আন্তর্জাতিক ডেস্ক: উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশিরা নিরাপদে আছেন। তবে ফ্লোরিডার অরল্যান্ডো শহরে সমকামীদের একটি নাইট ক্লাবে হামলাকারী সেই ব্যক্তি মুসলিম হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম নাগরিকদের মধ্যে চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে। মার্কিন মুসলিম নেতারা এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন।
গত শনিবার রাতে ওই নাইট ক্লাবে এক বন্দুকধারীর গুলিতে ৫০ জন নিহত হওয়ার পর রাজ্যে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাসহ রাজনৈতিক নেতারা নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এগিয়ে এসেছেন। যেকোনো ধরনের বিদ্বেষমূলক তৎপরতা প্রতিরোধে সর্তকতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ফ্লোরিডা থেকে সংবাদকর্মী জুয়েল সাদাত প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, ঘটনাস্থলের আশপাশের নগরগুলোতে প্রায় পাঁচ হাজার বাংলাদেশি রয়েছেন। এর মধ্যে কিসেমি নগরে অধিকাংশ বাংলাদেশির বাস। নগরের ১৬টি মসজিদে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তাকওয়া মসজিদে পুলিশের অপরাধ-বিষয়ক প্রধান ক্রিস্টপার ফুচি গতকাল রোববার সন্ধ্যায় উপস্থিত হয়ে মুসলমানদের আতঙ্কিত না হতে বলেছেন।
প্রবাসী নাগরিক সংগঠক এ কে এম হোসেন জানিয়েছেন, গুলিবর্ষণের ঘটনার জন্য ব্যক্তিবিশেষ দায়ী। এ কারণে সব মুসলমানদের আতঙ্কে না থাকার বার্তা প্রবাসীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
দারুল উলুম মাদ্রাসা থেকে প্রবাসী সামসুদ্দোহা জানিয়েছেন, তারাবির সময় নগর পুলিশের উপস্থিতি ছিল। মুসলমানদের কোনো কারণে ভীত না হওয়ার জন্য বলা হচ্ছে।
এদিকে নিউইয়র্কসহ বড় বড় নগরে সমকামীরা নিজেদের মধ্যে সংহতি ও সমবেদনা জানিয়েছেন। নিউইয়র্কের ইস্ট ভিলেজ এলাকায় দিনভর ছিল সমব্যথীদের সমাবেশ। সমকামীরা বলেছেন, স্রষ্টাপ্রদত্ত জীবন তাঁরা যাপন করে যাবেন।
নিউইয়র্ক সিটি স্পিকার মেলিসা মার্ক বিভেরিটো নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে জ্যাকসন হাইটসের ডাইভার্সিটি প্লাজায় মোমবাতি প্রজ্বালন করেন। তিনি বলেন, সন্ত্রাসীদের কোনো দল বা ধর্ম নেই। সন্ত্রাসী শুধুই সন্ত্রাসী। যারা মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করছে, তাদের ঘৃণা করতে হব। যে-কেউ কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত হলে তার দায় সবার ওপর চাপানো যাবে না।
নিউইয়র্ক সময় রোববার সন্ধ্যায় সাড়ে সাতটায় দ্য কাউন্সিল অব দ্য সিটি অব নিউইয়র্ক অফিস অব ডানিয়াল ড্রমের উদ্যোগে এ মোমবাতি প্রজ্বালন এবং স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। বক্তব্য দেন কাউন্সিলম্যান ডানিয়াল ড্রম। তিনি বলেন, ‘সাদা বা কালো, কে কোনো ধর্মের, তা বড় কথা নয়; আমরা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে। সন্ত্রাসীদের কোনো বন্ধু নেই, তারা সমাজ-পরিবার ও দশের শত্রু। তাই তাদের বিরুদ্ধে এখনই যুদ্ধ শুরু করতে হবে।’
নিউইয়র্ক সিটি কম্পট্রোলার স্কট এম স্ট্রিনজার বলেন, ‘অরল্যান্ডে যে ঘটনা ঘটেছে, তা ভাষায় বর্ণনা করা যাবে না। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। নিউইয়র্কের মানুষ সন্ত্রাসকে ঘৃণা করে। এ জন্য যতবারই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ঘটনা ঘটে, ততবারই জ্যাকসন হাইটসের ডাইভার্সিটি প্লাজায় জড়ো হয় এবং প্রতিবাদ জানায়। আজও ব্যতিক্রম হয়নি। আমরা শোকাহত তাঁদের জন্য, যাঁরা আজ প্রাণ হারিয়েছেন।’ এ সময় তিনি নিউইয়র্কের মুসলিমদের এ ধরনের ঘটনায় আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেন। বলেন, ‘আমরা সবাই নিউইয়র্কের মানুষ। আমাদের কোনো ভেদাভেদ নেই। আমরা কে কোন জাতি বা ধর্মের তা বড় কথা নয়; বড় কথা আমরা সন্ত্রাস মোকাবিলার প্রশ্নে একমত।’
মুসলিমদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার অ্যাটর্নি আলী নাজমি বলেন, একটি ঘটনার জন্য পুরো সম্প্রদায়কে দায়ী করা যাবে না। সন্ত্রাসী শুধুই সন্ত্রাসীই। তাদের কোনো ধর্ম নেই। অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা মুসলমানরা সন্ত্রাসকে সম্পূর্ণরূপে ঘৃণা করি। কারণ, ইসলাম হত্যাকে প্রশ্রয় দেয় না।-প্রথম আলো
১৪জুন২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/এআর/এমএম