বুধবার, ১৩ জুলাই, ২০১৬, ০১:১৭:৩৮

কাশ্মীর নিয়ে লড়াই এবার জাতিসংঘে, কি করবে ভারত?

কাশ্মীর নিয়ে লড়াই এবার জাতিসংঘে, কি করবে ভারত?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কাশ্মীরে ভারতের দমন নীতির প্রতিবাদে এবার আন্তর্জাতিক মঞ্চে হাজির হয়েছে ইসলামাবাদ। অন্য দিকে দেশের সব দল ও মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতাদের পাশে পেতে আরো বেশি উদ্যোগী হয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার।

মঙ্গলবার আফ্রিকা সফর থেকে ফিরেই কার্যত যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাশ্মীর নিয়ে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাতে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল-সহ মোদী সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা।

বৈঠকে কাশ্মীরের পরিস্থিতি ও পাকিস্তানের মনোভাব নিয়ে আলোচনা হয়। মঙ্গলবার কাশ্মীর প্রসঙ্গে কূটনৈতিক সুর চরমে নিয়ে গিয়েছিল ইসলামাবাদ। নিহত জঙ্গি নেতা বুরহান ওয়ানিকে নিয়ে বিবৃতি দেয় পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দপ্তর। ভারতীয় হাইকমিশনারকে ডেকেও ‘উদ্বেগ’ জানিয়েছিলেন পাক পররাষ্ট্রসচিব।

ভারতের সরকারি সূত্র জানিয়েছে, পাকিস্তানকে কী ভাবে পাল্টা চাপ দেওয়া হবে তা নিয়ে কিছু সিদ্ধান্ত নেন মোদী, রাজনাথরা। বৈঠকের পরে প্রধানমন্ত্রী সচিবালয়ের প্রতিমন্ত্রী তথা জম্মু-কাশ্মীরের সংসদ সদস্য জিতেন্দ্র সিংহ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কাশ্মীরে শান্তি ফিরিয়ে আনতে সব পক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছেন।’

পাকিস্তানের অভিযোগের ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপে সব দলকে পাশে চাইছেন মোদী। তাই বাকি দলগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করার প্রক্রিয়ায় আরো জোর দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার বিজেপি সরকারের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছিল কংগ্রেস, ন্যাশনাল কনফারেন্স ও সিপিএম। এ দিন তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, কাশ্মীর নিয়ে সমর্থন চেয়ে তাকে ফোন করেছিলেন রাজনাথ।

তিনি জানিয়েছেন, জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে সরকারের পাশেই আছে তৃণমূল। তবে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতির ভিডিও কনফারেন্সিং ব্যবস্থার মাধ্যমে যোগ দেওয়া উচিত ছিল বলে মনে করেন ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লাহ।

তার কথায়, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য মেহবুবা রাজ্য ছেড়ে যেতে পারবেন না জানি। কিন্তু বৈঠকে তার যোগ দেওয়া উচিত ছিল।’

রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গেও মঙ্গলবার কাশ্মীর নিয়ে আলোচনা করেন রাজনাথ। মেহবুবার দপ্তরের দাবি, তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।

তবে দিল্লির অস্বস্তি বাড়িয়ে এ দিন জাতিসংঘে সক্রিয় হয়েছে ইসলামাবাদ। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি সদস্য দেশকে কাশ্মীরে ভারতের ‘দমনপীড়নে’র কথা জানিয়েছে তারা। ‘যতটা সম্ভব সংযত ভাবে’ কাশ্মীরের পরিস্থিতির মোকাবিলা করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন। কাশ্মীরকে ভারতের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বললেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানিয়েছে, কাশ্মীর নিয়ে সরব হওয়ার সময়েই ফের জাতিসংঘের প্রস্তাব মেনে গণভোটের কথা বলেছিল পাকিস্তান। তখনই বোঝা গিয়েছিল, এ নিয়ে তারা জাতিসংঘেও সরব হবে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার মন্তব্য করেন, ‘পাকিস্তান প্রতি বছরই রাষ্ট্রপুঞ্জে কাশ্মীর প্রসঙ্গ তোলে। কিন্তু উপত্যকাকে অশান্ত করার পিছনে ওদের ভূমিকা কারো অজানা নয়।’

কূটনৈতিক লড়াইয়ের ফল যা-ই হোক, কাশ্মীরে হিংসা অবশ্য থামার কোনো লক্ষণ নেই। মঙ্গলবারও ভূস্বর্গের নানা প্রান্তে বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে বিক্ষোভকারীরা।

বিজবেহরা এলাকায় পুলিশের গুলিতে আহত দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আমির নাজির লাট্টুর মৃত্যুতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩ জনে।

কাশ্মীরের নাগরিক সমাজ ও ব্যবসায়ীদের একাংশ দাবি করে আসছে, ভুয়া সংঘর্ষে বুরহান ওয়ানিকে মারা হয়েছে। তাদের মতে, পুরো পরিস্থিতির জন্য মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতিই দায়ী। তার এখনই পদত্যাগ করা উচিত। -আনন্দবাজার পত্রিকা
১৩ জুলািই, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে