আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি’র নামে বিজেপি ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন ‘মজলিশ ই ইত্তেহাদুল মুসলেমিন’ প্রধান ব্যারিস্টার আসাদউদ্দিন ওয়াইসি এমপি।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী সদানন্দ গৌড়া বলেছেন, ‘বিজেপির ইস্তাহারে ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি’র বিষয়টির উল্লেখ রয়েছে। এবারে সরকার সেই অ্যাজেন্ডাটি গ্রহণ করবে কিনা, তা খতিয়ে দেখার জন্য ল’ কমিশনের কাছে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। ল’ কমিশন সব রাজনৈতিক দল ও অংশীদারদের সঙ্গে কথা বলে সরকারের কাছে রিপোর্ট পেশ করবে।’ খবর প্যারিস টুডে।
এ নিয়ে কংগ্রেসের মুখপাত্র অভিষেক মনু সিংভি অবশ্য বলেছেন, ‘যখনই কোনো বড় নির্বাচন সামনে আসে, সেসময় বিজেপি এমন সব বিষয় সামনে নিয়ে আসে, যা দিয়ে বিভাজনের রাজনীতি করা যায়। কখনো অভিন্ন দেওয়ানি বিধি, কখনো ধারা ৩৭০ ধারা কিংবা রামমন্দিরের ইস্যু নিয়ে আসবে তারা।’
ভারতের উত্তর প্রদেশে আসন্ন নির্বাচনের মুখে কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকার এ ভাবে কৌশলে ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি’র মতো বিতর্কিত প্রসঙ্গ খুঁচিয়ে তুলল বলে মনে করা হচ্ছে।
আজ (রোববার) গণমাধ্যমে প্রকাশ, ‘মজলিশ-ই ইত্তেহাদুল মুসলেমিন’ বা ‘মিম’ প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়াইসি সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিজেপি আরএসএসের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করছে, কারণ তারা নির্বাচনের সময় দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে।’
তিন বলেন, ‘চাকরি দিতে, গ্যাস এবং কেরোসিনের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে ব্যর্থ হওয়ার পর এবার বিজেপি আরএসএসের প্রধান এজেন্ডা ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ বাস্তবায়নে যুক্ত হয়েছে।’
তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, সরকার কী ৩৭১ ধারা অপসারণ করতে পারবে যা মিজোরাম ও নাগাল্যান্ড, সাংস্কৃতিক নিরাপত্তা ও অধিকার দিয়েছে! তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘হিন্দু যৌথ পরিবার যে কর ছাড় পায় তা কি আপনারা অপসারণ করতে চান?’
তিনি বলেন, ‘সংবিধানের নির্দেশাত্মক নীতির মধ্যে অন্যতম একটি হল মদের ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা উচিত। কারণ, এটা সমাজে অনেক অনিষ্ঠ করে এবং মদ জনিত কারণেই অধিকাংশ সড়ক দুর্ঘটনা হয়।’
ওয়াইসি জাতীয় তদন্ত সংস্থা এনআইএ কর্তৃক গ্রেফতার ৫ যুবকের আইনি সহায়তা দেয়া বিবৃতি প্রসঙ্গে সাফাই দিয়ে বলেন, ‘মিডিয়া তাকে ভুল ভাবে উপস্থাপন করছে। মুম্বাই হামলায় দোষী আজমল কাসবও আইনি সুবিধা পেয়েছিল। সুতরাং, আমি যদি তাদের (৫ যুবকদের) আইনি সহায়তা নাও দিই আদালত তাদের জন্য আইনজীবী নিযুক্ত করবে। আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনায় সমস্ত অভিযুক্তরা আইনি সহায়তা পাওয়ার অধিকারী এবং আমাদের দেশের বিচার বিভাগ এভাবেই কাজ করে। তাছাড়া ওই যুবকদের পরিবারও আমাকে জানিয়েছে তারা নির্দোষ। এ ব্যাপারে আদালতই সিদ্ধান্ত নেবে তারা দোষী কি না। আদালতের সিদ্ধান্ত সবাইকে মানতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আইএসআইএল সন্ত্রাসী সংগঠন, এ নিয়ে কোনো দ্বিমত হতে পারে না। সমস্ত আলেমরাও তাদের সমালোচনা করেছেন।’
ওয়াইসি বলেন, ‘আইএসআইএল সন্দেহে এনআইএ যাদের গ্রেফতার করেছে তারা যদি আদলতে নির্দোষ প্রমাণিত হয় তাহলে তাদের গ্রেফতারকারী কর্মকর্তাদের সাসপেন্ড করা উচিত।’
তিনি বলেন, ‘এ রকম অনেক মামলা আছে যাতে মুসলিম যুবকদের গ্রেফতার করা হয়েছিল কিন্তু আদালতে তাদের বেকসুর খালাস দেয়া হয়।’ এ প্রসঙ্গে তিনি অক্ষরধাম হামলা এবং মালেগাঁও হামলায় মুসলিম যুবকদের গ্রেফতারের উদ্ধৃতি দেন, আদালতে যারা নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ায় বেকসুর খালাস পেয়েছিল। তিনি বলেন, ‘তাদের জীবনের বহুমূল্য সময় কারাগার এবং আদালতের চক্করে অতিবাহিত হয়ে গেছে। কারণ তারা মুসলিম ছিল, এ জন্য কে দায়ী?’
৩ জুলাই, ২০১৬ এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই