আন্তর্জাতিক ডেস্ক : খনি বণ্টনে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে গতকাল বিজেপি শাসিত রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের দাবি করেছিল কংগ্রেস। রাত পোহাতেই হিমাচলের মুখ্যমন্ত্রী বীরভদ্র সিংহের বাড়িতে তল্লাশি চালালো সেই সিবিআই।
স্থানীয় একটি হনুমান মন্দিরে কার্যত অনাড়ম্ভরভাবে ছোট মেয়ে মীনাক্ষীর বিয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন বীরভদ্র। সেখানেই মুখ্যমন্ত্রী খবর পান তার বিরুদ্ধে আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তির মামলা দায়ের করে শিমলা ও দিল্লির বাড়ি সমেত ১১টি ঠিকানায় তল্লাশি চালাচ্ছে সিবিআই।
গতকাল ঠিক যেভাবে বসুন্ধরা রাজের ইস্তফা দাবি করেছিল কংগ্রেস, আজ ততধিক চড়া স্বরে হিমাচলের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে বীরভদ্রর ইস্তফা দাবি করেছে বিজেপি।
যদিও কংগ্রেস হাইকম্যান্ড আজ বুঝিয়ে দেয়, বীরভদ্রর পাশেই রয়েছে তারা। সেই বার্তা দিতে দলীয় তরফে সাংবাদিক বৈঠক করে রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদ বলেন, টিপিক্যাল প্রতিহিংসার রাজনীতি করছে মোদি সরকার। এ রাজনীতি একেবারেই নরেন্দ্র মোদি সরকারের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। দেশে যেন স্বৈরাচারী শাসন শুরু হয়ে গেছে। বড় কথা হলো, মেয়ের বিয়ের দিনে তল্লাশি চালানোর মতো অমানবিক কাজ অতীতে আর হয়নি!
হিমাচলের মুখ্যমন্ত্রী বীরভদ্র সিংহের বিরুদ্ধে আগেই প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তার ভিত্তিতেই আজ বীরভদ্র, তার স্ত্রী প্রতিভা সিংহ, ছেলে বিক্রমাদিত্য ও মেয়ে অপরাজিতার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন আইনের আওতায় মামলা দায়ের করে সিবিআই। সেইসঙ্গে তল্লাশি অভিযান চালায় বীরভদ্রের ১১টি ঠিকানায়।
বীরভদ্রের বিরুদ্ধে আসল অভিযোগ হলো, ২০০৯-১০ আর্থিক বছর থেকে শুরু করে পরের দুই আর্থিক বছরে বীরভদ্রের আয় হঠাৎ বেড়ে যায়। আয়কর রিটার্নে তা প্রতিফলিত হয়। তখন কেন্দ্রে ইস্পাতমন্ত্রী ছিলেন বীরভদ্র।
সূত্র মতে, বীরভদ্র বরাবরই তাঁর আয়কর রিটার্নে দেখাতেন যে, আপেল চাষ থেকে তার নিয়মিত আয় হয়। সেই আয়ের অঙ্ক ছিল বছরে বহু লক্ষ টাকা। কিন্তু সেই আয়ই দুম করে কোটিতে পৌঁছে যায়। কেন্দ্রে ইস্পাতমন্ত্রী থাকাকালীন ৬.১ কোটি টাকা প্রিমিয়াম দিয়ে একটি জীবনবিমা করেছিলেন বীরভদ্র।
দেখা যাচ্ছে, ওই ৬ কোটি টাকা তার আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। কেন্দ্রে ইউপিএ সরকার থাকাকালীন এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের দৃষ্টি আকর্ষণ করে চিঠি দিয়েছিলেন রাজ্যসভার তৎকালীন বিরোধী দলনেতা অরুণ জেটলি।
হিমাচলের বিজেপি নেতা তথা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জে পি নাড্ডা আজ বলেন, হিমাচলের কংগ্রেস সরকার হলো দুর্নীতির আঁতুরঘর। এটা হওয়ারই ছিল। বীরভদ্রের উচিত এখনই ইস্তফা দেয়া। অতীতে বীরভদ্র ও তার স্ত্রীর একটি সিডি প্রকাশ করে দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতেও একটি জনস্বার্থ মামলা ঝুলছে।
কংগ্রেস নেতাদের দাবি, বসুন্ধরা রাজের বিরুদ্ধে কংগ্রেস দুর্নীতির অভিযোগ তোলার কারণেই বীরভদ্রের বাড়িতে আজ সিবিআই তল্লাশি হয়। এ ঘটনা একেবারেই কাকতালীয় নয়। নইলে দুর্নীতির অভিযোগের যে বহর তাতে মেয়ের বিয়ের দিনই মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে তল্লাশি চালানোর মতো কোনো জরুরি অবস্থা ছিল না।
বীরভদ্রের শিমলার বাড়িতে আজ দুপুরে বিবাহ অনুষ্ঠানের জন্য বেছে বেছে স্থানীয় কিছু নেতা ও আমলাকে নিমন্ত্রণ করা হয়েছিল। মধ্যাহ্নভোজের জন্য তারা যখন সেখানে পৌঁছেন তখনও সিবিআইয়ের তল্লাশি চলছিল।
স্বাভাবিকভাবেই বিয়ের অনুষ্ঠানের আবহ এতে পণ্ড হয়ে যায়। আজ সেই প্রসঙ্গ উত্থাপন করে গুলাম নবি বলেন, বিজেপি নেতারা মনে করছেন, প্রতিহিংসার রাজনীতি দিয়ে বিরোধীদের চুপ করিয়ে দিতে পারবেন। কিন্তু এ রাজনীতি উল্টে কংগ্রেসের জেদ বাড়িয়ে দিচ্ছে।
৪৫ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির জন্য এবার গদি ছাড়তে হবে বসুন্ধরাকে। কংগ্রেসিদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা সাজিয়ে সেদিক থেকে মুখ ঘোরানো যাবে না।
২৬ সেপ্টেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর