বৃহস্পতিবার, ৩০ জুন, ২০১৬, ০১:৪৭:৩২

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরের ভয়াবহ হামলা

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরের ভয়াবহ হামলা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত বিমানবন্দর গুলোর মধ্য একটি তুরস্কের ইস্তাম্বুলের আতাতুর্ক বিমানবন্দর। মঙ্গলবার রাতে সেই বিমানবন্দরে গুলিবর্ষণ ও বোমার বিস্ফোরণ ঘটালে প্রাণ হারায় ৪১ জন। সেই সময় প্রাণভয়ে আতঙ্কিত যাত্রীরা পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করেন। কেউ ঢুকছেন কাচঘেরা কক্ষে, আবার পিলারের আড়ালে দাঁড়িয়ে কেউ করছেন আত্মরক্ষার চেষ্টা।

“একজন বন্দুক নিয়ে আসছে”, “এখানে বোমা আছে!” ভ্রমণকারীরা একে অপরকে সতর্ক করেন।

ওই সময় বিমানবন্দরে উপস্থিত মাইন লিদিঙ্ক নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী সিএনএনকে বলেন, “সব জায়গায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। আমরা বুঝতে পারিনি যে, এটা সন্ত্রাসী হামলা ছিল।”

বিমানবন্দরের ব্যাগেজ এরিয়া থেকে ঝাঁকুনি অনুভব করেন আরো এক প্রত্যক্ষদর্শী উইল কার্টার। বিকট শব্দে দুই দফা বিস্ফোরণ ঘটে বলে জানান তিনি। বিস্ফোরণে পুরো বিমানবন্দর কেপে ওঠায় খারাপ কিছু একটা বুঝতে পেরেছিলেন টার্নার। তিনি সিএনএনকে বলেন, “কিছু একটা ঠিক হচ্ছে না তা বোঝার মতো যথেষ্ট জোরালো শব্দ হয়,”।

মিনিটখানেক পর তিনি তৃতীয় বিস্ফোরণ অনুভব করেন। এবার টার্মিনালের মধ্যে একটি ‘আলোর ঝলকানি’ দেখেন তিনি। টার্নার ও অন্য যাত্রীরা পালানোর চেষ্টা করায় আতঙ্ক ও চিৎকারে কক্ষটির চারপাশ ভরে ওঠে।

বিস্ফোরণের মাত্র কয়েক মিনিট আগে ওই এলাকা দিয়ে যান বিমানবন্দরের কর্মী লেভেন্ট কারাওগ্লান। যখন বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান তখন একটি বিমানের মধ্যে ছিলেন তিনি। তিনি বলেন, “বিমানের মধ্যে থাকলেও বিস্ফোরণে আমি বড় ধরনের ঝাঁকুনি খেয়েছিলাম। যখন আমি বিমানবন্দরে ফিরে এলাম, তখন সব জায়গা ধোঁয়াই আচ্ছন্ন, সব জানালার কাচ ভাঙা এবং লোকজন প্রাণের ভয়ে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করছিল।”

সাধারণত তিনি যে কাউন্টারে কাজ করেন তার খুব কাছেই বিস্ফোরণ ঘটেছিল জানিয়ে কারাওগ্লান বলেন, “আমার সহকর্মী যারা টিকেট বিক্রির ডেস্কে কাজ করেন, তারা মেঝেতে ছিল এবং কান্নাকাটি করছিল। কয়েকজন আহত হয়েছিল।”

“অনেকে হতাহত হয়েছেন; হাত, পা ও সবকিছু সব জায়গায় পড়েছিল। এটাকে ধ্বংসাত্মক মুভির মতো মনে হচ্ছিল,” বলেন লরেন্স ক্যামেরন নামের আরেক প্রত্যক্ষদর্শী।

রিচার্ড কালনিনস মাত্র বিমানবন্দরে নেমেই দেখতে পান ‘বোমা’, ‘গুলি’ বলে চিৎকার করতে করতে তার দিকে ছুটে আসছে মানুষ। তারা সবাই আবার ঘুরে দৌড়াতে শুরু করে। অন্যদের সঙ্গে তিনিও আটকা পড়েন একটি করিডরের এক কোণায়। তিন ঘণ্টা পর সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন বলে জানান তিনি।

ঘটনার বিবারণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “শুধুই আতঙ্ক। এমন একটি ভয়ের অবস্থা যে, কী হচ্ছে জানি না, একটি কোণায় আটকে থেকে ভাবছি কেউ একজন রাইফেল নিয়ে ছুটোছুটি করছে।”

উল্লেখ্য, স্থানীয় সময় মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১১ টার দিকে বিমানবন্দর টার্মিনালের প্রবেশ মুখে অস্ত্রধারী দুই সন্ত্রাসী গুলি বর্ষণ করে টার্মিনালে অবস্থানরত যাত্রী ও স্বজনদের উপর। পর মুহূর্তেই আক্রমণকারী নিজের গায়ে জড়ানো বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় বলে জানিয়েছে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

বিমানবন্দরের প্রত্যক্ষদর্শীদের জানায়, হামলাকারীদের নিষ্ক্রিয় করতে দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ সদস্যরা গুলি ছুড়লে বিস্ফোরণ ঘটায় সন্ত্রাসীরা। নিহতদের পরিচয় সুস্পষ্ট না হলেও তারা যাত্রী ও বিমানবন্দর কর্মীই হবেন বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

তুরস্কের এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, হামলাকারীরা বিমানবন্দরের প্রবেশমুখের একটি চেক পয়েন্টে পৌঁছালে তাদের আটকাতে গুলি চালায় পুলিশ। কালাশনিকভ বন্দুক দিয়ে গুলিবর্ষণ করে সন্ত্রাসীরা এবং তারপর বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিজেকে উড়িয়ে দেয় আত্মঘাতী হামলাকারী।

এদিকে তুরস্কের ইস্তাম্বুলের ভয়াবহ বোমা হামলা থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন বলিউড অভিনেতা হৃত্বিক রোশন। তিনি তার দুই সন্তানকে নিয়ে ক’দিন আগে ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন আফ্রিকা। সেখান থেকেই তিনি তুরস্ক হয়ে ফিরছিলেন মুম্বাই। 

বোমা হামলার কিছুক্ষণ আগেই তিনি দেশে ফেরার জন্য কামাল আতাতুর্ক বিমানবন্দর থেকে রওনা দেন। ইস্তাম্বুল থেকে কানেক্টিং ফ্লাইট ধরতে না পারায় তারাআটকে পড়েন বিমানবন্দরে।

পরের দিনের ফ্লাইটের অপেক্ষায় না থেকে ইকনমি ক্লাসের টিকিট কেটে বিস্ফোরণের কিছুক্ষণ আগে সেখান থেকে তার সন্তানদেসহ রওনা দেন হৃত্বিক। তড়িঘড়ি বিমান টিকিটের ব্যবস্থা করে দেওয়ায় তিনি ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে। একইসঙ্গে জঙ্গি হামলার ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন বলিউড অভিনেতা।

৩০ জুন ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে