শুক্রবার, ১৫ জুলাই, ২০১৬, ০৭:৩২:৩১

ফ্রান্সে লরি হামলাকারী কে এই যুবক?

ফ্রান্সে লরি হামলাকারী কে এই যুবক?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ফ্রান্সের নিস শহরের এক অনুষ্ঠানে লরি নিয়ে হামলার ঘটনায় দায়ী চালকের প্রাথমিক পরিচয় জানা গেছে।  হামলাকারী ওই চালক তিউনিসিয়ান বংশোদ্ভূত ফরাসি নাগরিক।
 
ওই লরিচালক স্থানীয়ভাবে মোহাম্মদ লাহৌজ বোহলেল নামে পরিচিত ছিল।  ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত ও ৩ ছেলেমেয়ের বাবা ছিলেন।
 
হামলাকারী সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কোনো তথ্য দেয়নি পুলিশ।  তবে লরিতে হামলাকারীর পরিচয়পত্র ও মোবাইলফোন পাওয়া গেছে বলে  জানিয়েছে পুলিশ।
 
এ ঘটনায় তথ্য সংগ্রহে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।  হামলাকারী চালকের বাড়িতেও তল্লাশি চালানো হয়েছে।

দেশটির পুলিশ বাহিনীর এক সূত্র জানিয়েছে, ৩১ বছর বয়সী লরিচালক আগে থেকে নজরদারির মধ্যে ছিল না।  কোনো জিহাদি গ্রুপের সঙ্গেও তার পূর্বাপর কোনো সংযোগ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
 
বৃহস্পতিবার রাতে স্থানীয় সময় রাত ১০টা ৩০ মিনিটে নিস শহরে বাস্তিল দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আতশবাজি প্রদর্শনী চলাকালে লরি দিয়ে হামলা চালানো হয়।  

হামলাকারী জনসমাগমপূর্ণ ওই স্থানটির দুই কিলোমিটার সড়ক পর্যন্ত লরিটি চালিয়ে যায়।  এ সময় লরির ভেতর থেকেই হামলাকারী পিস্তল দিয়ে গুলি ছুড়ে।

এতে নিহত হন ৮৪ জন এবং আহত হন শতাধিক। পুলিশ হামলাকারীকে হত্যা করতে সমর্থ হয়।  গাড়ির ভেতর থেকে গ্রেনেড ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

এ ঘটনায় এখনো কোনো গোষ্ঠী দায় স্বীকার করেনি। তবে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওঁলাদ এটাকে সন্ত্রাসী হামলা বলে দাবি করেছেন।

বৃহস্পতিবার রাতে ফ্রান্সের নিস শহরের এ ঘটনায় শিশুসহ অন্তত ৮৪ জন নিহত হয়েছে।  আহত হয়েছে কমপক্ষে অর্ধশতাধিক মানুষ।  এদের মধ্যে ১৮ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।  

পরে পুলিশ হামলাকারী চালককে গুলি করে হত্যা করে ট্রাক থামায়।  খবর : এএফপি, বিবিসি, রয়টার্সের

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, বাস্তিল দিবসের আতশবাজি উদযাপনে ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলের নিস শহরের বিখ্যাত প্রমেনেদ দে আঁগলাইসে বহু মানুষ জড়ো হয়েছিলেন।

সেই ভিড়ের মধ্যে চালক ২৫ টনি লরি ১শ' মিটারের বেশি রাস্তা চালিয়ে নিয়ে যান।  স্থানীয় সরকারের প্রধান ক্রিস্তিয়ান এস্তরোসি বলেছেন, লরি নিয়ে যাওয়ার সময় চালক জনতার ওপর গুলিও চালাচ্ছিল। ওই ট্রাকে অস্ত্র এবং গ্রেনেড পাওয়া গেছে।

টুইটারের কয়েকটি ছবিতে দেখা যায়, অনেক মানুষ রাস্তার ওপর পড়ে রয়েছে।  দিশেহারা হয়ে ছোটাছুটি করছে আতঙ্কিত মানুষ।

এ ঘটনাকে একটি সন্ত্রাসী হামলা বলে বর্ণনা করছে শহরটির কর্তৃপক্ষ।  তারা বাসিন্দাদের ঘরের ভেতর থাকার জন্য অনুরোধ করেছে।

নিস মাতাঁ নামের একটি স্থানীয় পত্রিকার এক সাংবাদিক গণমাধ্যমকে জানান, পুরো এলাকা রক্তে একাকার হয়ে গেছে।  নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্রের বরাত দিয়ে পত্রিকাটির খবরে বলা হয়, লরিচালকের বয়স ৩১ বছর।  তিনি তিউনিসীয় বংশোদ্ভূত ফরাসি নাগরিক।

একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, তিনি গুলির শব্দ শুনেছেন।  প্রথমে আতশবাজির শব্দ মনে করলেও পরে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।  এরপর অন্যদের মতো তিনিও নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে দৌড়াতে থাকেন।

সামাজিক মাধ্যমে এ ঘটনার বেশ কয়েকটি ছবি প্রকাশ হয়েছে।  তাতে দেখা যায়, অসংখ্য মানুষ আতঙ্কের মুখে শহরের রাস্তা ধরে ছুটে পালাচ্ছেন।

এ ঘটনার পর ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁন্দ জরুরি বৈঠক ডেকেছেন।

জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে তিনি এটিকে সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে বর্ণনা করেছেন।  ফ্রাঁসোয়া ওলাঁন্দ বলেন, এটা যে সন্ত্রাসী হামলা তা অস্বীকার করা যায় না।

এ ঘটনার পর তিনি জরুরি অবস্থার মেয়াদ আরো তিন মাস বৃদ্ধির কথা বলেছেন।  চলতি মাসের ২৬ তারিখে জরুরি অবস্থার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল।

একইসঙ্গে ইরাক ও সিরিয়ায় জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ফরাসি সরকারের পদক্ষেপ জোরদার করার কথা বলেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট।

তিনি বলেন, 'ইসলামিক সন্ত্রাসের হুমকিতে গোটা ফ্রান্স।  সন্ত্রাসীদের মোকাবেলায় যা করা প্রয়োজন, আমরা সবই করব।

গতবছরের নভেম্বরে প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলায় ১৩০ জন নিহত হয়।  এরপর থেকে দেশটিতে জরুরি অবস্থা রয়েছে।  তার মধ্যেই বৃহস্পতিবার এ ঘটনা ঘটল।
১৫ জুলাই ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে