মঙ্গলবার, ১৪ জুন, ২০১৬, ০২:০৮:১৯

জীবনের শেষ সময়ে মাকে ছেলের এসএমএস 'আমি মারা যাচ্ছি'

জীবনের শেষ সময়ে মাকে ছেলের এসএমএস 'আমি মারা যাচ্ছি'

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :জীবনের শেষ সময় মার কাছে ছেলের এসএমএস।যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় রোববার ভোররাতে অরল্যান্ডোর নৈশক্লাবে গুলি শুরু পর সেখানে আটকে পড়া ৩০ বছর বয়সী এডি জাস্টিস তার মা মিনা জাস্টিসকে একটি এসএমএস পাঠান, যাতে লেখা ছিল— 'মা, আমি তোমাকে ভালোবাসি।'

মিনা জাস্টিস জানান, ভোররাত ২টা ৬ মিনিটের দিকে তার কাছে এসএমএসটি আসে। এরপর আরও একটি এসএমএস আসে তার মোবাইলে যাতে বলা হয়, ক্লাবে একজন গুলি ছুড়ছে। এসএমএসে এডি তার মাকে বলেন পুলিশে ফোন করতে এবং তিনি ক্লাবের অন্যদের সঙ্গে বাথরুমে লুকিয়ে আছেন বলে জানান।

রাত ২টা ৩৯ মিনিটে আবারও ছেলের এসএমএস পান মিনা, যাতে লেখা ছিল— ' আমি মারা যাচ্ছি।'

এরপর ছেলের কাছ থেকে আরও একটি এসএমএস পান মিনা জাস্টিস। ওই এসএমএসে এডি লিখেছিলেন— 'সে আমাদের ধরে ফেলেছে এবং সে এখন এখানে আমাদের সঙ্গেই।'

এটাই ছিল ছেলে এডি জাস্টিসের সঙ্গে মিনা জাস্টিসের শেষ যোগাযোগ। বার্তা সংস্থা এপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বন্দুকধারীর গুলিতে ছেলে হারানো মিনা জাস্টিস নিজেই এসব কথা জানান। পাশাপাশি দেখান তার মোবাইলে আসা এসএমএসগুলোও।

অরল্যান্ডো শহর কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে, নৈশক্লাবে বন্দুকধারীর হামলায় নিহতদের মধ্যে এডি জাস্টিসও রয়েছেন।

রোববার ভোররাতে ফ্লোরিডার অরল্যান্ডো শহরে পালস নৈশক্লাবে বন্দুকধারীর হামলার ঘটনায় ওই বন্দুকধারীসহ ৫০ জন নিহত হয়। এরপর দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই জানায়, ২৯ বছর বয়সী ওমর মতিন নামের একজন ওই হামলা চালিয়েছে। ঘটনাস্থলেই নিহত হন ওমর মতিন।

জানা যায়, নিউইয়র্কে জন্ম নেওয়া মতিনের বাবা যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন আফগানিস্তান থেকে। পরে তারা ফ্লোরিডার ফোর্ট পিয়ার্সে চলে যান। এই আমেরিকান মুসলমান যুবক ২০০৬ সালে তার নাম পরিবর্তন করেন। ওমর মীর সিদ্দিকী থেকে হয়ে যান ওমর মীর সিদ্দিকী মতিন। মতিন বেসরকারি নিরাপত্তা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান জিফোরএস এর হয়ে কাজ করে আসছিলেন।

২০১৩ সালে সহকর্মীদের নিয়ে 'আপত্তিকর মন্তব্যের' জন্য মতিনকে দুইবার জিজ্ঞাসাবাদ করে এফবিআই। তবে 'প্রমাণের অভাবে' দু'বারই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

সিরিয়া যুদ্ধের সময় আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালানো মো. আবু সালেহ-র সঙ্গে যোগসাজশ আছে এমন সন্দেহে ২০১৪ সালে ওমরকে আরেক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করে এফবিআই। সেবারও কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

মতিনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে সংশ্লিষ্টতার কোনো অভিযোগ না থাকায়  তার আগ্নেয়াস্ত্র বহনের অনুমতি ছিল। চাকরিসূত্রে তিনি সঙ্গে অস্ত্র রাখতেন। গত কয়েক দিনে তিনি বৈধভাবে আরও কয়েকটি অস্ত্র কেনেন।

শনিবার মধ্যরাতে একটি গাড়ি ভাড়া করে মতিন অরল্যান্ডোর নৈশক্লাব পালসে যান বলে ধারণা করা হচ্ছে। হামলায় তিনি ব্যবহার করেন অ্যাসল্ট রাইফেল ও একটি হ্যান্ডগান। তার কাছে কিছু বিস্ফোরকও ছিল বলে ধারণা করছে পুলিশ।

হামলার আগে মতিন ৯১১-এ ফোন করে নিজেকে 'আইএস'-এর অনুসারী বলে দাবি করেন বলে এফবিআই-এর তথ্য। ফোনে মতিন ২০১৩ সালে বোস্টন ম্যারাথনে হামলা চালানো তামেরলান ও জোখার সারনায়েভের নাম বলেন।

অরল্যান্ডো হত্যাকাণ্ডের পর মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গিগোষ্ঠি 'আইএস' দাবি করেছে, তাদেরই এক যোদ্ধা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। অবশ্য মতিনের সঙ্গে তাদের যোগাযোগের বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ।
১৪জুন২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/আরিপ/এমএম
 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে