আন্তর্জাতিক ডেস্ক : দীর্ঘ সতেরো বছর স্বেচ্ছা নির্বাসনে তিনি। দেশ ছেড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দিয়েছিলেন ১৯৯৯ সালে। তার পর আর দেশের মাটিতে পা রাখার সুযোগ পাননি। অথচ দেশে এত বড় একটা সামরিক অভ্যুত্থানের চেষ্টার পিছনে নাকি রয়েছে তারই ‘কলকাঠি’। তুরস্ক সরকারের একটা বড় অংশ অন্তত তেমনটাই মনে করছে।
ফেতুল্লাহ গুলেন। নির্বাসিত এই ধর্মগুরুকে অনেক দিন ধরেই যেকোন প্রকারে হাতে পেতে চাইছিল তুরস্কের সরকার। না হলে এমন কোনও অভ্যুত্থান হতে পারে বলে আশঙ্কা ছিল তাদের। সরকারি কর্মকর্তাদের বক্তব্য, সুদূর আমেরিকায় বসে নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তুরস্কের সরকারকে নাড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন গুলেন। তুরস্কের সেনার একটা বড় অংশ নাকি তার সমর্থকও।
তাই ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পরপরই দু’য়ে দু’য়ে চার করতে বেশি সময় নেননি আঙ্কারার পদস্থ কর্তারা। তুরস্কের আইনজীবী রবার্ট আমস্টেরডাম সরাসরিই আঙুল তুলেছেন গুলেনের বিরুদ্ধে। বলেছেন, ‘গোয়েন্দাদের কাছে নির্দিষ্ট খবর আছে। এসবের পিছনে গুলেনেরই হাত রয়েছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন সরকারকে সতর্ক করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ওরা তাতে আমল দেয়নি। অথচ আজ এটা স্পষ্ট যে, আমাদের ধারণাই ঠিক।’
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোগান যে গুলেনকে হাতে পাননি, তা মূলত মার্কিন সরকারের বিরোধিতার জন্যই। এই সতেরো বছরে মার্কিন আদালতে বেশ কয়েকটি মামলা উঠেছে পেনসিলভেনিয়ার বাসিন্দা ফেতুল্লাহের বিরুদ্ধে। কিন্তু বিচারক প্রতি বারই সে সব অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন। আমেরিকার বিরোধিতায় দেশে ফেরানোও যায়নি তাকে।
তবে যে এরদোগান গুলেনকে দেশে ফিরিয়ে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর এত চেষ্টা করছেন, এক সময় কিন্তু তার খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন এই ধর্মগুরু। গোলমালটা শুরু হয় এরডোগান ও তার ছেলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলার তদন্ত শুরুর পর থেকে। প্রেসিডেন্টের ধারণা ছিল, তদন্ত শুরুর পিছনে গুলেনেরই হাত ছিল। যদিও সেই অভিযোগ কখনও প্রমাণিত হয়নি। তার পর থেকেই দু’জনের দূরত্ব ক্রমে বাড়তে থাকে।
তবে তুরস্ক সরকার যতই তার বিরোধিতা করুক না কেন, বিশ্ব জুড়ে তার সমর্থকের সংখ্যা নেহাত কম নয়। ‘গুলেন মুভমেন্ট’ বলে একটা বড়সড় আন্দোলনের জন্মদাতা তিনি। গুলেন নিজেকে সুন্নি মৌলভী সাঈদ নুরসির শিষ্য বলে মানেন। তার ধর্মীয় শিক্ষাতেও গণতন্ত্র আর বিজ্ঞানের ছোঁয়া থাকে। তার সমর্থকরা বিশ্বের ১০০টি দেশে হাজার খানেক স্কুল খুলে ফেলেছেন।
তুরস্কেই গুলেন ভাবাদর্শের ছোঁয়ায় তৈরি হয়েছে হাসপাতাল, ব্যাঙ্ক, এমনকী, খবরের কাগজ, টিভি-রেডিও স্টেশনও। তবে নিজে খুব সচরাচর জনসমক্ষে আসেন না। আজ তুরস্ক সরকারের অভিযোগের জবাব দিয়েছেন তার সমর্থকেরা। জানিয়েছেন, গুলেনের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। তাদের বক্তব্য, এই সুযোগে গুলেনকে দেশে ফেরানোর চেষ্টা করছে আঙ্কারার সরকার।
বিতর্কিত এই ধর্মগুরুর বাড়িতে এক বার গিয়েছিলেন এক বিদেশি সাংবাদিক। ইচ্ছা ছিল গুলেনের সাক্ষাৎকার নেওয়ার। পারেননি। কিন্তু পেনসিলভেনিয়ার পোকোনো পর্বতের গা ঘেঁষা সেই ২৬ একরের বাড়িটি ঘুরে দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। ওই সাংবাদিকই পরে বলেছিলেন, ‘বাড়িতে নানা ধরনের বই রাখার শেল্ফ যেমন ছিল। তেমনই রাখা ছিল বড় বড় কাচের বয়াম। যেগুলির মধ্যে তুরস্কের নানা জায়গার মাটি ভরে রাখেন এই ধর্মগুরু।’
নিজের দেশকে হয়তো এ ভাবেই স্পর্শ করতে চান প্রবাসে নির্বাসিত তুরস্কের ধর্মগুরু।
১৭ জুলাই ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস