না থাকলে পরিস্থিতি আবারও বিগড়ে যেতে পারে৷ যেমন গোয়ার বিজেপি সরকারের পর্যটন মন্ত্রী ‘নাইজিরিয়ানদের স্বদেশে ফেরত পাঠানো উচিত' বলে মন্তব্য করেছেন। তার অভিযোগ নাইজিরিয়ানদের আচার-আচরণ নাকি আপত্তিজনক৷ মোটকথা, আফ্রিকানদের নিগ্রহের মানবিক দিক বাদ দিলেও এর কূটনৈতিক গুরুত্ব যে অপরিসীম, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।’ -ডয়েচ ভেলে
৬ জুন, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমএন