আন্তর্জাতিক ডেস্ক: শুধু বাইরের লোককে ফাঁসানোই নয়। নিজের কিডনি বিক্রির পাশাপাশি রাজকুমার তার স্ত্রীদেরও ছাড় দেয়নি৷ প্রাথমিক ভাবে রাজকুমারকে জেরা করে এই তথ্য জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। দিল্লির কিডনি চক্রের মূল মাথা রাজকুমার রাওকে জেরা করে গোয়েন্দারা তিনজন মহিলার কথা জনাতে পেরেছেন৷ ওই তিন জনেরই কিডনি মোটা টাকার বিনিময়ে বিক্রি করেছে রাও। তাঁদের মধ্যে দু’জন রাজকুমারের প্রাক্তন স্ত্রী৷ আর এক জন এখন রাজকুমার যে মহিলার সঙ্গে থাকত, সেই টি পুরানা নয়ন রাও৷ তবে নয়ন আদৌও রাজকুমারের স্ত্রী কি না, সে নিয়ে ধন্দে রয়েছেন গোয়েন্দারা। রাজারহাটের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে বিধাননগর পুলিশের সাহায্যে রাজকুমারকে জালে তোলে দিল্লি পুলিশ৷ তাকে দফায়-দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতে এসেছে তদন্তকারীদের৷ ধৃতের বাড়ি থেকে পাওয়া নথিপত্রেও মিলেছে বেশ কিছু তথ্য৷ গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, আর্থিক লোভে নিজের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর পরামর্শে প্রথমে রাজকুমার নিজের কিডনি বিক্রি করে৷ তার পরেই ধাপে-ধাপে বিক্রি করে নিজের দুই স্ত্রীর কিডনি।
গোয়েন্দারা আরও জানতে পেরেছেন, বছর সাতেক আগে খড়্গপুরে নিজের পরিবার ছেড়ে বেরিয়ে আসে হায়দরাবাদের ছেলে রাজকুমার৷ ওই সময় সে পরিজনেদের জানিয়েছিল, হায়দরাবাদের একটি নামী সংস্থায় কাজ জুটেছে৷ গোয়েন্দাদের দাবি, বাড়ি থেকে বেরিয়ে সে আসলে কনস্ট্রাকশনের ব্যবসা শুরু করে৷ তবে প্রথম ব্যবসাতেই প্রচুর লোকসানের মুখে পড়তে হয় রাজকুমারকে৷ তখনই সে সিদ্ধান্ত নেয়, মাসমাইনের চাকরি করবে৷ এর পরেই হায়দরাবাদের একটি ওষুধ কোম্পানিতে মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভের কাজ জুটে যায়৷ তত দিনে ব্যবসার কারণে তার বাজারে অনেক দেনা। ওই সময়ই এক বন্ধু পরামর্শ দেয়, কারও কাছ থেকে টাকা ধার নিলে তা শোধ করার দায় নিতে হবে, তার থেকে কিডনি বিক্রি করলে দেনা শোধ হয়ে যাবে৷ নতুন ভাবে ব্যবসা শুরুর পুঁজিও হাতে আসবে।
এর পরেই রাজকুমার মাত্র ৭০ হাজার টাকায় নিজের কিডনি বিক্রি করে৷ ছ’মাসের মধ্যে বিক্রি করে নিজের প্রথম স্ত্রী-র কিডনি৷ তখনই সে টের পায়, এই ব্যবসায় ঢুকে পড়তে পারলে শুধুই মুনাফা৷ ওষুধের সংস্থায় কাজ করার সুবাদে নিজের পরিচিত কয়েক জন চিকিত্সকের সঙ্গে রফায় নেমে পড়ে কিডনি পাচারচক্রে৷ তার পরেই টাকার লোভে বিক্রি করে দ্বিতীয় স্ত্রী-র কিডনিও৷
বর্তমানে যে মহিলার সঙ্গে রাজকুমার সংসার করছিল, সেই টি পুরানা নয়ন রাওয়ের কিডনিও সে ১২ লক্ষ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করেছে বলে জেরার মুখে স্বীকার করেছে বলে দাবি গোয়েন্দাদের৷ তবে নয়ন তার স্ত্রী কি না, তা নিয়ে তদন্তকারীদের সন্দেহ রয়েছে৷ তাঁদের দাবি, সত্যিই যদি ওই মহিলা স্ত্রী হতেন, তা হলে রাজকুমার গ্রেফতার হওয়ার পর দিনই রাজারহাটের বাড়ি ছেড়ে তিনি চম্পট দিতেন না৷ নয়ন নিজে কিডনি পাচারচক্রের পাণ্ডা হতে পারেন, এমন সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না গোয়েন্দরা৷ যে সমস্ত নথি রাজকুমারের বাড়ি থেকে মিলেছে, দেখা গিয়েছে তার বেশ কয়েকটিতে নয়নের সই রয়েছে।-কলকাতা২৪
১৩ জুন,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ