আন্তর্জাতিক ডেস্ক : শহরের নাম গ্রিন ব্যাংক। সেখানে প্রবেশের পর মুঠোফোন বা বেতারযন্ত্রের কোনো নেটওয়ার্ক মিলবে না। তারবিহীন ইন্টারনেট ব্যবহারের ওয়াই-ফাই প্রযুক্তিও নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়বে।খোদ মার্কিন মুলুকেরই শহর এটি, অবস্থান ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের অ্যালেগেনি পার্বত্য এলাকায়।
গ্রিন ব্যাংকের আরেক নাম ‘যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে নীরব শহর’। সারাক্ষণ মুঠোফোন আর ইন্টারনেট যোগাযোগে অভ্যস্ত শহরবাসী যে কেউ সেখানে গেলে নিজেকে বিচ্ছিন্ন ভেবে আতঙ্কিত হয়ে উঠতে পারেন। মুঠোফোন বা স্মার্টফোনসহ তারবিহীন যন্ত্রপাতি সেখানে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এই নিষেধাজ্ঞা কেউ অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ পর্যন্ত রয়েছে।
প্রযুক্তি বিশ্বজুড়েই জীবন ও যোগাযোগের ধরনে নিরন্তর পরিবর্তন ঘটালেও গ্রিন ব্যাংকে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো ইচ্ছে করেই বন্ধ রাখা হয়েছে। এমনকি মাইক্রোওয়েভ বা অতি ক্ষুদ্র তরঙ্গের ব্যবহারেও বিধিনিষেধ আছে।
তার মানে এই নয় যে গ্রিন ব্যাংকের বাসিন্দারা অনগ্রসর ও অতীতমুখী অথবা প্রযুক্তি নিয়ে ভীতসন্ত্রস্ত। বরং উল্টোটাই সত্যি।
অ্যালেগেনি পর্বতমালা এলাকায় একদল গবেষক মহাবিশ্বের সুদূর প্রান্তে সশব্দে ফেটে পড়া ছায়াপথের আওয়াজ শুনছেন। এই সংকেত বা শব্দ অত্যন্ত ক্ষীণ, যা মুঠোফোন থেকে নির্গত শক্তির মাধ্যমে ভেসে যেতে পারে। এতে ছায়াপথের উৎপত্তি রহস্য জানতে উদ্গ্রীব বিজ্ঞানীদের গবেষণায় বিঘ্ন ঘটবে।
তাই ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার পূর্বাঞ্চলের অর্ধেক, ভার্জিনিয়ার নির্দিষ্ট কিছু অংশ থেকে শুরু করে মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের সীমান্ত পর্যন্ত মুঠোফোন ও অন্যান্য তারবিহীন যন্ত্রের ব্যবহার সীমিত, আর গ্রিন ব্যাংকে পুরোপুরিই বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ।
কারণ, এ শহরের কাছাকাছি এলাকায় বিজ্ঞানীরা স্থাপন করেছেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় রেডিও টেলিস্কোপ (রবার্ট সি বার্ড গ্রিন ব্যাংক টেলিস্কোপ)।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল রেডিও অ্যাস্ট্রোনমি অবজারভেটরি এটি নিয়ন্ত্রণ করে। দুই একর এলাকাজুড়ে বসানো সুবিশাল যন্ত্রটির ওজন ৭৭ লাখ ১১ হাজার কেজির বেশি। এটি কোটি কোটি মাইল দূরের আওয়াজ শুনতে পায়।
গ্রিন ব্যাংক টেলিস্কোপ প্রকল্পের প্রধান বিজ্ঞানী জে লকম্যান বলেন, ‘ছোট্ট গ্রামীণ একটা পরিবেশে তাঁরা অত্যন্ত উচ্চ প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করার সমন্বিত পরিবেশ পেয়েছেন। অতি ধীর শব্দ শুনতে চাইলে আশপাশের সব কোলাহল বন্ধ রাখা চাই।’
১২ জুলাই, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএম