রবিবার, ২৬ জুন, ২০১৬, ০৬:৩২:৩৮

এর পরে কী? উত্তরটা হয়তো জানে না......

এর পরে কী? উত্তরটা হয়তো জানে না......

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :গরম ধোসা আর সম্বরের গন্ধে ম-ম করছিল ক্যাফে। এই গন্ধটাই টমাস ব্রিলকে বারবার টেনে এনেছে এখানে। সস্ত্রীক। কিন্তু গত কাল সন্ধেয় গিয়ে তাঁদের মনে হচ্ছিল, গন্ধটায় যেন আর মন ভরছে না। পছন্দের খানায় যেন কী একটা খামতি!

আঠারো বছর ধরে ইংল্যান্ডে আছেন ব্রিল। জন্মসূত্রে জার্মান, কিন্তু স্প্যানিশ রক্তও বইছে শরীরে। স্ত্রীর নাম রাধিকা। দেশ-জাতি-সীমান্ত— সবই একাকার তাঁর সংসারে।কিন্তু ‘ব্রেক্সিট রায়’ নামের ঝড়টা সব এলোমেলো করে দিচ্ছে। গভীর চিন্তাগ্রস্ত ব্রিল বলে ফেললেন, ‘‘আর এখানে চাকরি করা যাবে না। আমাকে কেউ রাখবে না।’’ রাধিকা সেই সকাল থেকে মানসিক অবসাদে ভুগছেন। এত বছর লন্ডনে আছেন, এই প্রথম বার নিজেকে ‘বাইরের লোক’ মনে হচ্ছে তাঁর।

শুধু এই অভিবাসী দম্পতি নন। তাঁদের মতো অনেকেই গত কাল থেকে ভাবতে শুরু করেছেন, হয়তো ব্যাগ গোছানোর সময় এল। অথচ গভীর দুশ্চিন্তার এই আবহেও নিদারুণ পরিহাসের মতো গুগলে আছড়ে পড়ছে ঝড়ের মতো প্রশ্নবাণ— ‘হোয়াট ইজ ইইউ’, ‘মেম্বারস অব ইইউ’, ‘হোয়াট উইল হ্যাপেন নাও, উই হ্যাভ লেফ্ট দ্য ইউ’... ইত্যাদি।

মনে রাখতে হবে, এই প্রশ্নগুলো আসছে গণভোটের ফল বেরোনোর পরে। আর আসছে মূলত ব্রিটেনবাসীদের কাছ থেকে! এক অনাবাসী ভারতীয় মহিলা লিখেছেন, ‘‘ইইউ ছাড়ার পক্ষে ভোট দিয়েছিলাম। কিন্তু মনে হয় না এর ঠিক মানে বুঝেছিলাম। আর একটা সুযোগ পেলে ইইউ-এ থাকার পক্ষেই ভোট দেব।’’ টুইটার আর ফেসবুক এই ধরনের ‘আফশোসের’ আপডেটে ছেয়ে গিয়েছে। অনেকে তাই বলছেন, এত দিন ধরে এত প্রচারের পরেও কেন ব্রেক্সিট নিয়ে একটু পড়াশোনা করলেন না এঁরা? তা ছাড়া, ফল বেরোনোর পরেও এ দেশে যে হারে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চলছে, তাতে ‘জনতার রায়’ নিয়ে কিছুটা প্রশ্নচিহ্নের অবকাশ তো থেকেই যাচ্ছে।

সব চেয়ে মারাত্মক হল, অভিবাসীদের কেউ কেউ কটূক্তির মুখে পড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অথচ এই এঁদেরই একাংশের কল্যাণে কলের মিস্ত্রি থেকে আয়া— অল্প কড়ি ফেলেই প্রয়োজনমতো লোক পেয়ে যেতেন লন্ডনবাসী। ওই দক্ষিণ ভারতীয় ক্যাফের ওয়েট্রেস এলিয়া যেমন। তিনি ও তাঁর বেশ কয়েক জন সতীর্থ আদতে পূর্ব ইউরোপের বাসিন্দা। এলিয়া পার্ট টাইম চাকরিটা নিয়েছিলেন পড়াশোনার খরচ চালাতে। গত কাল বললেন, ‘‘এখানে আর কোনও ভবিষ্যৎ নেই।’’

ব্রিটিশদের ভাবনাটাও কিন্তু সেই ভবিষ্যৎ নিয়ে। একটা গণভোট ঘিরে গোটা দেশটাই যেন অজস্র ভাগ হয়ে গিয়েছে। ব্রিটিশ-ইউরোপীয়, গরিব-বড়লোক, উচ্চশিক্ষিত-স্কুল পাশ। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, যুব সম্প্রদায় ‘রিমেন’ আর বয়স্ক পেনশনারদের সিংহভাগ ‘এক্সিট’-এর পক্ষে রায় দিয়েছেন। লন্ডন শহর? তারও তো অনেকগুলো টুকরো! তথাকথিত অভিজাত লন্ডন ইইউ-এ থাকার পক্ষে ছিল। মধ্যবিত্ত আর নিম্নবিত্তরাই মূলত চাইছিলেন গাঁটছড়াটা ভেঙে ফেলতে। তা-ই হয়েছে।

২৬জুন২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/এআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে