শুভাশিস ঘটক : ছিল ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের কারও-কারও ‘খবরি’ (চর)। কাজ, জঙ্গি কার্যকলাপ নিয়ে খবরাখবর দেওয়া। কিন্তু প্রথমে এ বছর মালদহের কালিয়াচকে ও তার পর বীরভূমের ইলামবাজারে গোষ্ঠী সংঘর্ষ ও হিংসার ঘটনায় জড়িত হিসেবে পাওয়া যায় লাভপুরের মোহাম্মদ মুসাউদ্দিন ওরফে মুসার নাম। পরে ধরা পড়ে, জঙ্গি কার্যকলাপে জড়িত মৌলবাদী নেতার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সে। তাতেই প্রমাদ গনেন গোয়েন্দারা। তারা বুঝতে পারেন, অন্য খেলা খেলছে মুসা।
ভারতের গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, কালিয়াচক এলাকার হিংসায় পশ্চিমবঙ্গে জেএমবি-র (জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ) অন্যতম চাঁই সুলেমান সরাসরি জড়িত। গোটা বিষয়টি মুসা জানত। কিন্তু সে কোনও তথ্য গোয়েন্দাদের জানায়নি। উল্টো সুলেমানকেই সাহায্য করে গিয়েছে।
মুসার এই ‘কর্মকাণ্ড’ সম্পর্কে গোয়েন্দারা ওয়াকিবহাল হন মাস ছ’য়েক আগে, মালদহের কালিয়াচকে একটি গোষ্ঠী সংঘর্ষের পরে। ওই সংঘর্ষে জড়িতদের জেরা করতে গিয়ে তাদের মোবাইলের সূত্র ধরে গোয়েন্দারা মুসার নাম পান। চলতি বছর মার্চে বীরভূমের ইলামবাজারে ফের আর এক গোষ্ঠী সংঘর্ষে নাম জড়াতে গোয়েন্দাদের রেডারে পাকাপাকি ভাবে চলে আসে মুসার নাম। সোমবার রাতে বর্ধমান স্টেশনে মুসাকে সন্দেহভাজন আইএস হিসেবে গ্রেফতারের পরে তার ‘ডাবল এজেন্ট’ ভূমিকা সম্পর্কে অনেকটাই নিশ্চিত গোয়েন্দারা। তারা বলছেন—জেএমবি-কে দুর্বল করে সে আইএসকে চাঙ্গা করার কাজও করছিল সে।
ভারতের গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, খাগড়াগড় বিস্ফোরণ ও তার জেরে জেএমবি-র একের পরে এক চাঁই ধরা পড়ে যাওয়ায় পশ্চিমবঙ্গে তখন ওই সংগঠনের অবস্থা কিছুটা বেসামাল। আর সেই সময়ে মুর্শিদাবাদ ও মালদহের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় মোটা টাকা মাসোহারার প্রলোভন দিয়ে জেএমবি-র সদস্যদের আইএসে নিয়োগ করতে শুরু করেছিল মুসা। সে এই কাজ করছিল দক্ষিণ ভারত ও সিরিয়ায় বসে থাকা আইএসের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে। সে জন্য মুসাকে টাকাও পাঠানো হচ্ছিল। তামিলনাড়ুর তিরুপ্পুরে দু’টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় মুসার অ্যাকাউন্টে বিপুল অর্থ লেনদেনের প্রমাণ পেয়েছে সিআইডি। গোয়েন্দারা জানান, ওই অ্যাকাউন্টে বিদেশ থেকে কত টাকা ঢুকেছে, তা দেখা হচ্ছে।
ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রের খবর, মালদহ ও মুর্শিদাবাদের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় জেএমবি-র ঘাঁটি বহু দিনের। খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পরে মুসার কাছ থেকে পশ্চিমবঙ্গে জেএমবি-র কার্যকলাপ নিয়ে নিয়মিত খবর পেতেন ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের একাংশ। এমনিতেই রাজ্যে জেএমবি-র গুরুত্বপূর্ণ সদস্য, খাগড়াগড়-কাণ্ডে অভিযুক্তদের অন্যতম, আমজাদ আলি শেখের সঙ্গে মুসার পরিচয় ছিল।
খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পরে জেএমবি নেতারা যখন পালিয়ে বেড়াচ্ছে, সেই সময়ে দিশেহারা হয়ে পড়া সাধারণ ক্যাডারদের একাংশকে টাকার লোভে আইএসে টেনেছিল মুসা। তাদের মধ্যে কয়েক জনের নাম জানিয়ে ‘সোর্স’ হিসেবে ভারতীয় গোয়েন্দাদের বিশ্বাস অর্জন করেছিল মুসা। গোয়েন্দাদের অনুমান, সেই সময় বহু তথ্য চেপে গিয়েছিল মুসা। একই সঙ্গে কিছু কলেজ শিক্ষার্থীর মগজধোলাই করে তাদের আইএসে টানার কাজও চালিয়ে গিয়েছিল।
৯ জুলাই ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস