শনিবার, ০২ জুলাই, ২০১৬, ১০:১৮:১০

মুম্বাই হামলার দিন এই লোকটির বুদ্ধিতে প্রাণে বেঁচেছিল ১৫৭ জন

মুম্বাই হামলার দিন এই লোকটির বুদ্ধিতে প্রাণে বেঁচেছিল ১৫৭ জন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:  ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার কথা নিশ্চয় মনে আছে সবার? কি নিমর্ম হত্যাকাণ্ডই না চালিয়েছিল জঙ্গীরা। ঠিক তেমনই শনিবার এমন নির্মম একটি ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশের রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানে।

মুম্বাই হামলার দিন ১৫৭ জনকে প্রাণে বাঁচিয়েছিলেন মার্কিন মেরিনের কমান্ডো ধারনিধারকা। ২০০৮ সালে মুম্বইয়ে যখন হামলা হয় তখন রবির বয়স ৩১ বছর।

২৬ নভেম্বর, ২০০৮ সালের সন্ধ্যায় কাকা এবং তুতো বোনকে সঙ্গে করে তাজমহল হোটেলের লেবানিজ রেস্তোরাঁ ‘সৌউ’-তে নৈশভোজে গিয়েছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন মেরিন অফিসার রবি।
 
কিন্তু, রেস্তোরাঁয় বসার পর থেকেই সমানে একের পর এক মোবাইল ফোন বাজছিল। ইরাকের যুদ্ধে কাজ করে আসা রবি বিপদের গন্ধ পেতে দেরি করেননি। কিছুক্ষণের মধ্যেই রেস্তোরাঁর এক নিরাপত্তা কর্মীর কাছ থেকে জঙ্গি হামলার খবর পান রবি। মুহূর্তের মধ্যে রবির সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ তাঁকে জাগিয়ে তোলে। রোস্তোরাঁতেই সেসময় তাঁর আলাপ হয় দক্ষিণ আফ্রিকার ৬ প্রাক্তন কমান্ডোর সঙ্গে। যাঁরা একটি প্রজেক্টের কাজে মুম্বইয়ে এসেছিলেন।


তাজ মুম্বইয়ের ২০ তলায় থাকা এই রেস্তোরাঁয় যে কোনও সময় জঙ্গিদের হামলাটা নিশ্চিত বলেই বুঝে গিয়েছিলেন রবি।তাই জঙ্গিরা এসে পড়ার আগেই রেস্তোরাঁয় থাকা প্রতিটি মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়াটা তখন রবির কাছে ছিল চ্যালেঞ্জ।
রবি চটজলদি তাঁর পরিকল্পনা জানান দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আসা ৬ প্রাক্তন কমান্ডোকে। কয়েক জন কমান্ডো রেস্তোরাঁর দরজা বন্ধ করে দিয়ে সমস্ত মানুষকে জঙ্গি হামলার কথা জানান এবং কী করলে প্রত্যেকে প্রাণে বাঁচতে পারেন তাও বলা হয়। সকলকে আতঙ্কগ্রস্ত না হয়ে সাহস রাখতেও বলেন তাঁরা।

রবি ততক্ষণে আরও দুই কমান্ডোকে সঙ্গে করে রেস্তোরাঁ লাগোয়া একটি ঘর দিয়ে ফায়ার এক্সিটের রাস্তা খুঁজে বের করেন। এখান থেকে দুটি সিড়ি একটি হোটেলের কনফারেন্স হলে গিয়েছিল। এই সিড়ির মুখটি প্রথমে ভারী জিনিসপত্র দিয়ে বন্ধ করে দেন রবি এবং বাকি দুই কমান্ডো। রেস্তোরাঁ এবং আশপাশের সমস্ত হলে পর্দা টেনে অধিকাংশ লাইট নিভিয়ে দেওয়া হয়। লোকজনকে মোবাইল সাইলেন্ট করতে এবং আস্তে আস্তে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।


এরপর রেস্তোরাঁয় থাকা সমস্ত মানুষকে একে একে লাইন করে দাঁড় করান রবি এবং তাঁর সঙ্গীরা। এক ৮৫ বছরের মহিলাকে কী করে সিড়ি দিয়ে নামানো যাবে তা নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়। শেষমেশ রবি ওই বৃদ্ধাকে পাঁজকোলা করে নিয়ে সিড়ি দিয়ে নামতে থাকেন। প্রত্যেকটি ফ্লোরে সিড়ির দরজায় ছোট করে গ্লাস লাগানো ছিল। ভিতর থেকে ইচ্ছে করলেই দেখা যায় সিড়ি দিয়ে কারা নামছেন। তাই এই সিড়ির দরজাগুলি এড়িয়ে নামাটা ছিল বড়রকমের চ্যালেঞ্জ। ততক্ষণে, হোটেলের ছ’তলায় জঙ্গিরা ব্যাপক বিস্ফোরণ এবং গুলি বর্ষণ করছিল।

এরই মধ্যে রবি রেস্তোরাঁয় থাকা ১৫৭ জনকে সিড়ি দিয়ে সেফর এক্সিটে নামিয়ে নিয়ে আসেন। ‘সেফ এক্সিট’-এর কাছেই পুলিশ কর্ডন ছিল। মুহূর্তে তাঁরা ১৫৭ জনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেন। সেদিন মার্কিন মেরিন রবি তাঁর উপস্থিত বুদ্ধি না খাটালে মুম্বই হামলায় মৃতের তালিকায় হয়তো এই ১৫৭ জনের নামও উঠে যেত।-এবেলা
২ জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে