আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভাগ্যিস রাতের নিস্তব্ধতা গ্রাস করেছিল চারপাশ। আর তাতেই ইট কাঠ ভেদ করে কোনওমতে বাইরে আসা নিঃশ্বাসের শব্দে তাদের অস্তিত্ব টের পেয়েছিল ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। এতেই রক্ষা পায় সাতটি গরু। ট্রাক্টরের ডালায় ইট কাঠের স্তুপের মধ্যে দীর্ঘ ক্ষণ বন্দি থেকে ততক্ষণে অবশ্য মৃত্যু হয়েছে একটির।
শুক্রবার রাত ৯টা নাগাদ পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি সীমান্তে ট্রাক্টরে করে গরু পাচারের এই অভিনব ব্যবস্থা দেখে চোখ কপালে উঠেছে বিএসএফের। ঘটনার কথা বাহিনীর সদর দফতরে পৌঁছাতে নড়েচড়ে বসেছেন কর্মকর্তারা।
শনিবার বিএসএফের সদর দফতর থেকে জেলার সীমান্ত এলাকায় চলাচলকারী সমস্ত মালবাহী গাড়ি ও যানবাহন পরীক্ষা করার জন্য প্রহরারত জওয়ানদের নির্দেশ দেওয়া হয়। বিএসএফের এক কর্মকর্তা সঞ্জয় শ্রীবাস্তব জানান, গঙ্গারামপুরের ফুলবাড়ি থেকে ট্রাক্টরে লুকিয়ে মোট ৮টি গরুকে হিলির গোঁসাইপুর সীমান্ত গ্রামে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। কাঁটাতারহীন ওই গ্রামে ঢোকার আগে রাস্তার মোড়ে চকগোপাল ফাঁড়ির দু’জন জওয়ান রাত পাহারায় ছিলেন। তারাই রাতে ট্রাক্টর যেতে দেখে সন্দেহবশত আটকান।
ইট আর কাঠের খড়ি গ্রামে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে তাদের জানায় ট্রাক্টরের চালক। কিন্তু জওয়ানরা কাছে গিয়ে দেখতেই ট্রাক্টরের মালপত্রের ভিতর থেকে নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ ভেসে আসে। ওই দুই জওয়ান ইট ও কাঠের স্তুপ সরাতেই চোখ কপালে ওঠে তাদের। দেখতে পান, সার বেঁধে আটটি ছোট গরু মুখ পা বাঁধা অবস্থায় শুয়ে রয়েছে। গরুর উচ্চতা মতো বাঁশের মাচা ও কাঠের তক্তার পাটাতন দিয়ে বাক্সের মতো করে গরু গুলিকে রাখা হয়েছে। তার উপর ইট সাজিয়ে পাশে কাঠের খড়ি ভর্তি করে গরুগুলিকে আড়াল করা হয়েছে। উপর থেকে বোঝার উপায় নেই ট্রাক্টরে ইট ছাড়া অন্য কিছু আছে। ফাঁকফোকর দিয়ে ঢোকা হাওয়ায় গরুগুলি কোনওমতে শ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকে। গন্তব্যে পৌঁছনোর আগে দমবন্ধ হয়ে মারা পড়ে কোনও গরু। যেমন ওই আটটির মধ্যে একটি গরুকে মৃত অবস্থায় জওয়ানরা উদ্ধার করেছে।
বালুরঘাটের ঠাকুরপুরা এলাকার বাসিন্দা ওই ট্রাক্টরের চালক জয়ন্ত দাসকে বিএসএফ গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। আটক সাতটি ছোট গরু আপাতত হিলি থানার পুলিশের জিম্মায়।
এই ঘটনায় বিএসএফ এবং পুলিশ মহলে সাড়া পড়ে গিয়েছে। কয়েক বছর আগে সুমোর মতো ছোট যাত্রী গাড়ির সিট তুলে দিয়ে তার মধ্যে গরু ভর্তি করে কালো কাচের আড়ালে ওপারে পাচারের রমরমা কারবার ধরে ফেলেছিল পুলিশ ও বিএসএফ। সম্প্রতি বাংলাদেশে জঙ্গি হানার পর সীমান্তে নজরদারি কড়া হতেই পাচারকারীরা রাতারাতি ছক বদলে ট্রাক্টরের ওপরে ইট খড় কাঠ বোঝাই করে তার নীচে গরু পাচারের যে অভিনব কৌশল করেছে তাতে ফাঁপড়ে পড়েছে বিএসএফ। শুক্রবার রাতের নিস্তব্ধতায় ইট কাঠের নিচে বন্দি গরুগুলির শ্বাসের শব্দে তাদের অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়। কিন্তু দিনের বেলায় কোলাহলে চাপা পড়ে ট্রাক্টরের ভিতরে মালবন্দি হয়ে বেশ কিছু দিন থেকেই সীমান্তে গরু পাচার চলছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে তা উড়িয়ে দিতে পারছেন না বিএসএফ কর্মকর্তাদের একাংশ। -এবিপি
১০ জুলাই ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস