আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মার্কিন জোট বাহিনীর বিমান হামলায় নিহত দুনিয়ার হাড় কাঁপানো জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের প্রধান আবু বকর আল-বাগদাদি? আইএস প্রভাবিত আরবি সংবাদ সংস্থা আল-আমাককে উদ্ধৃত করে এমনই দাবি করেছে ইরানের সরকারি সংবাদমাধ্যম এবং তুর্কি সংবাদপত্র ইয়েনিস শফক। আর তা নিয়েই জল্পনা তুঙ্গে। ঘটনাস্থল কেউ বলছেন সিরিয়ার রাকা, কেউ বলছেন ইরাকের মসুল।
গত শুক্রবারই খবর ছিল, আইএস সুপ্রিমো মার্কিন জোট বাহিনীর বিমান হামলায় গুরুতর জখম হয়েছেন। আর তার দিন তিনেক পর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর, মারাই গিয়েছেন বাগদাদি। যদিও আমেরিকার তরফে এখনও এই খবর নিয়ে কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এমনকী ওসামা বিন লাদেন নিকেশ হওয়ার পরও হোয়াইট হাউজের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয়ের খবর। কিন্তু আইএস সুপ্রিমো মারা যাওয়ার খবর চাউর হওয়ার পরও এনিয়ে এখনও কোনও শব্দ খরচ করেনি ওবামা প্রশাসন। তবে মার্কিন জোট সেনা সূত্রেও সত্যতা স্বীকার বা অস্বীকার কোনওটাই করা হয়নি। ফলে জল্পনা আরও বেড়েই চলেছে।
সোমবারই এক ইরাকি টিভি চ্যানেল দাবি করেছিল, মার্কিন বিমান হানায় জখম হয়েছেন বাগদাদি। বলা হয়, আইএস ঘাঁটি মসুল থেকে ৬৫ কিলোমিটার পশ্চিমে মার্কিন জোটের বিমান হানায় বাগদাদি গুরুতর আহত। সূত্রের খবর, বাগদাদি তখন একটি সভা থেকে আরও একটি সভার উদ্দেশ্যে কনভয় নিয়ে যাচ্ছিলেন। এরপরই খবর ছড়িয়ে পড়ে, ‘আবু বকর আল-বাগদাদি রমজানের পঞ্চম দিনে রাক্কায় (সিরিয়া) জোট বাহিনীর বিমান হানায় নিহত হয়েছেন’। মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অফিসারদের উদ্ধৃ়ত করে মার্কিন টিভি নেটওয়ার্ক সিএনএন জানাচ্ছে, গত ছ’মাস ধরে বাগদাদি মসুল এবং আশপাশেই ঘোরাফেরা করছিলেন। ফলে তাকে বাগে পেতে মার্কিন সেনাবাহিনীকে কালঘাম ছোটাতে হবে না। যেমনটা হয়েছিল লাদেনের সময়। কিন্তু হাতেনাতে ধরা যে সহজ ছিল না তা বুঝে গিয়েছিল মার্কিন সেনা।
কে এই বাগদাদি? মাথার দাম আড়াই কোটি ডলার। ইরাকে সাদ্দামের শাসন ততদিনে শেষ। শিয়াদের কর্তৃত্ব শুরু। কর্তৃত্বের দাপটে অনিবার্য ভাবে সুন্নিদের সঙ্গে সংঘাত, রক্তস্নান। কোণঠাসা সুন্নিদের মধ্যে অচিরেই জাল বিছায় আল-কায়েদা। তৈরি হয় আল-কায়েদা ইন ইরাক। এই সময়ে আল-কায়েদার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন আবু বকর আল-বাগদাদি। নেতৃত্বের স্তরে উঠতে না পারলেও বেশ কয়েকটি হামলার সঙ্গে বাগদাদি জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ ছিল। মার্কিন সেনার কাছে ধরা পড়ে ২০০৫-০৯ সাল পর্যন্ত আবু ঘ্রাইবের জেলে বন্দিও ছিলেন বাগদাদি। তার পরে টাইগ্রিস, ইউফ্রেটিস দিয়ে অনেক রক্ত বয়ে গিয়েছে। অসংখ্য প্রাণের বোঝা নিয়ে বিদায় নিয়েছে মার্কিন সেনা। পূর্ণ কর্তৃত্ব পেয়েছে ইরাকি সরকার, শিয়া আধিপত্য। আর সুন্নি-মানসে আল-কায়েদার আধিপত্য। এই সময়েই আবু ঘ্রাইবের জেল থেকে ছাড়া পান বাগদাদি।
২০০৯ সালে মুক্তি পাওয়ার সময়ে বাগদাদি বিচারকদের হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, নিউইয়র্কে আবার দেখা হবে। তারপর পাঁচ বছর আবু-বকরের দেখা না মিললেও তার প্রতিষ্ঠিত জঙ্গি গোষ্ঠী তাদের অকল্পনীয় সন্ত্রাস, আত্মঘাতী হামলা, বেপরোয়া হত্যা, মহিলা-শিশু হত্যা, নির্যাতন, অগুণতি গাড়ি বোমা হামলার জন্য শিরোনাম হয়েছে বারবার। দীর্ঘদিন জঙ্গিনেতার দেখা না মেলায় এবং জঙ্গি দমনে নিয়োজিত সরকারি বাহিনীর মনোবল চাঙ্গা করতে ইরাক সরকার ঘোষণা করে দিয়েছিল, আনবার প্রদেশে সরকারি বাহিনীর হামলায় আবু বকর মারাত্মক আহত হয়ে সিরিয়ায় পালিয়ে গিয়েছেন। আত্মবিশ্বাসে ছাই দিতেই হয়তো ২০১৪-র জুনে স্বশরীরে ইরাকের অন্যতম প্রাণকেন্দ্রে হাজির হয়ে সেই বাগদাদি ঘোষণা করেন ইসলামি খিলাফতের। এরপরের ইতিহাস শুধুই রক্তমাখা। সূত্র : কলকাতা থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক বর্তমান’
১৫ জুন ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস