বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন, ২০১৬, ০৯:১২:২৮

ছেলেকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে গণপিটুনি থেকে বাঁচলেন চেয়ারম্যান পিতা

ছেলেকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে গণপিটুনি থেকে বাঁচলেন চেয়ারম্যান পিতা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বাবা ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও পৌরসভার চেয়ারম্যান। তার ছেলের বিরুদ্ধে রয়েছে খুনের অভিযোগ। এই অভিযোগ থেকে ছেলেকে বাঁচানোর সব রকম চেষ্টাই করেছেন ক্ষমতাসীন বাবা। কিন্তু শেষ রক্ষা আর হয়নি। গণরোষের মুখে ছেলে কুণালকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হন দেবপ্রসাদ বাগ।

দেবপ্রসাদ বাগ ভারতের বর্ধমানের কালনা পৌরসভার চেয়ারম্যান। বুধবার তিনি তার ছেলে কুণালকে বাঁচাতে চেষ্টা করলে স্থানীয়রা তাকে গণ পিটুনি দেন। এরপরই তিনি অভিযুক্ত ছেলেকে পুলিশে দিয়ে নিজেকে রক্ষা করেন।

পুলিশ সূত্রের খবর, খুনের অভিযোগ থেকে ছেলেকে বাঁচাতে চেষ্টার ত্রুটি করেননি দেবপ্রসাদ। কালনা থানার পুলিশকর্মীদের উপর তিনি চাপও দিয়েছিলেন। জেলা পুলিশের এক শীর্ষকর্তারও দ্বারস্থ হয়েছিলেন দেবপ্রসাদ। যার প্রেক্ষিতে ওই পুলিশকর্তা রাজ্যের একমন্ত্রী তথা তৃণমূলের প্রথমসারির নেতাকে ফোনে গোটা ঘটনা জানান।

জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, ওই মন্ত্রী তথা নেতা পুলিশকর্তাকে জানিয়ে দেন, রাজনৈতিক রং না-দেখে কাজ করুক পুলিশ। যদিও পুলিশের তরফে ওই মন্ত্রীকে ফোন করার বিষয়টি অস্বীকার করা হয়েছে। প্রত্যাশিতভাবেই, প্রভাব খাটানোর অভিযোগ মানতে চাননি দেবপ্রসাদ।

গত দু’দিন ধরে নিখোঁজ ছিল কালনার কাঁসারিপাড়ার বাসিন্দা দশম শ্রেণির ছাত্র সুহৃদ দাস। বারুইপাড়ার একটি পুকুরে এদিন একটি দেহ ভাসতে দেখেন প্রাতর্ভ্রমণকারীরা। তারাই পুলিশে খবর দেন। পুলিশ মৃতদেহটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। খবর দেওয়া হয় সুহৃদের পরিবারকে। ওই ছাত্রের বাবা ঋষিকেশ থানায় গিয়ে ছেলের দেহ শনাক্ত করেন।

তিনি অভিযোগ করেন, পুরসভার চেয়ারম্যানের ছেলেই সুহৃদকে খুন করেছে। তিনি বলেন, ‘শুনেছিলাম, সুহৃদের সঙ্গে ওর সহপাঠী কুণালের মোবাইলের চিপ নিয়ে গোলমাল চলছিল। তার জেরেই আমার ছেলেকে খুন করা হয়েছে।’

সুহৃদের দেহ ময়নাতদন্তের জন্য কালনা মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। সকাল ১০টা নাগাদ সেখানে পৌঁছন দেবপ্রসাদ। তাকে দেখামাত্রই উত্তেজিত হয়ে ওঠে স্থানীয় বাসিন্দারা। হাসপাতালে মর্গের পাশে ৩ নম্বর গেট সংলগ্ন একটি চায়ের দোকানে তাকে ঢুকিয়ে মারধর শুরু হয়। পুলিশ চেয়ারম্যানকে বাঁচাতে গেলে পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করেন উত্তেজিত জনতা। জনরোষ থেকে বাঁচতে চেয়ারম্যান প্রতিশ্রুতি দেন, ছেলেকে পুলিশের হাতে তুলে দেবেন। পুলিশের তরফেও জানানো হয়, দ্রুত কুণালকে গ্রেফতার করা হবে। প্রতিশ্রুতি মতো মিনিট পনেরো-বিশের মধ্যেই নিজের ছেলেকে থানায় নিয়ে গিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেন দেবপ্রসাদ।

ঘটনার পিছনে রাজনৈতিক চক্রান্ত দেখছেন কালনা পৌরসভার চেয়ারম্যান। কারা চক্রান্ত করছেন তা অবশ্য তিনি স্পষ্ট করেননি। দেবপ্রসাদ বলেন, ‘আমি চেয়ারম্যান। আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। আমি রাজনীতির শিকার।’

তার যুক্তি, ‘আমার ছেলেকে খুন করতে কেউ দেখেনি। সুহৃদের অনেক বন্ধু থাকলেও আমার ছেলের বিরুদ্ধেই অভিযোগ করা হচ্ছে।’ ছেলেকে আড়াল করতে পুলিশের উপর চাপ তৈরির অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন দেবপ্রসাদ। তার কথায়, ‘একজন বাবা হিসাবে আমি এমন কাজ করতে যাব কেন! পুলিশকে বলেছি, তদন্ত করুন। দোষী প্রমাণিত হলে উপযুক্ত শাস্তি হোক।’
১৬ জুন, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমএন

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে