শুক্রবার, ০১ জুলাই, ২০১৬, ০৩:৪৬:৪৪

মায়ের কোলে সনু

মায়ের কোলে সনু

সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়: বাংলাদেশের জামাল ইবনে মুসা, এই কাহিনির যিনি ‘বজরঙ্গি ভাইজান’, যাঁর বিরুদ্ধে বাংলাদেশে মামলা চলছে, তাঁর যেন শাস্তি না হয়। ভারত সরকার যেন তাঁর পাশে থাকে। সুষমা স্বরাজকে সনুর মায়ের অনুরোধ। মা, বাবা, মাসি ও ছোট বোনের সঙ্গে গলির মোড়ে সরকারি গাড়ি থেকে ছোট্ট সনু গতকাল বৃহস্পতিবার শেষ বিকেলে যখন নামল, দিগ্বিদিক কাঁপিয়ে এমন একটা চিত্কার উঠল যেন এইমাত্র মুস্তাফিজুর রহমানের বলে প্রতিপক্ষের তেকাঠি ছিটকে গেল! মুহূর্তের মধ্যে মিডিয়ায় হুটোপুটি। মা-বাবার কাছ থেকে আরও একবার ছিনতাই হলো বাকরুদ্ধ সনু। কে যেন তাকে কোলে তুলে নিল। কোথা থেকে যেন চলে এল গোছা গোছা গাঁদা ফুলের মালা। শুরু হলো গলির মোড় থেকে এক ‘শ’ গজ দূরের বাড়ি পর্যন্ত একটা মিছিল।

মিছিল তো নয়, পা টিপে টিপে এগোনো। অপ্রশস্ত রাস্তার ধারে চুল-দাড়ি কাটার সেলুন, ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের স্তূপ, তেলেভাজার ও মাংসের দোকান এবং ঘুপচি ঘরের পর্দা। সেই রাস্তা থেকে সনুদের বাড়ির সামনের হাততিনেক চওড়া গলির মুখে বুকে নিষ্পাপ মুখের এক শিশুর ছবি ধরে দাঁড়িয়ে চল্লিশ বছরের বিলকিস বানু। চোখ তাঁর ছলছল করছে অথচ মুখে সনুর প্রত্যাবর্তনের আনন্দের রেশ। বুকে ধরা ছবি দেখিয়ে স্পষ্ট বাংলায় বললেন, ‘আমার ছেলে আসিফ। বেঁচে থাকলে ছয় বছর বয়স হবে এখন। দেড় বছর হলো সেও চুরি হয়ে গেছে এখান থেকে। থানা-পুলিশ এখনো কিচ্ছুটি করতে পারেনি।’


বিলকিস বানুর এই এক ফোঁটা কষ্টটুকু ছাড়া দিল্লির উত্তর-পূর্ব প্রান্তের নিউ সীমাপুরির এই তল্লাটে আজ কদিন ধরেই কুলকুল আনন্দের স্রোত বয়ে চলেছে। সেই স্রোতে ভেসে চলেছে সনুর অপ্রত্যাশিত প্রত্যাবর্তনের কাহিনি। ছয় বছর আগে এক নিষ্প্রদীপ সন্ধ্যায় পরিচিত এক নারীকে বিশ্বাস করে তার হাত ধরে ঘুরতে গিয়ে দেশছাড়া হয়েছিল সনু। দেশ ছেড়ে বিদেশ। ছয় বছর পর হঠাৎই এ এক দ্বিতীয় ‘বজরঙ্গি ভাইজান’। সিনেমা ও বাস্তবে এ এক অবিশ্বাস্য মিলমিশ! সেই কাহিনি এখন সবার মুখে মুখে। গতকাল দুপুরে বিমানবন্দর থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্তাদের ঘেরাটোপ থেকে সনুর মা মুমতাজ ও বাবা মেহবুব সটান চলে এলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের অফিসে। মুমতাজ সেই মুহূর্তটুকু বর্ণনা করতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন।

তিনি বললেন, ‘উনিও তো মা। সনুকে দেখেই বুকে টেনে নিয়ে তিনি আমাকে বললেন, আমার কথা আমি রেখেছি। আপনার খালি কোল ভরে দিয়েছি এটাই আমার প্রাপ্তি।’ সুষমাকে মুমতাজ দুটি অনুরোধ করেছেন। প্রথম অনুরোধ বাংলাদেশের জামাল ইবনে মুসা, এই কাহিনির যিনি ‘বজরঙ্গি ভাইজান’, যাঁর বিরুদ্ধে বাংলাদেশে এখনো মামলা চলছে, তাঁর যেন কোনো শাস্তি না হয়। ভারত সরকার যেন জামাল ভাইয়ের পাশে থাকে। আর দ্বিতীয় অনুরোধ, সনু যাতে লেখাপড়া শিখে মানুষ হতে পারে সেটা যেন একটু দেখেন।


মুমতাজ বললেন, ‘দুদিন পর সুষমা স্বরাজ আমাদের আবার যেতে বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আমাদের দেখা করিয়ে দেবেন।’ মুমতাজ-মেহবুব মনে মনে একটা কামনাও করছেন। রহিমা নামের যে বউটা পাঁচ মাসের মেয়ে কোলে তাঁদের কাছে আশ্রয় নিয়েছিল, যাকে মুমতাজ মাস কয়েক পর দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন, প্রতিশোধ নিতে যে ছয় বছরের সনুকে চুরি করে বাংলাদেশে বেচে দেয়, তার যেন শাস্তি হয়। নিউ সীমাপুরিতে এবার আগেভাগেই চলে এসেছে খুশির ঈদ। গলিতে গলিতে সেই খুশির ঝলকানি। খুশির ঝলক বিহ্বলিত সনুর চোখেও। মায়ের গলা জড়িয়ে শুধু বলল, মাকে পেয়ে খুব ভালো লাগছে।-প্রথম আলো

১ জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে